শনিবার, ৪ঠা জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

আক্কেলপুর চিকিৎসক সংকটে কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছেন না রোগীরা

আক্কেলপুর (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি
জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলায় প্রায় দেড় লাখ জনসংখ্যা রয়েছে। এই মোট জনসংখ্যার একমাত্র ভরসা ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিন গড়ে ৪’শতাধিক রোগীর চিকিৎসা দিচ্ছেন ৩ জন চিকিৎসক। এতে রোগীদের ভোগান্তি পাশাপাশি চরমভাবে ব্যহত হচ্ছে চিকিৎসকদের চিকিৎসা সেবা। এই মাসেই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে চিকিৎসক চেয়ে দুই বার চাহিদা দেওয়া হয়েছে। চাহিদা দেওয়ার পরেও পদায়ন হয়নি নতুন কোন চিকিৎসকের।
আক্কেলপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আজ সোমবার বহিঃবিভাগে ৩৬০ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন এবং সকাল আট’টা থেকে দুপুর দেড়’টা পর্যন্ত জরুরী বিভাগে চিকিৎসা নিয়ে ভর্তি হয়েছেন ২০ জন রোগী ও প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন ১০ জন। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ভর্তি অবস্থায় চিকিৎসা নিচ্ছেন ৭২ জন রোগী।


উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসক পদে ২৬ টি অনুমোদিত পদ রয়েছে। এই পদের বিপরীতে ৫ জন চিকিৎসক কর্মরত রয়েছেন, ফাঁকা রয়েছে ২১ টি পদ। এই পাঁচ জন চিকিৎসকের মধ্যে ১ জন বুনিয়াদী প্রশিক্ষণে রয়েছে এবং ১ জন সহকারী ডেন্টাল সার্জন। জুনিয়র কনসালটেন্ট পদে ১১ জন থাকার কথা থাকলেও সেই পদে একজনও চিকিৎসক নেই।
সরেজমিনে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, সেবা নিতে আসা রোগীদের দীর্ঘ লাইন। চিকিৎসক সংকট থাকায় সহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসাররাও রোগীদের চাপে রয়েছেন। দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করে রোগীদের নিতে হচ্ছে সেবা। আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ভর্তি রোগীদের পাশাপাশি জরুরী বিভাগেও রোগী দেখছেন।
কয়েকজন রোগীর সাথে কথা বলে জানা যায়, সকাল থেকে প্রচন্ড ভিরের মধ্যে লাইনে দাঁড়িয়ে ডাক্তার দেখাতে হচ্ছে। এতে রোগীরা আরও অসুস্থ্য বোধ করছেন। কোন পরীক্ষা করতে দিলে রিপোর্ট নিয়ে আসতে দেরি হওয়ায় সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়। এতে কিছুটা বাধ্য হয়েই বাইরের ক্লিনিক গুলোতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। পর্যাপ্ত চিকিৎসক থাকলে রোগীদের কষ্ট কমে যেত।
শিশুর চিকিৎসা নিতে আসা মঞ্জিলা নামের একজন মা বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে বাচ্চা কোলে নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। সকাল থেকে একজন ডাক্তার রোগী দেখছেন। ডাক্তার কম থাকায় আমাদের অনেক ভোগান্তি হচ্ছে।
হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. আসিফ আদনান বলেন, চিকিৎসক সংকট থাকায় ভর্তি রোগীদের পাশাপাশি জরুরী বিভাগ ও বহির্বিভাগে আমাদের রোগী দেখতে হচ্ছে। বর্তমানে আমরা দুই জন চিকিৎসক দিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের বাইরেও পর্যাপ্ত ডিউটির মাধ্যমে রোগীদের সেবা দিচ্ছি। শীত বাড়ার সাথে সাথে শীত জনিত রোগীও বাড়ছে। বিশেষ করে বৃদ্ধ ও শিশুরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। আমাদের তীব্র চিকিৎসক সংকট দেখা দিয়েছে। সেবা দিতে আমরা ব্যপকভাবে হিমশিম পোহাতে হচ্ছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শফি মাহমুদ বলেন, বর্তমানে আমাদের হাসপাতালে তীব্র চিকিৎসক সংকট দেখা দিয়েছে। স্বল্প সংখ্যক চিকিৎসক দিয়ে এই উপজেলাসহ পার্শ্ববর্তী উপজেলার রোগীদেরও সেবা দিতে হচ্ছে। এতে আমাদের রোগীদেরও ভোগান্তি হচ্ছে। সংকট নিরসনে আমরা গত দুই মাসে তিনবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চাহিদা প্রেরণ করলেও এখনো কোন চিকিৎসক পদায়ন হয়নি।
সিভিল সার্জন ডা. মুহা. রুহুল আমিন বলেন, চিকিৎসক সংকট নিরসনে আমরা প্রতিনিয়ত উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করছি। নতুন চিকিৎসক নিয়োগ না হওয়া এবং তাদের উন্নত প্রশিক্ষণ কোর্সে যোগদানের কারণে এই সমস্যা তৈরী হয়েছে। আশা করছি দ্রুত এই চিকিৎসক সংকট নিরসন হবে

Share This