রবিবার, ২২শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

লেপ-তোষকে খরচ বেশি তাই কাঁথা সেলাইয়ের ধুম


পার্বতীপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
উত্তরের জেলা দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার প্রকৃতিতে এখন মৃদু শীতের আমেজ। ভোর হতে না হতে চারিদিকে কুয়াশার চাদর। যেন শীতের আগমনী বার্তা। আর সেটা টের পেয়েই ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন এখানকার লেপ-তোষকের কারিগররা। চাহিদা বাড়তে থাকায় তা লেপ-তোষকের বিক্রিও শুরু হয়ে গেছে। এবার বাজারগুলোতে কার্পাস তুলা প্রতি কেজি ৮০ টাকা, কালো সুতির তুলা ২০ থেকে ৪০ টাকা, কালো রাবিশ তুলা ২০ থেকে ৪০ টাকা, সাদা তুলা ৮০ টাকা থেকে ১০০ টাকা করে দরে বিক্রি হচ্ছে। পিছিয়ে নেই গ্রামগঞ্জের নিম্নবিত্ত পরিবারের নারীরা শীতের আভাস পেয়ে তৎপর হয়ে উঠেছেন পুরাতন কাঁথা মেরামত কিংবা নতুন কাঁথা সেলাইয়ে। অনেক নারী শীত মৌসুমে কাঁথা সেলাই করে বাড়তি আয় করেন। পার্বতীপুর উপজেলায় প্রায় অর্ধশতাধিক লেপ-তোষেকের দোকান রয়েছে। বিভিন্ন লেপ-তোষেকের দোকান ঘুরে দেখা গেছে, কাপড় ও তুলার মান বিবেচনায় ৪/৫ হাত মাপের একেকটি লেপ-তোষক ২ হাজার ৩০০ টাকা থেকে ২৫শ’ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতিটি লেপ তৈরীতে কারিগররা মজুরি পাচ্ছেন ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। তবে কাপড় ও তুলার দাম বেশি হওয়ায় এ বছর লেপ-তোষকের দাম একটু বেশি বলে গ্রাহকদের অভিযোগ। দোকানদারা জানান, তারপরও দিন দিন চাহিদা বাড়ছে বলে লেপ-তোষকের।
উপজেলার মন্মথপুর ইউনিয়নের তাজনগর গ্রামের কাঁথা সেলাইয়ের কারিগর ফজিলা বেগম (৬০) জানান, অবস্থাপন্ন পরিবারের লোকজন শীত আসলে তাদের কাছে কাঁথা সেলাই করে দিতে আগাম বায়না করেন। তার গ্রামের দরিদ্র পরিবারের গৃহিনীরা প্রতি বছর ৪০ থেকে ৫০টি কাঁথা সেলাই করে থাকেন। গ্রাহকেরা নতুন-পুরাতন মিলে কাঁথা তৈরীর প্রয়োজনীয় কাপড় ও সুতা সরবরাহ করেন। আমরা একেকটি কাঁথার সেলাই করে দেয়ার বিনিময়ে ৪০০-৫০০ টাকা মজুরি পাই। এবছর কার্তিক শেষের দিকে থেকেই শীতের আমেজ আবহ বিরাজ করছে। মধ্য রাতের পর শীত শীত ভাব অনুভূত হচ্ছে। বিত্তবানরা নতুন লেপ বানালেও নিম্ন আয়ের পরিবারের মহিলারা পুরনো শাড়ি-কাপড় ও লুঙ্গি দিয়ে কাঁথা তৈরি করছেন। লেপ-তোষক ব্যবসায়ীরা মাঠে নেমেছেন। গ্রামে পথে পথে প্রায়ই চোখে পড়ে রিকসা-ভ্যান ও সাইকেল যোগে লেপ-তোষক ফেরি করে বিক্রি করতে।
উপজেলার বেলাইচন্ডি জাকেরগঞ্জ গ্রামের মো: ওহেদুল ইসলাম দুলাল বলেন, বাজারে প্রতিটি জিনিসের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এবার লেপ-তোশক তৈরির খরচও বেড়েছে। আমি পুরনো লেপ খুলে নতুন করে তৈরি করার জন্য দোকানে নিয়ে এসেছি। তুলার খরচ বাদ দিয়ে কাপড় ও মজুরি বাবদ ৭০০ টাকায় বানাতে দিয়েছি।
গ্রামে বিক্রি করতে আসা লেপ-তোষকের ফেরিওয়ালা আফজাল হোসেন জানান, শীতের সময় লেপের চাহিদা থাকায় তারা প্রতি বছর গ্রামে গ্রামে ফেরি করে বিক্রি করেন। একটি লেপ বিক্রি করে তাদের ২০০ থেকে ৩০০ টাকা লাভ হয় বলে তিনি জানান।
পার্বতীপুর শহরের হলদীবাড়ী রেলগেট সৌদি তুলা ঘরের স্বত্বাধিকারী শাহ আলম বলেন, গতবারের তুলনায় এবার জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। লেপের তুলা প্রতি কেজিতে ৮-১০ টাকা বেড়েছে। কাপড়ের দাম বেড়েছে প্রায় ১০-১৫ টাকা। প্রতিটা লেপ- তোশকে লাভ হয় ৩০০-৪০০ টাকা। ঢাকা, বগুড়া এবং নওগাঁ থেকে মাল আনতে হয়। গত কয়েক বছরের তুলনায় সব কিছুর দাম অনেক বেড়েছে। সময়মত লেপ-তোষক ডেলিভারি দিতে তারা অতিরিক্ত কারিগর নিয়োগ করেছেন। অন্য সময়ের চেয়ে শীত মৌসুমে বেশি অর্ডার পাওয়া যায়।

Share This