কয়লার দাম কমানোর প্রতিবাদে বড়পুকুরিয়ায় মানববন্ধন

নিজস্ব প্রতিবেদক
দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে উত্তোলনকৃত কয়লার দাম স্থানীয় বাজার মূল্যের চেয়ে অস্বাভাবিক হারে কমানোর প্রতিবাদে সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছেন খনির শ্রমিক ও কর্মচারীরা। দাম কমানোর মধ্য দিয়ে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিকে লোকসানী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করে শ্রমিক ছাঁটাইায়ের পাঁয়তারা করার অভিযোগ করেন তারা।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় সর্বস্তরের খনি শ্রমিকের ব্যানারে কয়লা খনির প্রধান গেটে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে কয়লার দাম বাজার মূল্যের সাথে সমন্বয়সহ নানা স্বার্থ সংশ্লিষ্ট নানা দাবি সংবলিত প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।
এতে বক্তব্য রাখেন, খনির সিবিএ সভাপতি আবুল কাশেম শিকদার, সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, বড়পুকুরিয়া আউটসোর্সিং কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের সভাপতি আশরাফুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম, চাইনিজ এক্সএমসি এর সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান, স্থানীয় ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি রবিউল ইসলাম, লোড-আনলোড শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মেহেরুল ইসলাম প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, অযৌক্তিকভাবে কয়লার মূল্য কমিয়ে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনিকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্র চলছে। পিডিবির কাছে প্রতি টন কয়লা ১৭৬ ডলারের পরিবর্তে বর্তমানে ১০৪ ডলারে বিক্রি করা বন্ধ করতে হবে । বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি বোর্ড, বিদ্যুতের লোক দিয়ে চালানো যাবে না।
সরকারি সিদ্ধান্তে উৎপাদনের শুরুতে তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাছে ৬০ মার্কিন ডলার প্রতি টন কয়লার বিক্রয় মূল্য নির্ধারণ করা হলেও পরবর্তীতে বাজার মূল্যের সাথে সমন্বয় করে পর্যায়ক্রমে ৭০, ৮৪, ১০৫, ১৩০ ও সর্বশেষ ২০২২ সালের জানুয়ারী থেকে ১৭৬ মার্কিন ডলার দরে পরিশোধ করে আসছিল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র। কিন্তু ২০২৪ সালের ৪ নভেম্বর থেকে খনির একমাত্র ক্রেতা বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের সচিব ফারজানা মমতাজ কয়লা খনি পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান এবং বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সদস্য (অর্থ) অঞ্জনা খান মজলিস পর্ষদ পরিচালক হিসাবে দায়িত্ব পাওয়ার পর ক্রেতাই হয়ে যায় বিক্রেতা। তারপর থেকেই কয়লার মূল্য নির্ধারণ ও পরিশোধে দেখা দেয় জটিলতা।
তারা আরও বলেন, তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র ইন্দোনেশিয়া কোল ইন্ডেক্স (আইসিআই) রেটে ১০৪ ডলারে বিদেশী কয়লা এনে বিদ্যুৎকেন্দ্র চালাতে পারলে ভালো। এতে তারা লাভবান হবে। খনি কর্তৃপক্ষও যদি স্থানীয় বাজারে ২০০-২৫০ মার্কিন ডলার রেটে কয়লা বিক্রয় করে তাতে তারাও লাভবান হবে।
বক্তারা আরও বলেন, যিনি কয়লার ক্রেতা তিনিই আজ বিক্রেতার দায়িত্বে রয়েছেন, যা অতীতে কখনোই হয়নি। তাছাড়া মাননীয় উপদেষ্টাও একজন সাবেক বিদ্যুৎ সচিব। তাই এটা আমাদের জন্য অনেক বড় হতাশার বিষয়।
চলতি বছর ১৯ জানুয়ারী কয়লার বকেয়া বিলে আরোপিত বিলম্ব মাশুল মওকুফ বিষয়ে বিদ্যুৎ সচিবের সভাপতিত্বে বিদ্যুৎ বিভাগে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হলেও সে সভায় কয়লার মূল্য আইসিআই (ইন্দোনেশিয়া কোল ইনডেক্স) রেটে ১০৪ ডলার নির্ধারণ, বিলম্ব মাশুল মওকুফ ও ১২২ কোটি ৮৩ লাখ ৩৬ হাজার টাকা অবলোকন করে এবং ৩০০ কোটি টাকা ২৪ কিস্তিতে পরিশোধের সিদ্ধান্ত নেয়। আর তখন থেকেই ১০৪ ডলার হিসাবে পরিশোধ করে আসছে পিডিবি। এভাবে চললে অচিরেই উত্তরাঞ্চলের একমাত্র লাভজনক শিল্প প্রতিষ্ঠানটি লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে বলে ধারনা তাদের। আন্দোলনকারীদের দাবি কয়লা খনি বন্ধ হয়ে গেলে আড়াইহাজার শ্রমিক কর্মচারী চাকুরী হারাবে । হুমকির মুখে পড়বে এই এলাকার লক্ষাধিক মানুষ। দাবি না মানলে আগামীতে কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা করা হবে বলে হুশিয়ারী দেন আন্দোলনকারীরা ।
এ বিষয়ে কথা বললে বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য আপদকালীন যতটুকু মজুদ (অন্তত তিন মাসের) কয়লা রাখা প্রয়োজন, তা রেখে বাকিটা তারা বিক্রি করতে পারে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে। তাছাড়া এসব বিষয় মন্ত্রণালয় দেখেন, তারা যা ভালো মনে করবেন তাই করবেন।
বিষয়টি নিয়ে বড়পুকুরিয়া খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল ইসলাম সরকারের এর সাথে মুঠো ফোনে কথা বলার চেষ্টা করলে তিনি ফোন গ্রহণ করেননি।