আক্কেলপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজের এডহক কমিটি গঠন নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষ
আক্কেলপুর (জয়পুরহাট) সংবাদদাতা
জয়পুরহাটের আক্কেলপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজের এডহক কমিটির সভাপতি পদে কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-দপ্তর সম্পাদক এ্যাড. মো. মাহমুদুর মোস্তাকিন নিশাতকে দুই বার এবং উপজেলা বিএনপির আহব্বায়ক কমিটির সদস্য রিয়াদ মো. জিয়াউদ্দিন চৌধুরীকে একবার সভাপতি পদে মনোনয়ন প্রদান করে চিঠি দেয় জাতীয় বিশ্ব বিদ্যালয়। সর্বশেষ মোস্তাকিন নিশাতকে সভাপতি মনোনয়ন করায় সাবেক সভাপতির সমর্থকদের মধ্যে ওই প্রতিষ্ঠানের অফিস কক্ষে বৃহস্পতিবার দুপুরে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সেনাবাহিনী, পুলিশ ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ঘটনাস্থলে মোতায়েন হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।
এর আগেও ওই প্রতিষ্ঠানের এডহক কমিটি গঠন নিয়ে গণ স্বাক্ষর, অবস্থান কর্মসূচী ও মানব বন্ধন করেছিলেন আক্কেলপুর উপজেলা ও পৌর বিএনপির নেতাকর্মীরা।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় বিশ্ব বিদ্যালয়ের সর্বশেষ মনোনীত সভাপতি কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-দপ্তর সম্পাদক এ্যাড. মো. মাহমুদুর মোস্তকিন নিশাত তার সমর্থকদের নিয়ে কলেজে আসেন। এই খবর পেয়ে সদ্য সাবেক সভাপতি উপজেলা বিএনপির আহব্বায়ক কমিটির সদস্য রিয়াদ মো. জিয়াউদ্দিন চৌধুরীসহ ও তার সমর্থকরা তাদের বাধা দিতে কলেজে আসেন। এসময় অধ্যক্ষের কক্ষে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সময় সেনাবাহিনী, পুলিশ ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ঘটনাস্থলে মোতায়েন হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
কলেজ সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠান থেকে গত ২৯ সেপ্টেম্বর রিয়াদ মো. জিয়াউদ্দিন চৌধুরীসহ সভাপতি পদে ৩ জন এবং বিদ্যোৎসাহী সদস্য পদে ৩ জনের নাম জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠায় কলেজ কর্তৃপক্ষ। পরে কলেজের পাঠানো নামগুলো বাদ দিয়ে গত ৩ অক্টোবর ক্ষেতলাল উপজেলার বাসিন্দা এ্যাড. মো. মাহমুদুর মোস্তকিন নিশাতকে সভাপতি হিসেবে মনোয়ন প্রদান করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। ওই কমিটির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে তাদের বহিরাগত অ্যাখ্যা দিয়ে অবস্থান কর্মসূচী ও মানব বন্ধন করেছিলেন রিয়াদ মো. জিয়াউদ্দিন চৌধুরীর সমর্থকরা। পরে আবারও ২০ নভেম্বর দ্বিতীয় দফায় আগের কমিটি বাদ দিয়ে রিয়াদ মো. জিয়াউদ্দিন চৌধুরীকে সভাপতি হিসেবে মনোনয়ন দেয় জাতীয় বিশ্ব বিদ্যালয়। সেই মোতাবেক তারা কলেজ পরিচালনা করছিলেন। সর্বশেষ ০৮ ডিসেম্বর পুনরায় তৃতীয় দফায় ক্ষেতলাল উপজেলার বাসিন্দা এ্যাড. মো. মাহমুদুর মোস্তকিন নিশাতকে সভাপতি হিসেবে মনোয়ন প্রদান করেন জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়। সেই সুবাদে বৃহস্পতিবার প্রতিষ্ঠানে এসেছিলেন তিনি।
কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছেন, নব গঠিত এডহক কমিটির নাম তারা পাঠাননি। তবে কিভাবে বারংবার সভাপতি ও বিদ্যোৎসাহী সদস্য পরিবর্তন করে জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় এডহক কমিটি অনুমোদন করছেন তাও তারা জানেন না।
সাবেক সভাপতি রিয়াদ মো. জিয়াউদ্দিন চৌধুরী বলেন, জাতীয় বিশ্ব বিদ্যালয় কর্তৃক মনোনীত বর্তমান এডহক কমিটির সভাপতি হিসেবে আমি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছি। সভাপতি পরিবর্তনের কোন চিঠিও আমি পাইনি। হঠাৎ করে আগের সভাপতি নিশাত তার দলবল ও বহিরাগতদের নিয়ে কলেজে এসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছেন এমন সংবাদে আমরা কলেজে গেলে উভয়ের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
বর্তমান সভাপতি এ্যাড. মো. মাহমুদুর মোস্তকিন নিশাত বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সর্বশেষ আমাকে এডহক কমিটির সভাপতি মনোনয়ন করেন। সেই মোতাবেক আমি এবং আমার বিদ্যোৎসাহী সদস্য কলেজে আসি। এখানের বিএনপি নেতা আলমগীর চৌধুরী বাদশা ও তার ভাই জিয়াউদ্দিন চৌধুরী এসে আমাদের উপর অতর্কিত হামলা করে। এতে আমার পক্ষের অনেকেই আহত হয়েছেন।
আক্কেলপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবিদা সুলতানা কুইন বলেন, জাতীয় বিশ্ব বিদ্যালয় মনোনীত বর্তমান সভাপতি কলেজে আসলে আগের সভাপতির সাথে সংঘর্ষ হয়। কমিটি গঠন নিয়ে আমরা বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছি। একটি কমিটি জাতীয় বিশ্ব বিদ্যালয় তিন বার পরিবর্তন করায় এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এইভাবে চলতে থাকলে শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট হবে।
এ বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক মো. আব্দুল হাই সিদ্দিক সরকারের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তার কোন সারা পাওয়া যায়নি।
আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) মাসুদ রানা বলেন, এ ঘটনায় এখনো থানায় কোন অভিযোগ বা মামলা হয়নি।
নির্বাহী ম্যাজিট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুনিরা সুলতানা বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে থানা পুলিশ এবং সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।