গাইবান্ধা প্রতিনিধি
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার পাঁচপীর বাজার-কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলা সদর সড়কে তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত ১৪৯০ মিটার দীর্ঘ ‘মাওলানা ভাসানী সেতু’ বুধবার দুপুরে উদ্বোধন করা হয়। এই সেতুর উদ্বোধন করেন অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
সেতু উম্মোচনের পরপরই দোয়া করেন সুন্দরগঞ্জ উপজেলা জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা মুফতি মো. ওমর ফারুক। এরপর সেতুর সুন্দরগঞ্জের হরিপুর প্রবেশমুখে ফিতা কেটে সেতুর দ্বার খুলে দেওয়া হয়। এসময় উৎসক জনতার ভিড় সামাল দিতে বেশ বেগ পেতে হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। পরে গাড়িতে উঠে গাইবান্ধাবাসীর সঙ্গে হাস্যজ্জল মুখে করমর্দন করেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। এসময় জেলা প্রশাসক চৌধুরী মোয়াজ্জম আহমদ, পুলিশ সুপার নিশাত এ্যঞ্জেলা, গাইবান্ধা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী উজ্জল চৌধুরী ও সেতু নির্মাণ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সহ উপদেষ্টার সফর সঙ্গীরা উপস্থিত ছিলেন।
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, সেতুটির মাধ্যমে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সঙ্গে কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে স্বল্প সময় ও খরচে শিল্প ও কৃষিজাত পণ্য উৎপাদন এবং ছোট ও মাঝারি কলকারখানা প্রতিষ্ঠার সুযোগ সৃষ্টি হবে।
এছাড়া নদীর উভয় তীরের সংযোগসহ উন্নত রোড নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠার ফলে ওই অঞ্চলের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন ও প্রসার ঘটবে। এলাকায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং স্থানীয় আর্থ-সামাজিক অবস্থা উন্নয়নসহ জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখবে।
এদিকে মাওলানা ভাসানী সেতু উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামের দুই অঞ্চলেই মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে। ভোর থেকেই তিস্তা পাড়ে ভিড় জমাতে থাকেন দুই জেলার শত শত দর্শনার্থী এবং সুন্দরগঞ্জ-চিলমারী উপজেলার হাজারো সাধারণ মানুষ। কেউ পরিবারের সঙ্গে, কেউবা দল বেঁধে আসেন জীবনের ঐতিহাসিক এই মুহূর্তের সাক্ষী হতে। দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষিত স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিচ্ছে এই আনন্দে তাদের চোখে-মুখে ফুটে ওঠে উচ্ছ্বাস আর গর্বের আলো।
এর আগে, গত ১০ আগস্ট স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ সেতুটির নামকরণ সংক্রান্ত সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি করে। সেখানে বলা হয়, ১৪৯০ মিটার দীর্ঘ এই পিসি গার্ডার সেতুটি হবে ‘মাওলানা ভাসানী সেতু, গাইবান্ধা’।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সরকার (জিওবি), সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট (এসএফডি) এবং ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ওফিড) অর্থায়নে সেতুটি নির্মাণে মোট ব্যয় হয়েছে ৯২৫ কোটি টাকা। ১৪৯০ মিটার দৈর্ঘ এবং ৯.৬০ মিটার প্রস্থের সেতুটির লেন সংখ্যা ২টি এবং মোট স্প্যান সংখ্যা ৩১টি। এটি একটি প্রি-স্ট্রেসড কংক্রিট গার্ডার সেতু। সেতুর পাশাপাশি নির্মিত হয়েছে প্রায় ৮০ কিলোমিটার এঙ্সে সড়ক, ৫৮টি বঙ্ কালভার্ট ও ৯টি আরসিসি সেতু।