রবিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

জুলাই আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ খানসামার আনারুলের শরীরে এখনও ১০ গুলি

খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার আলোকঝাড়ি ইউনিয়নের চন্ডীপুর গ্রামের আনারুল ইসলাম (৩৯) গত বছরের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে পুলিশের গুলিতে আহত হন। গাজীপুর জেলার চান্দুরায় চৌরাস্তা এলাকায় আন্দোলনের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন তিনি। এক বছর পার হলেও ঠিকমতো চিকিৎসা পাননি আনারুল। তার দাবি, চিকিৎসক জানিয়েছে শরীরে এখনও রয়েছে ১০টি গুলি। অর্থের অভাবে উন্নত চিকিৎসা নিতে পারছেন না তিনি। ফলে ধীরে ধীরে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে।
আনারুল ইসলাম আলোকঝাড়ি ইউনিয়নের চন্ডীপুর গ্রামের মৃত ইমান আলীর ছেলে। জীবিকার তাগিদে গাজীপুর জেলার চান্দুরা এলাকার ট্রপিক্যাল গার্মেন্টসে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। স্ত্রী ও একমাত্র সন্তানকে নিয়ে চলছিল তাঁর অভাবী সংসার।
আনারুল ও তার পরিবার জানান, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সকালে গাজীপুরের চান্দুরা চৌরাস্তা এলাকায় গণঅভ্যুত্থানের অংশ হিসেবে স্বৈরাচার বিরোধী এক মিছিলে যোগ দেন তিনি। ওই মিছিল ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ গুলি ছোড়ে, তখনই তিনি গুলিবিদ্ধ হন। প্রথমে স্থানীয় এক বেসরকারি হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, সেখান থেকে কোনো চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজপত্রের প্রমাণাদি তাঁকে দেওয়া হয়নি।
পরবর্তীতে দেশে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তিনি খানসামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও একাধিক বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। তবে অর্থাভাবে উন্নত চিকিৎসা করাতে পারেননি। এখন তিনি গ্রামে ফিরে অভাবের সংসারে মানসিক সমস্যায়ও ভুগছেন বলে পরিবারের দাবি। সেই সাথে জুলাই আন্দোলনে আহত হিসেবে স্বাস্থ্য কার্ডের আবেদন করলেও এখনও সেটি হাতে পাননি আনারুল ইসলাম। তবে স্বাস্থ্য কার্ডটি প্রক্রিয়াধীন বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
আনারুল ইসলাম বলেন, ” এতজনের মৃত্যুর মিছিল দেখে আমিও আর বসে থাকতে পারিনি। বিবেকের তাগিদে মিছিলে অংশ নিয়েছি। সেই মিছিলে অংশ নিয়ে আমার শরীরে এখনো ১০টা গুলি। হাত-পা ঠিকমতো কাজ করে না। কোনো কাজ করতে পারি না। দুঃখের বিষয়, কেউ খোঁজ নেয় না, কেউ পাশে দাঁড়ায় না। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মানবেতর অবস্থায়, ভাগ্যে কি আছে জানি না?”
আনারুলের ভাই এরশাদ আলী জানান, শুধু চিকিৎসাই নয়, সংসার চালাতেও হিমশিম খাচ্ছেন আনারুল। পাটখড়ি আর জরাজীর্ণ টিনের ঘরে শুয়ে-বসে দিন কাটছে তাঁর। সরকার বা কোনো সংস্থা তাঁকে সহায়তা করলে হয়তো স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারত।”
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি রহিদুল ইসলাম রাফি বলেন, এই আন্দোলনে সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণ ছিল স্বতঃস্ফূর্ত। তাই রাষ্ট্র হোক বৈষম্যহীন। জুলাই আগস্টে আহত যোদ্ধাদের উন্নত চিকিৎসা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে আনয়ন করা রাষ্ট্র দায়বদ্ধ। তাই আনারুলকে সুস্থ করে স্বাভাবিক জীবনে নিয়ে আসতে সংশ্লিষ্ট সকলের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
খানসামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. শামসুদ্দোহা মুকুল বলেন, “জুলাই আন্দোলনে আহত আনারুল চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এলে প্রাপ্ত এক্স-রেতে তাঁর মাথা ও পিঠে ১০টি রাবার বুলেটের অস্তিত্ব ধরা পড়ে। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাঁকে উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, কারণ বুলেট অপসারণসহ তাঁর আরও বিশেষায়িত চিকিৎসা প্রয়োজন। কেননা সে মানসিক ভাবেও ভেঙে পড়েছে। ”
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুজ্জামান সরকার বলেন, “আনারুলের বিষয়ে জানার পর আমরা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। তবে তিনি এখনো শরীরে গুলি বহন করছেন, যা উদ্বেগজনক। তাঁর উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। এই বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে আবারো অবগত করব।”

Share This