বুধবার, ৮ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

কেক বিক্রেতা আবিদা হতে চান বিসিএস ক্যাডার

নবাবগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
ঘরে তৈরি কেক অনলাইনে বিক্রি করে নিজের লেখাপড়া সহ ভাই, বোনের দায়িত্ব নিয়েছেন মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে আবিদা তাবাচ্ছুম তমা। জীবনে স্বপ্ন আছে, কেক বিক্রি করে, হতে চান বিসিএস ক্যাডার। করতে চান ভাই-বোনদের প্রতিষ্ঠিত ।
পরিবারের বড় মেয়ে হওয়া, জীবনের সাথে সংগ্রাম করে চলতে হয়েছে। অনেক প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে আজ কেক বিক্রি করে স্বাবলম্বী হয়েছেন দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার নারী উদ্যোক্তা আবিদা তাবাচ্ছুম তমা। এখন তার আয়ে চলছে পরিবার।আবিদা তাবাচ্ছুম তমা উপজেলা সদরের তর্পনঘাট গ্রামের এক নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। তিনি বর্তমানে ইংরেজি বিভাগে, রংপুর সরকারি কলেজে স্নাতক চতুর্থ বর্ষে লেখাপড়া করছেন।
করোনা মহামারি বিশ্বজুড়ে যখন রাজত্ব করছিল। সেই করোনার প্রকোপে লকডাউন ঘোষণা হলে সবার সাথে তিনিও ঘরবন্দি হয়ে যান। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার হওয়ায় আর্থিক সংকটে পড়ে তার পরিবার। একে লকডাউন অন্যদিকে আর্থিক সংকটে পড়ছে পরিবার। সবকিছু ভেবেই সিদ্ধান্ত নেন কিছু করার।
লকডাউন আর অবসর সময়কে কাজে লাগানোর জন্য অনলাইনে ফাস্টফুডের ব্যবসা শুরু করার সিদ্ধান্ত নেন। ফাস্টফুডের নিজের তেমন কোন অভিজ্ঞতা না থাকলেও মা, বোনের সহযোগিতা ও ইউটিউব দেখে শিখে ফেলেন ফাস্টফুডের বিভিন্ন আইটেম (বার্গার, চিকেন নাগেট, পাস্তা, চাউমিন, পুটিন, কেক) তৈরির কাজ। প্রত্যন্ত অঞ্চলে ফাস্টফুড ব্যবসা চলবে কিনা এসব নিয়ে দ্বিধাদ্বন্ধে থাকলেও শুরুতেই পান ব্যাপক সাড়া। আসতে থাকে অর্ডার।
এর পর আর তাকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এখন তিনি ফাস্টফুডের বিভিন্ন আইটেমের পাশাপাশি প্রতিদিন গড়ে ৪ থেকে ৫ টি কেক বিক্রি করেন। চাহিদা থাকলেও পুঁজি আর শ্রমিকের অভাবে তিনি তার ব্যাবসাকে বাড়াতে পারছেন না।অপর দিকে দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে তার লাভ কিছুটা কম হচ্ছে। তাই সরকারিভাবে প্রশিক্ষণ ও পুঁজি ব্যবস্থা করে দেয়া হলে তার একটি স্থায়ী ফাস্টফুডের দোকান দেওয়ার পরিকল্পনা আছে। কেক বিক্রির টাকার আয় দিয়ে তিনি নিজের লেখাপড়ার সহ ভাই, বোন দের লেখাপড়া খরচ চালাচ্ছেন ।
নারী উদ্যোক্তা আবিদা তাবাচ্ছুম তমা বলেন- আমি ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে শুরু করি ‘Adiba Jarin’ নামক ফেসবুক আইডির মাধ্যমে ‘ইয়াম্মি ফুড এক্সপ্রেস নবাবগঞ্জ’ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রচারণা শুরু হয়। মাত্র ৪ হাজার টাকা পুঁজি দিয়ে শুরু হয় ব্যবসা।ফাস্টফুডের বিভিন্ন আইটেম দিয়ে শুরু হলেও ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাই , বিবাহ বার্ষিকী, জন্মদিন, বিয়ে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী সহ না না অনুষ্ঠানের বাহারী ডিজাইনের বিভিন্ন প্রজাতির কেক।
তিনি আরো বলেন, জীবনের স্বপ্ন আছে ভালোভাবে যদি লেখাপড়া শেষ করতে পারি। বিসিএস পরীক্ষায় বসবো, বিসিএস ক্যাডার হওয়ার ।পাশাপাশি ভাই-বোনদের করব প্রতিষ্ঠিত।
নারী উদ্যোক্তার মা জানান- আবিদার ছোট থেকেই অনেক ইচ্ছা ছিল বাবার পাশে দাঁড়ানোর। করোনা সময় যখন সবকিছু বন্ধ হয়ে যায় ,বাড়িতে বসে সময় কাটতে ছিল না।তখন সে সিদ্ধান্ত নিল কোন কিছু করার যায় কি না,অল্প টাকা দিয়ে । তারপরেই শুরু করে বিভিন্ন খাবার আইটেম তৈরি করার । পাশাপাশি কেক তৈরি ও বিক্রির ।
ক্রেতা তনি বেগম বলেন-মেয়ে জন্মদিনের জন্য ফোনে দুই পাউন্ড কেক অর্ডার করছিলাম । শুরুতে ভাবছিলাম যে হয়তোবা তেমন ভালো হবে না। নিয়ে আসার পর দেখি কেকের ডিজাইন টা অনেক সুন্দর করেছে । খাওয়ার পর তো আমি অবাক,যে উপজেলা শহরে এত সুন্দর কেক পাওয়া যাবে। আমি ভাবতে পারিনি। আমি জেলা শহরে অনেক কেক খেয়েছি, তবে কোথাও এমন টেস্টফুল কেক পায়নি ।
উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা মোশাররত জাহান বলেন- আবিদা তাবাচ্ছুম তমা একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। এলাকায় তার তৈরি কেকের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে । বর্তমানে উপজেলা পর্যায়ে নারীদের প্রশিক্ষণ বন্ধ রয়েছে। আগামীতে প্রশিক্ষণ শুরু হলে তাকে প্রশিক্ষণ ও ঋণের ব্যবস্থা সহ মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।
ভ্যানিলা কেক ১ পাউন্ড ৩৫০,অরেঞ্জ ১ পাউন্ড ৪০০,চকলেট ১পাউন্ড ৫০০,স্পেশাল চকলেট ১পাউন্ড ৬০০,ভেলভেট কেক ১ পাউন্ড ৫৫০,হাফ ভ্যানিলা + হাফ চকলেট কেক ১ পাউন্ড ৫০০ দামে বিক্রি হয় ।

Share This