নবাবগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ জাতীয় উদ্যান এখন দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত। জাতীয় উদ্যানের বিশাল বনভূমির মধ্যে ৫৮৮ একর জুড়ে আশুরার বিলে এখন লাল সাদা শাপলার সমাহার। বনের উঁচু উঁচু বৃক্ষে পাখিদের কিচিরমিচির কলরব আর সূর্যের ঝলমলে কিরণে ফুটন্ত লাল সাদা শাপলা নজর কাড়ছে দর্শনার্থীদের। বন ও বিলের সৌন্দর্য মুগ্ধতা ছড়িয়ে আকৃষ্ট করছে বিভিন্ন বয়সী প্রকৃতি প্রেমীদের।
বিলের পানিতে প্রকৃতির এই অপরুপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিনিয়ত দূর দূরান্ত থেকে ভীড় করেছেন প্রকৃতি প্রেমিকরা। ফুল হচ্ছে পবিত্র ও সৌন্দর্যের প্রতীক। ফুলকে ভাল বাসে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দায়। বেশির ভাগ ফুল গাছে শোভা পেলেও পানিতে শোভা পায় শাপলা। দিন দিন খাল বিল ভরাট হওয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামবাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।
লাল সাদা শাপলা ফুলের এই বিলটি নবাবগঞ্জ জাতীয় উদ্যানের শালবন সংলগ্ন গোলাপগঞ্জ ইউনিয়নের ৫৮৮.২২ একর এলাকা জুড়ে অবস্থিত। উপজেলা শহর থেকে কিছুটা দূর হলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় প্রতিদিন হাজারো দর্শনার্থী ভীড় করছেন আশুরা বিলে।
শাপলার মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসা দর্শনার্থী রাব্বি আহমেদ বলেন, প্রতিদিন কাজের ব্যস্ততায় তেমন সময় হয় না। ফেসবুকে দেখলাম এই বিলের শাপলা ফুলের ছবি, তাই আজকে ছুটির দিনে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসছি শাপলা বিলে। সত্যি বলতে, চোখ জুড়িয়ে গেলো বিলে এসে। না আসলে এই প্রকৃতিক সৌন্দর্য অনেক মিস করতাম, অনেক ভালো লাগছে।
দর্শনার্থী জাফর ইকবাল বলেন, আশুরার বিলের সৌন্দর্য সত্যিই ভাষায় প্রকাশ করা মত নয়। আগে শুধু ছবিতে ও গল্পে শাপলার সমাহারের কথা শুনেছি। কিন্তু এখানে এসে মনে হলো স্বপ্নের মাঝে কোনো ফুলের দেশে এসেছি। চারপাশে যতদূর চোখ যায় শুধু লাল-সাদা শাপলা ফুল। নৌকায় ঘুরলাম ,ছবি তুললাম, মনে হচ্ছে ফুলের বাগানে থেকে যাই।
বন ও বিলের এই সৌন্দর্য দেখে আমি মুগ্ধ।
শাপলা বিলের নৌকার মাঝিরা বলেন, বিলের পাশেই আমাদের বাড়ি। আমরা বিলে নৌকা চালাই। আগে তেমন মানুষ আসতো না। সারাদিনে কোন ভাড়া হত না। কিন্তু এখন শাপলা দেখতে প্রতিদিন রংপুর, দিনাজপুর, চিরিরবন্দর, মিঠাপুকুর, পীরগঞ্জ, পাঁচবিবি সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন আসে। এখন নৌকা ভাড়া দিয়ে আমরা সংসার চলছে। দিনে চার থেকে পাঁচশত টাকা হয়, কখনো বেশিও হয় ।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হানিফ উদ্দিন বলেন, আশুরার বিল শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে নয়, এটি জীববৈচিত্র্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি জলাশয়। এখানে শাপলার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছ বেঁচে থাকার পরিবেশ পাচ্ছে। বিলকে কেন্দ্র করে স্থানীয়দের জীবিকা যেমন গড়ে উঠছে, তেমনি পর্যটনের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি বিলের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ঠিক রাখার ।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব) মুনতাসির মাহফুজ বলেন, নবাবগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত আশুরার বিল ও বিলের পানিতে জন্মানো শাপলা ফুলের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য দর্শনার্থীদের হৃদয়ে প্রশান্তি এনে দেয়। এছাড়া পার্শ্ববর্তী শালবাগানও ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য এক আকর্ষণীয় জায়গা। শুধু উত্তরবঙ্গই নয়, সারাদেশের পর্যটকদের জন্য এটি হতে পারে একটি প্রাকৃতিক বিনোদন কেন্দ্র।