রবিবার, ১১ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

গান গেয়েই লেখাপড়ার খরচ যোগায় রিমু সরকার

নবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
ধানের দেশ-গানের দেশ-বাংলাদেশ। এদেশের প্রতিটি পেশার প্রতিটি বয়সের মানুষের সাথে মিশে আছে গান। গানের সুর শুধু বিনোদনই দেয়না; মনের সাথে সাথে শরীরেরও ক্লান্তি দূর করে। তাইতো বৈঠা হাতে ক্লান্ত মাঝি শরীরের ক্লান্তি দূর করতে হাক ছাড়েন – ওরে নীল দরিয়া, আমায় দে রে দে ছাড়িয়া। আবার কখনও ক্লান্ত চাষি গলা ছেড়ে ধরেন ভাওয়াইয়া গানের সুর। মানুষের মনের এই খোরাক যোগায় কন্ঠশিল্পীরা। এদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অনেক প্রতিভাবান শিল্পী তৈরি হয়। আবার সময়ের অবহেলায় অনেকে হারিয়েও যায়। তেমনই এক প্রতিভাবান শিশু শিল্পীর খোঁজ মিলেছে দিনাজপুরের নবাবগঞ্জে।

বলছি শিশু শিল্পী রিমু সরকারের কথা। বয়স সবে মাত্র ১১। এই বছর বয়সেই গান গেয়ে বিনোদন দিয়ে সবার মনে জায়গা করে নিয়েছে সে। গান গেয়ে নিজের লেখাপড়ার পাশাপাশি পরিবারের দায়িত্ব নিয়েছে রিমু। এখন সুরের মুর্ছনায় মুগ্ধ করছে হাজারও দর্শক শ্রোতাকে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করে জনপ্রিয় হয়েছে এলাকায়, সুরের যাদুতে জয় করেছেন দর্শক ও শ্রোতাদের মন।
দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার দাউদপুর ইউনিয়নের খয়েরগুনি গ্রামে সনজিৎ চন্দ্র সরকার মেয়ে রিমুর সরকার। রিমুর মা বিথী রানীর অনেক ইচ্ছে ছিল সংগীত শিল্পী হওয়ার। কিন্তু মধ্যবিত্ত পরিবারের হওয়ায়, নিজের স্বপ্ন আর পূরণ করতে পারেননি তিনি। সময়ের সাথে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয় বিথী রানী সরকারকে। কিন্তু হাল ছাড়েননি তিনি। সংসারের কাজের ফাঁকে ফাঁকে বাড়িতে নিজে গান করতেন। আর মায়ের গান শুনে ৪ বছর বয়স থেকেই গান গাওয়ার চেষ্টা করত রিমু। গানের প্রতি প্রবল আগ্রহ দেখে মা বিথি রানী নিজে যতটুকু জানেন তা দিয়েই রিমুকে গান শেখানো শুরু করেন। মেয়ের মাঝে নিজের ভেঙে যাওয়া স্বপ্ন দেখেন মা বিথী রানী সরকার ।
রিমুর মা বিথী রানী বলেন, ছোট থেকেই গান গাওয়ার চেষ্টা করত রিমু। আমি যতটুকু জানি তাই শিখিয়েছি। মধ্যবিক্ত পরিবারের হওয়ায় ভালো কোন জায়গায় নিয়ে গিয়ে গান শেখার মত আমার সামর্থ্য নাই। তাই যদি কোন শিল্পীগোষ্ঠী প্রতিষ্ঠান থেকে সহযোগিতা করা হয় তাহলে হয়ত রিমুর এ প্রতিভা ধরে রাখা সম্ভব। তাই সংগীতজ্ঞদের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

শিশু শিল্পী রিমু সরকার বলে, আমি যতটুকু গান জানি তা আমার মায়ের কাছেই শেখা। আমার মা কাজের ফাঁকে ফাঁকে আমাকে গান শেখাতেন। এখন দূর-দূরান্ত থেকে অনেকে গান গাওয়ার জন্য আমাকে নিয়ে যায়। আমি গান গেয়ে যে সম্মানী পাই ওইটা দিয়ে আমি লেখাপড়ার করি। আমাকে এখন অনেকে উৎসাহ দেয়, আমারও ভালো লাগে দর্শকশ্রোতাদের আনন্দ দিতে।
রিমু সরকার আরও বলে, আমার ইচ্ছা আমি কন্ঠশিল্পী হয়ে মায়ের স্বপ্ন পূরণ করবো। এজন্য আমি আরও শিখতে চাই। যদি কোন শিল্পকলা একাডেমী বা আমাকে সহায়তা করে তবে বড় হয়ে কিছু করতে পারব।
কথা হয় নবাবগঞ্জ পাইলট বালিকা স্কুলের প্রধান শিক্ষক তোফায়েল হোসেন এর সাথে। তিনি জানান, রিমু অনেক ভাল একটা মেয়ে, শুধু গান নয় লেখাপড়া-খেলাধুলাতেও অনেক ভাল। আমি যতটুকু জানি সে মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। যতটুকু জানি, এই এলাকায় যেকোন অনুষ্ঠানে তার গানের বেশ চাহিদা রয়েছে। এমন কি সে গান গেয়ে নিজের লেখাপড়ার খরচ চালায়। এমন একটি প্রতিভা সম্পন্ন মেয়েকে একটু যত্ন নিলে সে এই এলাকার মুখ উজ্জ্বল করতে পারে।

Share This