বৃহস্পতিবার, ১লা মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

চিরিরবন্দরে খরস্রোতা ইছামতির বুকজুড়ে বোরো চাষ

চিরিরবন্দর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
এক সময়ের খরস্রোতা ইছামতি নদী নাব্যতা হারিয়ে শুকিয়ে এখন অনেকটা সমতল ভূমিতে পরিণত হয়েছে। নদীর বুকজুড়ে কৃষকের ফসলের সমারোহ। বর্তমানে নদীটি অস্তিত্ব সংকটে।

এক সময় এই নদীর পানি দিয়ে তীরবর্তী জমিতে সেচ দিয়ে কৃষকেরা চাষাবাদ করতেন। এখন নদীতে পানি না থাকায় শুকনো মৌসুমের ফসলে সেচ দিতে পারেন না কৃষক। নদীর মধ্যেই শ্যালোমেশিন বসাতে হয় পানি তোলার জন্য। বর্ষা মৌসুমে অল্প পানিতেই নদীর পাড় উপচে পাশের জমি নিমজ্জিত হয়ে যায়। কৃষক হারায় কষ্টে উৎপাদন করা ফসল। ফলে এক সময়ের আর্শীবাদ এখন কৃষকের কান্নার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা। এ নদীকে বাঁচিয়ে রাখতে এখনই পরিকল্পনা নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন বিজ্ঞমহল।

স্থানীয়রা বলছেন, দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার নশরতপুর, আলোকডিহি, সাতনালা এলাকার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে খরস্রোতা ইছামতি নদীটি। এক সময় এ নদীতে চলত বড় বড় পালতোলা নৌকা-জাহাজ। ব্যবসা-বাণিজ্যে সুবিধার জন্য এ নদীর তীরে গড়ে ওঠে রানীরবন্দর। কিন্তু রানীরবন্দর ব্যবসা প্রধান এলাকা হলেও বাকি সব ইতিহাস। আর নাব্যতা হারানো ইছামতি নদী এখন বোরো ধানের ক্ষেত। অনেক এলাকায় নদী ভরাট করে হয়েছে বেদখল। শুকনা মৌসুমের আগেই নদী শুকিয়ে যাওয়ায় হারিয়েছে অনেক দেশি প্রজাতির মাছ ও জলজপ্রাণি। এতে জেলেরা পেশা বদল করে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে। বর্তমানে নদীটি অন্তিত্ব সংকটে পড়েছে। কৃষি জমিতে সেচ তো দূরের কথা উল্টো শুকিয়ে যাওয়ায় নদীর বুকে চাষ হচ্ছে ফসল। নদী শুকিয়ে জীর্ণ এক মরাখালে পরিণত হয়েছে। নদীর বুকজুড়ে পানির বদলে বোরোধান চাষ হচ্ছে। বছরের প্রায় সময় নদীতেই চলে ভুট্টা, ধান, রসুনসহ বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ। এক সময় এ নদীর পানি দিয়ে কৃষক চাষাবাদ করত। বর্ষায় অল্প পানিতেই নদীর পাড় উপচে পাশের জমি নিমজ্জিত হয়ে যায়। নদী তখন কৃষকের কান্নার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। খনন করা হলে নদীর আশপাশের কৃষকরা চাষাবাদে উপকৃত হবে। এ নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করত জেলেদের পরিবার। নদীতে পানি না থাকার কারণে হারিয়ে গেছে স্থানীয় জেলেদের জীবনযাত্রা, দেখা দিয়েছে দেশি মাছের অভাব।
উপজেলার গছাহার গ্রামের অবসর প্রাপ্ত প্রবীণ শিক্ষক বাবু নন্দীশ্বর দাস, নশরতপুর গ্রামের সাবেরউদ্দিন, জোত সাতনালা গ্রামের মজিবর রহমানসহ কয়েকজন জানান, ইছামতি নদী এখন আর নদী নেই। হঠাৎ কেউ দেখলে মনে করবেন এটি একটি সমতল ভূমি। নদীর বুকে মাঝে মধ্যে কিছু কিছু জায়গায় দুই-একটি গর্ত দেখা যায়। সেগুলোতেও পানি থাকে না। নদীর বুকে এখন বোরোধান চাষ হচ্ছে। এ নদীতে বছরের বেশির ভাগ সময়েই পানি থাকে না। নদীতে পানি না থাকার কারণে হারিয়ে যাচ্ছে দেশি প্রজাতির মাছ। তাই বাধ্য হয়ে জেলেরা তাদের পেশা পরিবর্তন করে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে। নদীতে পানি না থাকায় শুষ্ক মৌসুমে সেচও দিতে পারেন না কৃষক। বরং নদীর মাঝেই পানি উত্তোলনের জন্য শ্যালোমেশিন ব্যবহার করা হচ্ছে।

দিনাজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ফারুক আহমেদ জানান, জেলায় ছোট-বড় মিলে ৩৪টি নদী রয়েছে। পানি প্রবাহ ঠিক রাখতে ইতিমধ্যে পুর্ণভবাসহ ৬টি নদীতে খনন করা হয়েছে। আগামীতে ইছামতি ও ছোট যমুনা নদী খননের প্রস্তাব করা হয়েছে।

Share This