জুয়া মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগে পীরগঞ্জে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মানববন্ধন
পীরগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি
রংপুরের পীরগঞ্জে কাঁচামাল ব্যবসায়ীদের আড়তে অভিযান চালিয়ে নগদ ৯৯ হাজার ৭’শ টাকা, ৬টি মোবাইল কেড়ে নিয়ে মারপিটের পর থানায় নিয়ে জুয়া মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে থানা পুলিশের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসীরা জড়িত পুলিশ সদস্যদের শাস্তিসহ মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছে।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের কলাবাগান (শুকানচৌকি) বাজারে মানববন্ধন শেষে মহাসড়কের এক দিকে যান চলাচল বন্ধ করে বিক্ষোভ করেছে। এতে বক্তব্য রাখেন ভুক্তভোগি ব্যবসায়ী রাশেদুল ইসলাম, আবু তাহের, নালো মিয়া, স্থানীয় বাসিন্দা একরামুল হক, দেলোয়ারা বেগম প্রমুখ। ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা জানান, গত শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) পীরগঞ্জ থানা পুলিশের এসআই মশিউর রহমান ও এএসআই জুয়েল রানাসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য রাত দেড়টার দিকে ব্যবসায়ী রাশেদুল ও সাজু মিয়ার আড়তে যায়। তখন পেঁয়াজ ও কচুর বীজ লোড আনলোডের জন্য সেখানে ৭ জন ব্যবসায়ী অবস্থান করছিল। পুলিশ আড়তে ঢুকেই তল্লাশি চালায় এবং যার কাছে যা আছে দিয়ে দিতে বলেন। এসময় জোরপুর্বক আড়তদার রাশেদুল ইসলামের পকেটে থাকা ১০,৫০০ ও বাক্সে থাকা ৮৫০০ টাকা, সাজু মিয়ার ১২,৩০০ টাকা, আবু তাহেরের ১৫,৪০০ টাকা, মিলন মিয়ার ১৩,৭০০ টাকা, বিলু মিয়ার ১৭,৩০০ টাকা, রবিউল ইসলামের ৭,০০০ টাকা ও নালো মিয়ার ১৫,০০০ টাকাসহ ব্যবহৃত মোবাইলগুলো কেড়ে নেয় এবং এলোপাথারি মারপিট করে। এক পর্যায়ে নালো মিয়া কৌশলে পালিয়ে যায় এবং অসুস্থ হলে হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়। পরে পুলিশ আড়ত থেকে ৬ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় এবং জুয়াড়ী হিসেবে শনিবার দুপুরে আদালতে প্রেরণ করে। মামলায় জব্দ তালিকায় ৯,৮৭০ টাকা উল্লেখ থাকলেও কেড়ে নেয়া অবশিষ্ট ৮৯,৮৩০ টাকা ও মোবাইল ফেরত দেয়া হয়নি।
স্থানীয়রা জানান, ইদানিং পুলিশ বিভিন্নভাবে মানুষকে হয়রানি করছে। এলাকায় মাদকে ছড়াছড়ি, অথচ মাদক কারবারিদের গ্রেফতার না করে সেবনকারীদের মাঝে মধ্যে আটক করে থানায় নেয়ার পথে টাকার বিনিময়ে মাঝপথে ছেড়ে দেয়া হয়। রাশেদুলসহ ভুক্তভোগিরা এলাকার প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, তাদের জুয়া মামলায় ফাঁসিয়ে টাকা মেরে দিয়েছে পুলিশ। দ্রুত মামলা প্রত্যাহার, কেড়ে নেয়া টাকা ফেরতসহ অন্যায়কারী পুলিশ সদস্যদের শাস্তির দাবি জানান তারা। সড়ক অবরোধকালে মহাসড়কের এক পার্শ্বে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
এসআই মশিউর রহমান জানান, এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে জুয়া খেলার সময় ওই ঘরে অভিযান চালানো হয়। এখন তারা পুলিশের বিরুদ্ধে বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করছে। এএসআই জুয়েল রানা জানান, তাস দিয়ে তারা জুয়া খেলা অবস্থায় হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়েছে। ভিডিও ফুটেজ সংরক্ষিত আছে। টাকার পরিমাণ যা ছিল, তা জব্দ তালিকায় দেখানো হয়েছে। বাড়তি টাকার বিষয়টি সত্য নয়।
পীরগঞ্জ থানার ওসি এমএ ফারুক জানান, জুয়া খেলার অপরাধে এসআই মশিউর ও এএসআই জুয়েল রানা তাদের গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসে। জুয়া আইনে নিয়মিত মামলার পর তাদের আদালতে পাঠানো হয়। পুলিশ সদস্যরা কোন অপরাধ করলে দায়ভার নিবো না বরং শাস্তির ব্যবস্থা করবো। পুলিশ সুপার আবু সাইম জানান, জুয়া বর্তমানে সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে, পুলিশ জুয়ার বিরুদ্ধে অপারেশন চালিয়েছে। তারপরেও বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।