গরীবের চাল ছাত্রলীগ নেতার গুদামে

হিলি (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
দিনাজপুরের হাকিমপুরে নিষিদ্ধ ঘোষিত উপজেলা ছাত্রলীগ নেতার ধানভাঙ্গা মিলের গুদামঘর থেকে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির (ওএমএস) সাড়ে পাঁচ মেট্রিকটন চাল ও চালের ১০৪টি চটের খালি বস্তা উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল শনিবার রাত ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অমিত রায় এসব চাল ও বস্ত উদ্ধার করেন। এঘটনায় জড়িত আসাদকে গ্রেপ্তার করা না গেলেও তাকে আসামী করে মামলা দায়েরে প্রস্তুতি চলছে। আসাদ উপজেলা শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি।
মনসাপুর গ্রামের লোকজনেরা জানান, উপজেলার আলীহাট ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের পাশে মনসাপুর গ্রামের আসাদুজ্জামান আসাদের ধান ভাঙার মিলের গুদামে সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল মজুদ ছিল। খবর পেয়ে গতকাল শনিবার রাত ৯টার দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পুলিশ, খাদ্যগুদামের লোকজন ও স্থানিয় প্যানেল চেয়ারম্যান ওই গুদামের তালাভেঙ্গে প্রবেশ করেন। এসময় তারা সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির সাড়ে ৫ মেট্রিকটন চাল আটক করেন। জড়িত কাউকে আটক করতে না পেরে পরে তারা চালগুলো নিয়ে যান।
আলীহাট ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) প্যানেল চেয়ারম্যান মো. আল ইমরান জানান, এখানে পরিষদের কারও সংশ্লিষ্টতা নেই। গত বৃহস্পতিবার ও শনিবার ইউনিয়ন পরিষদে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির (ওএমএম) আওতায় ডিলারের মাধ্যমে ১৫ টাকা কেজি দরে উপকারভোগীদের মাঝে চাল বিক্রয় করা হয়েছে। অন্যত্র কেনা বা বিক্রির কোন সুযোগ নাই।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অমিত রায় জানান, উপজেলার আলীহাট ইউনিয়ন পরিষদের পাশে স্থানীয় আসাদুজ্জামান আসাদের ধান ভাঙানোর একটি ঘরে সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির বেশকিছু চাল মজুদের খবর পেয়ে অভিযান চালানো হয়। সেখানে থেকে সাড়ে ৫ মেট্রিকটন চাল জব্দ করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ১৫ টাকা কেজি দরে ডিলার কর্তৃক বিক্রয়ের পরে এতগুলো সরকারি চাল এখানে মজুদ রাখা বেআইনি এবং অপরাধ। অভিযানের সময় চাল ও মিল মালিককে পাওয়া যায়নি। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে চালগুলো জব্দ করে উপজেলা খাদ্যগুদামে পাঠানো হয়েছে। পরবর্তীতে নিয়মিত মামলায় জড়িতদের নাম উল্লেখসহ তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা খালেদা খাতুন জানান, জব্দকৃত চাল বর্তমানে উপজেলা খাদ্যগুদামে রাখা হয়েছে। গতকাল রোববার বিকালে থানায় এসেছি মামলা করার জন্য। প্রস্তুতি চলছে। জড়িত মনসাপুর গ্রামের আসাদুজ্জামান আসাদকে ১নং আসামী করে মামলা করা হবে।
থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. সুজন মিঞা জানান, এব্যাপারে গতকাল রোববার বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত থানায় কোন মামলা দায়ের হয়নি। তবে থানায় মামলা করার জন্য উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা সহ অনেকে এসেছেন।
এদিকে বিভিন্ন সূত্র জানায়, ধান ভাঙ্গা মিলের মালিক আসাদুজ্জামান আসাদ নিষিদ্ধ ঘোষিত উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি। তার মিল থেকে সরকারী চাল অবৈধ মজুদের অভিযোগে মামলা করা হবে। এর আগে আসাদ বৈষম্যবিরোধী দুই ছাত্র হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হন। পরে তিনি জামিনে বেরিয়ে আসেন।