আক্কেলপুর ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণার একযুগ পরও চলছে পাঠদান কার্যক্রম

আক্কেলপুর (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি
জয়পুরহাটের আক্কেলপুরের তিলকপুর ইউনিয়নের মোহনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবন প্রায় এক যুগ আগে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়। এই দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার পরেও নতুন ভবন না হওয়ায় ঝুঁকি নিয়েই ফাটলযুক্ত ভবনের ৫টি কক্ষে প্রায় ২ শ শিশু শিক্ষার্থীর পাঠদান চলছে। যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটার শঙ্কায় রয়েছেন শিক্ষক ও অভিভাবকরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মোহনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫টি কক্ষে চলছে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিশু শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম চলছে। প্রতিটি কক্ষের দেওয়ালেই দৃশ্যমান রয়েছে বৃহৎ অংশজুড়ে ফাটল। ছাদের অনেক অংশ থেকে সিমেন্টের প্লাস্টার খুলে পড়ার উপক্রম। বেঁকে গেছে ভবনের কয়েকটি পিলার। ফাটলযুক্ত কয়েক স্থানে করা হয়েছে সংস্কার চেষ্টা।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিদ্যালয়টি ১৯২৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর পরে ১৯৯৩ সালে ৫টি পাকা শ্রেণিকক্ষ নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীতে ২০০৫ সালে আবারো দুটি নতুন পাকা কক্ষ নির্মাণ করা হয়। এই মোট সাতটি কক্ষের মধ্যে পুরাতন ৫টি কক্ষে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির পাঠদান এবং নতুন দুটি কক্ষের একটিতে অফিস, অন্যটিতে প্রাক প্রাথমিকের পাঠদান কার্যক্রম চলে। সব শ্রেণি মিলিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী ও দশজন শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন।
বিগত ২০১১ সালের পর থেকে পুরাতন ভবনে নানা সমস্যা দেখা দিতে থাকে। পরবর্তীতে ২০১৩ সালের ১৮ জুন পুরাতন ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা দেয় প্রাথমিক শিক্ষা দপ্তর। ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণার পরেও নতুন ভবন না হওয়ায় একযুগ পার হলেও ওই পুরাতন ভবনেই চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান।
চতুর্থ শ্রেণির আয়েশা সিদ্দীকা রাফা নামের এক শিক্ষার্থী জানায়, কয়েক মাস আগে ক্লাস করার সময় ছাদ থেকে সিমেন্ট খুলে তার মাথায় পড়েছিল।
পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া সুরাইয়া আক্তার বৃষ্টি নামের আরেক শিক্ষার্থী বলে, আমাদের স্কুলের দেওয়ালগুলো ফাটা। ছাদ থেকে সিমেন্ট খুলে পড়ে। বৃষ্টি হলে ছাদ দিয়ে পানি পড়ে, আমরা ভিজে যাই। আমরা অনেক কষ্টে পড়াশোনা করি।
কল্পনা নামের এক অভিভাবক বলেন, আমার ছেলে প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। ছেলেকে স্কুলে পাঠাতে ভয় লাগে। স্কুলের ভবন ভাঙা, নানা সমস্যা রয়েছে। আমরা ভালো একটি ভবন চাই।
সহকারী শিক্ষক রাইনুজ্জামান বলেন, ভবনটি অনেক পুরাতন। এছাড়া নানা সমস্যা রয়েছে। অনেক ভয়ভীতির মধ্যেই বাধ্য হয়ে পাঠদান পরিচালনা করতে হয়।
প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ে দুটি ভবন রয়েছে। পুরাতন ভবনের অবস্থা খুবই খারাপ। ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণার পরেও নতুন ভবন না হওয়ায় বাধ্য হয়েই ওই ভবনে ক্লাস পরিচালনা করতে হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের নিকট দৃষ্টি আকর্ষণ করছি যাতে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে দ্রুত একটি নতুন ভবনের ব্যবস্থা করা হয়।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সিদ্দীকুর রহমান জানান, ভিজিটে গিয়ে দেখেছি প্রতিষ্ঠানটির ভবন পাঠদানের অনুপযোগী। যতদূর জেনেছি ইঞ্জিনিয়ার সেটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছিলেন, পরে সেটা কেন বাস্তবায়ন হয়নি জানা নেই। তবে ইতোমধ্যেই আমরা বিভিন্ন স্কুলের জন্য নতুন ভবনের তালিকা পাঠিয়েছি, সেখানে ওই প্রতিষ্ঠানকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনজুরুর আলম বলেন, প্রতিষ্ঠানটির জন্য ২০১৭-১৮ সালে একটি বরাদ্দ এসেছিল। সীমানা জটিলতার কারণে সেই বরাদ্দটি ফেরত চলে যায়। প্রতিষ্ঠানটির বিষয়ে আবারো বিভিন্ন দপ্তরে এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে। দ্রুত বরাদ্দ নিয়ে নতুন ভবন তৈরির জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।