শনিবার, ৪ঠা জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

চিরিরবন্দরে তেলের ঘানি টানছে ঘোড়া

চিরিরবন্দর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
চিরিরবন্দর উপজেলার চিরিরবন্দর গ্রামে দেখা মিলেছে এক অভিনব দৃশ্য। কাঠের তৈরি সরিষার তেলের ঘানি টানছে ঘোড়া। গরুর বদলে এমন ঘানি টানানোর পদ্ধতিটি শুধু সময়-সাশ্রয়ী নয়, বরং খরচ কমানোর ক্ষেত্রেও বিশেষ ভূমিকা রাখছে।
উপজেলার আব্দুলপুর ইউনিয়নের চিরিরবন্দর গ্রামের বাসিন্দা মো. আলতাফ হোসেন তার পূর্বপুরুষদের গরু দিয়ে তেল তৈরির ঘানির পদ্ধতি পাল্টে এনেছেন এক অভিনব পরিবর্তন। তার এ উদ্যোগ স্থানীয়ভাবে বেশ আলোড়ন তুলেছে।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে তার পরিবার গরু দিয়ে তেলের ঘানি পরিচালনা করত। তবে ইউটিউব দেখে নতুন ধারণা পেয়ে তিনি গরু বিক্রি করে সেই টাকায় একটি ঘোড়া কিনে ঘানিতে যুক্ত করেন।
বর্তমানে বাজারে অনেক ধরনের তেল পাওয়া যায়, তবে বিশুদ্ধ সরিষার তেলের চাহিদা সবসময়ই শীর্ষে। সরিষার তেল তৈরি হয় সরিষার বীজ থেকে, যা প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় তেলের নির্যাস সংগ্রহের মাধ্যমে প্রস্তুত করা হয়। এই তেল শুধুমাত্র খাবারেই নয়, রূপচর্চা এবং স্বাস্থ্যসেবায়ও বহুল ব্যবহৃত। স্থানীয় ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা দাবি করেন, ঘানিতে তৈরি তেলের স্বাদ, রঙ ও ঘ্রাণ খাঁটি।
বেলতলী বাজারের তেল ব্যবসায়ী রাসেল আহমেদ বলেন, ‘ঘানিতে তৈরি তেলের স্বাদ দোকানের তেলের চেয়ে অনেক ভালো। ১০ কেজি সরিষা থেকে প্রায় তিন থেকে সোয়া তিন লিটার তেল উৎপাদিত হয়, যা স্থানীয় বাজার ছাড়াও অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে।
উপজেলার সূখীপীর বাজারের তেল ব্যবসায়ী মসলেম উদ্দিন বলেন, ঘানিতে তৈরি তেল ও খৈল বেশ ভালো মানের। এ উদ্যোগ এলাকার অনেক মানুষের নজর কেড়েছে।তিনি আরো বলেন, ‘কাঠের ঘানিতে তেল উৎপাদনে কোনো ভেজাল মেশানোর সুযোগ নেই। লোহার ঘানির তুলনায় এতে তেলের গুণাগুণ ঠিক থাকে। তেল পুড়ে যাওয়ার ঝুঁকিও নেই।
উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা শহীদুল আলম বলেন, এ উদ্যোগ স্থানীয়ভাবে নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছে। দেশীয় এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে ঘানি মালিকদের আরো উৎসাহিত করার পরিকল্পনা রয়েছে।তিনি বলেন, মিলনের এ উদ্ভাবন কেবল তার নিজস্ব আয়ের পথ খুলে দেয়নি, বরং চিরিরবন্দরে খাঁটি সরিষার তেল উৎপাদনে একটি নতুন দিক উন্মোচন করেছে। সময় সাশ্রয়ী এবং পরিবেশবান্ধব এ পদ্ধতি স্থানীয় কৃষি এবং উদ্যোক্তাদের জন্য একটি অনুপ্রেরণা হতে পারে।

Share This

COMMENTS