কুরবানির ঈদ ঘিরে ব্যস্ত কামারশালা

খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
আগামী ৭ জুন পালিত হবে মুসলমানদের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ঈদ-উল-আযহা। এই ঈদে কোরবানিকে কেন্দ্র করে দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার কামারপাড়াগুলোতে জমে উঠেছে কর্মব্যস্ততা। কোরবানির পশু জবাই ও মাংস কাটার কাজে ব্যবহৃত হয় দা, বঁটি, ছুরি ও চাপাতির মতো যন্ত্রপাতি। এসব সরঞ্জাম তৈরিতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন কামারশিল্পীরা।
সরেজমিনে আজ সোমবার দুপুরে পাকেরহাট ও কাচিনীয়া বাজার ঘুরে দেখা যায়, কামারপাড়াগুলো টুংটাং শব্দে মুখর। কয়লার আগুনে লোহা পেটাতে পেটাতে ঘাম ঝরছে শ্রমিকদের। চোখেমুখে ক্লান্তির ছাপ থাকলেও বিরাম নেই তাদের হাতে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে দা, ছুরি, চাপাতি ও বঁটি তৈরির কাজ। একইসঙ্গে পুরোনো যন্ত্রপাতি শান দিতেও আসছেন অনেকেই।
স্থানীয় কামাররা জানান, সারা বছর তেমন কাজ না থাকলেও কোরবানির ঈদ সামনে রেখে ব্যস্ততা বেড়ে যায়। উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক স্থানে বিক্রি হচ্ছে এসব যন্ত্রপাতি। চাহিদা মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে দোকানিদের।
তাঁরা আরও জানান, স্প্রিং (পাকা) লোহা ও কাঁচা লোহা দিয়ে তৈরি হচ্ছে এসব যন্ত্রপাতি। স্প্রিং লোহা দিয়ে তৈরি সরঞ্জাম বেশি টেকসই হলেও দামও বেশি। অন্যদিকে কাঁচা লোহা অপেক্ষাকৃত সস্তা হলেও মানে কিছুটা কম। এছাড়াও এঙ্গেল, রড, ব্লক বার ও গাড়ির পাত ব্যবহার করে তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন কাটার সরঞ্জাম।
বর্তমানে লোহার দাম প্রতি কেজি ৭৫–৯০ টাকা এবং স্প্রিং লোহা ১০২–১২০ টাকা। কয়লা বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ২২–২৫ টাকায়। উপকরণ ও মজুরি বাড়ায় লাভের পরিমাণ কমলেও এই ঐতিহ্যবাহী পেশাকে ধরে রেখেছেন কামাররা।
সরঞ্জামের বর্তমান বাজারদর অনুসারে
প্রতি পিস চাপাতি বিক্রি হচ্ছে ৪০০–৫০০ টাকা, বড় ছুরি ৩৫০–৬০০ টাকা, ছোট ছুরি ১০০–২০০ টাকা, কুড়াল ৯০০–১৫০০ টাকা, চাপ দা ১৫০–২০০ টাকা,বটি ৬০–২০০ টাকা এবং চামড়া ছড়ানোর ছুরি ২০–১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পাকেরহাট বাজারের কামার জগদীশ রায় বলেন, ‘‘বছরের অন্যান্য সময় কাজের চাপ কম থাকে, কিন্তু কোরবানির ঈদের আগে বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ নেই। সরকার যদি আমাদের দিকে একটু নজর দিত, তাহলে এই পেশায় থাকা অনেকেরই উন্নতি হতো।’’
পাকেরহাট বেলতলী মার্কেটের কামার সাঞ্জু রায় বলেন, ‘‘লোহার দাম, কয়লার দাম, শ্রমিকের মজুরি- সবই বেড়েছে। তাই দামেরও পরিবর্তন হয়েছে। তবে কোরবানির ঈদের আগে পরিশ্রম করলে কিছুটা লাভ হয়। এটা হাতের কাজ, লাভ নির্ভর করে পরিশ্রমের ওপর।’’
তবে যন্ত্রপাতির দাম নিয়ে কিছুটা অসন্তোষ রয়েছে ক্রেতাদের মধ্যে। তাঁদের অভিযোগ, প্রতি বছর দাম বেড়েই চলেছে।
বালাপাড়া গ্রামের সাব্বির হোসেন ও লিটন ইসলাম, ছাতিয়ানগড়ের নাসির ইসলামসহ আরও অনেকে পুরোনো সরঞ্জাম শান দিতে এসেছেন পাকেরহাট বাজারে। তাঁরা বলেন, কোরবানির ঈদে পশু জবাই ও মাংস কাটার জন্য এসব যন্ত্রপাতি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তাই নতুন কেনা ও পুরোনো শান দেওয়া দুটোই করতে হয়।
এ বিষয়ে খানসামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান সরকার বলেন, “সমাজের উন্নয়নে প্রতিটি পেশার মানুষের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। কামারদেরও অবদান কম নয়। তাই সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী উপজেলাপর্যায়ে কামারদের ঐতিহ্য রক্ষা ও তাদের কাজের পরিধি বাড়াতে আমরা কাজ করছি।”