বুধবার, ২১শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ সুব্রত খাজাঞ্চী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

চিরিরবন্দর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামের সুব্রত খাজাঞ্চী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রাকৃতিক-স্বপ্নিল ও শিশুবান্ধব পরিবেশে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে গড়ে ওঠা বিদ্যালয়টি শিশুদের মধ্যে শিক্ষা বিস্তারে অবদান রেখে চলেছে। ২০২৩ সালেও বিদ্যালয়টি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্বীকৃতি পেয়েছিল। এ বিদ্যালয়টি দিনাজপুুরের চিরিরবন্দর উপজেলাসদর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে ১১নং তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের কুশলপুর গ্রামে অবস্থিত।
সরজমিন দেখা গেছে, বিদ্যালয়ে প্রবেশ পথে দু’ধারে ফুলগাছ। বিদ্যালয়ের আঙিনায় বিভিন্ন খেলার সরঞ্জাম, ছাদে নানা ফুল-ফল গাছের সমাহার। সিসিটিভি ক্যামেরায় নিয়ন্ত্রিত বিদ্যালয়টি। শিশুদের শিক্ষা ও চিত্তাকর্ষণের জন্য রয়েছে ঢেঁকিকল, দোলনা, সরাৎ, ফুলবাগান, সবজি বাগানসহ বিভিন্ন চিত্ত বিনোদনের সামগ্রী। এছাড়াও ভাষা শহীদদের স্মরণে শহীদ মিনার, মানচিত্র, সততা স্টোর, সুসজ্জিত শ্রেণিকক্ষ রয়েছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে নৈতিকতা, লেখাপড়া, শিক্ষাদান ও উপস্থিতিতে দৃষ্টান্ত রেখেছে বিদ্যালয়টি। জাতীয় সঙ্গীত ও শপথ বাক্য পঠিত হওয়ার পর কোনো শিক্ষার্থী অনুপস্থিত থাকলে তাৎক্ষণিক অভিভাবকদের নিকট শিক্ষকের ফোন চলে যায়।
অভিভাবক মো. নুর ইসলাম ও কল্পনা রানী রায় জানান, আমাদের ছেলেমেয়েরা এ বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। তাই একটু দূর হলেও এ বিদ্যালয়ে মেয়েকে ভর্তি করে দিয়েছি। এখানকার পরিবেশ অত্যন্ত সুন্দর, মনোরম ও বিনোদনের পাশাপাশি লেখাপড়াও ভালো হয়। শিক্ষকরা বাচ্চাদেরকে পরম আদর-যত্ন আর ভালোবাসা দিয়ে পাঠদান করে থাকেন। এ বিদ্যালয়ে অনেক দূর-দূরান্ত থেকে বাচ্চারা লেখাপড়া করতে আসে।
কয়েকজন স্থানীয় ব্যক্তি জানান, আমাদের চিরিরবন্দর উপজেলাকে শিক্ষানগরী বলা হয়। এখানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশাপাশি শতাধিক নামকরা প্রাইভেট কিন্ডারগার্টেন স্কুল রয়েছে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অনেক বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রী থাকলেও অনেক বিদ্যালয়ে তেমন ছাত্রছাত্রী নেই বললেই চলে। সেখানে একেবারেই ব্যতিক্রম হচ্ছে সুব্রত খাজাঞ্চী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা খেলার ছলে ও গানের সঙ্গে বাচ্চাদের পাঠদান করে থাকেন।

সহকারী শিক্ষিকা শাহিনা আক্তার জানান, বিদ্যালয়টি বিভাগ সেরা হওয়ার পিছনে আমাদের যেমন অবদান রয়েছে, তেমনি এখানকার শিক্ষার্থী-অভিভাবকদেরও যথেষ্ট অবদান রয়েছে। এ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি শতভাগ। হঠাৎ কোনো কারণে কোনো শিক্ষার্থী অসুস্থ হলে বা আত্নীয়ের বাড়িতে গেলে অভিভাবকরা বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়ে তা বলে যান। বিদ্যালয়ের পরিবেশ, শিক্ষার উপকরণ, প্রধান শিক্ষকের বিদ্যালয় পরিচালনার কৌশল-দক্ষতা সম্পূর্ণ ভিন্ন।
প্রধান শিক্ষক জগদীশ চন্দ্র রায় জানান, ২০১১ সালে সুব্রত খাজাঞ্চী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়। ২০১৪ সালে মাত্র ৩৩ জন শিক্ষার্থী নিয়ে বিদ্যালয়টিতে পাঠদান শুরু হয়। প্রথম যে ৩৩ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছিল তারা উপবৃত্তি না পাওয়ার কারণে উপবৃত্তির জন্য অন্য বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। তাই কীভাবে এ বিদ্যালয়ের প্রতি শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের আকৃষ্ট করা যায় তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করি। বিদ্যালয়ে লেখাপড়া ও পরিবেশের দিকে মনোযোগ বৃদ্ধি করি। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে তিন শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। বিদ্যালয়টি বর্তমানে উপজেলা, জেলা,বিভাগ পেরিয়ে জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ট প্রাথমিক বিদ্যালয়। শ্রমের ও একনিষ্ঠতার ফল পেয়েছি। আরো মনোযোগ বৃদ্ধি করে প্রতিবছর প্রথম হওয়ার চেষ্টা করব।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার মিনারা বেগম ও সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ সাজ্জাদ হোসেন জানান, জাতীয় শিক্ষা পদক প্রতিযোগিতায় জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান হিসেবে সুব্রত খাজাঞ্চী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রথম হয়েছে। এ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কর্মপরিকল্পনা, কর্মদক্ষতা এবং বিদ্যালয়ের প্রতিটি কর্মক্ষেত্রে তাঁর ছোঁয়া রয়েছে। ক্লাসরুম থেকে শুরু করে বিদ্যালয়ের মাঠে খেলাধুলার সামগ্রী, বিভিন্ন ফুল ও ফলের গাছের সমাহার। রয়েছে বিদ্যালয়ের ভবনে ছাদ বাগান। এখানকার শিক্ষার্থীদের শেখানোর যে কলাকৌশল, তা যে কাউকে মুগ্ধ করে।

Share This