কোনভাবেই ফ্যাসিজমকে বরদাস্ত করবো না
- ডা.শফিকুর রহমান
পীরগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি
জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আমরা কোনভাবেই ফ্যাসিজমকে বরদাস্ত করবো না। শহীদ আবু সাঈদের মা বাবা তাদের সন্তান হারিয়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশে তাদের কোটি কোটি সন্তান রয়েছে। আবু সাঈদ সেদিন বাংলার মানুষের চোখে আঙ্গুল দিয়ে পথ দেখতে বলেছে। যুবক যুবসমাজ সমস্ত অন্যায় অসত্যের বিরুদ্ধে। সেদিন সারাদেশের ছাত্র ছাত্রী, যুবক যুবতীদের মাঝে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল। তাদের শ্লোগান ছিল “রক্তে জ্বলছে আগুন”। সমস্ত মায়েরা ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে এসেছিল। এক মা তার দশ মাসের কোলের সন্তানকেও নিয়ে এসেছিলেন। মানুষ ওই শিশুর মাকে সেদিন বলেছিলো, আপনি এতটুকু শিশুকে নিয়ে রাস্তায় এসেছেন কেন? জবাবে ওই মা বলেছিলো, যত শিশু রাস্তায় নেমে এসেছে আমি সবগুলো শিশুর মা। এইভাবেই রক্তে আগুন ধরিয়েছিল আবু সাঈদ। আল্লাহ পাক আবু সাঈদকে শহীদদের নেতা হিসেবে কবুল করুক। যারাই শহীদ হয়েছে, তাদের একটাই শ্লোগান ছিল “উই ওয়ান্ট জাস্টিস”। আজ মঙ্গলবার বিকাল ৩ টায় রংপুরের পীরগঞ্জ বাসষ্ট্যান্ডে পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা মিজানুর রহমান। ডা. শফিকুর রহমান আরো বলেন, আমরা বৈষম্যের বিরুদ্ধে ন্যায় বিচার চাই। যে সমাজে ন্যায় বিচার কায়েম হয়, সেই সমাজে সকল ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়। যেই সমাজে ন্যায় বিচার নেই, সেই সমাজে কোনও অধিকার কায়েম হয় না। ন্যায় বিচারের প্রতীক হলো দাঁড়ি পাল্লা। জামায়াতের প্রতীক ছিল দাঁড়িপাল্লা। ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচারেরা দেশের বিচার বিভাগ কে ধ্বংস করে দলীয় কার্যালয়ে পরিণত করেছিল। তারা আমাদের প্রতীক কেড়ে নিয়েছিল, দলকে নিবন্ধন হারা করেছিল। শেষ পর্যন্ত দিশেহারা হয়ে দলকে নিষিদ্ধ পর্যন্ত করেছিল। চার দিনের মাথায় আল্লাহ তায়ালা তাদেরকেই নিষিদ্ধ করেছে। উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, কেন তারা দাঁড়ি পাল্লার বিরুদ্ধে লাগলো? তাদের মনে ভয় ছিল, এই প্রতীক যদি সংসদে যায়। এই প্রতীক হাতে নিয়ে যদি মানুষ দেশ শাসন করে। তাহলে দেশে আইনের শাসন কায়েম হবে। মানুষ ন্যায় ভিত্তিক সমাজ ও ইনসাফ পাবে। ইনশাআল্লাহ আমরা দলের নিবন্ধন ও প্রতীক ফিরে পাব। আমাদেরকে অবৈধ প্রমাণ করে অবৈধভাবে এটা করা হয়েছিলো। আমরা বৈধ হয়েছি। তারাই এখন জণগণের ঘৃণার পাত্রে পরিণত হয়েছে।
তিনটি নির্বাচন তারা করেছেন, মানুষকে মানুষ মনে করেন নি। প্রথম নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৪ জন বিনা ভোটে পাস। দ্বিতীয় নির্বাচন নিশি রাতের নির্বাচন। তৃতীয় নির্বাচন আমি আর ডামি। এইভাবে নির্বাচনী ব্যবস্থা, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান সবগুলোকেই খেয়ে ফেলেছে। কিছু সুশীল বলে আওয়ামী লীগ কি আগামী নির্বাচনে আসতে পারবে? আমরা বলি আওয়ামী লীগ কি কথনও নির্বাচন চেয়েছে? আওয়ামী লীগ নির্বাচন চাইলে গত তিনটি নির্বাচনে তাদের সুযোগ ছিল, জনগণকে সুযোগ দেয়ার। তারা তো নিজেরাই নির্বাচনে বিশ্বাস করে না। অনেক যুবক আছে যারা নিজের ভোটটাই কখনও দিতে পারেন নি। আমরা দাবী তুলেছি বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রত্যেক যুবক এবং যুবতীকে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করতে হবে। শুধু আমরা একা আন্দোলন করিনি, সারা দুনিয়ায় যেসব প্রবাসী আছে তারাও ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে। সুতরাং প্রবাসে যারা আছে, তাদেরকেও ভোটার তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করতে হবে। তিনি আরো বলেন, শিক্ষা জীবন শেষ করে মামা-খালুর পিছনে চাকুরীর জন্য ঘুরে নিজের শেষ করা শিক্ষা আমরা চাইনা। আমরা সেই শিক্ষা চাই, যে শিক্ষা মানুষ কে মানুষ হতে শেখাবে। যে শিক্ষা মানুষের হাতকে কর্মীর হাতে পরিণত করবে। শিক্ষা মানুষের নৈতিক জ্ঞানকে পরিণত করবে। আমরা সেই শিক্ষা চাই।