থামছেই না বীরগঞ্জের আত্রাই নদীর অবৈধ বালু উত্তোলন

বীরগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের কাশিপুর মৌজার আত্রাই নদীতে নিষিদ্ধ ড্রেজার মেশিন ও ড্রামট্রাক দ্বারা চোরাই পথে অবৈধভাবে রাতের আধারে লাখ লাখ টাকার বালু উত্তোলন, মজুদ এবং বিক্রি অব্যাহত থাকলেও কোনো প্রতিকার নেই।
এই সরকারী সম্পদ চুরির বর্তমান মূল হোতা বিএনপি নেতা, সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য হাজী শরিফুল ইসলাম প্রধান। তার সঙ্গে জড়িত ভুয়া ইজারাদার নুরুল ইসলাম, ফেরদৌস আলী মেম্বার ও হাসমত আলীসহ অজ্ঞাত কয়েকজন।
জানা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে পানি উন্নয়ন বোর্ড দিনাজপুরসহ বীরগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী অফিসার দূর্নীতিবাজ অসাধু কর্মকর্তা ফজলে এলাহী ও কতিপয় আওয়ামী লীগের নেতা, তৎকালীন ইউনিয়ন সভাপতি প্রভাষক জিয়াউর রহমান জিয়া, মজিবর রহমান (অবঃ মাষ্টার) প্রধান শিক্ষক আজাদ মাষ্টার এবং ইউপি চেয়ারম্যান শাহীনুর রহমান চৌধুরী শাহীন সমন্বয় গঠিত সরকারী বালু খেকো রাজস্ব চোরের সিন্ডিকেট।
নদী খননের বালু সমূহ ১২টি লট তৈরী করে সেগুলো ২ মাসের জন্য স্বল্প মেয়াদি ইজারা দেয়া হয়। উক্ত লটগুলোর মধ্যে ২ টি লট জনৈক নুরুল ইসলাম, ৮ টি লট এমএ খালেক সরকার এবং ২ টি লট সাজেদুর রহমাব অন্তু নামে ইজারা নিয়ে যথা সময়ে সমুদয় বালি অপসারণ করে। তারা ২০২৪ সাল পর্যন্ত লাখ লাখ টাকার বালু উত্তোলন এবং আত্মসাৎ করেছে।
পতিত স্বৈরাচার আওয়ামীলীগ সরকার পতন তথা প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের সময় অবৈধ বালি উত্তোলন সাময়িক বন্ধ ছিল। তারপর থেকে সংশ্লিষ্ট অফিস এবং হাজী শরিফুল ইসলাম প্রধানসহ বালুচোর সিন্ডিকেটের কান্ড বহাল তবিয়তে চলছে।
মোহনপুর ইউনিয়নের কাশিপুর বালু ঘাট দখলে নেয় ভুয়া ইজারাদার নুরুলের মাধ্যমে বিএনপি নেতা হাজী শরিফুল ইসলাম প্রধানসহ তার সাঙ্গপাঙ্গরা।
সেখানে এখনো অবৈধ মাটি ও বালু উত্তোলন চলছে। দীর্ঘদিন অবৈধ বালু উত্তোলন বিক্রি এবং আত্মসাতের পর এখন তারা প্রতি রাতে কাশিপুর জামে মসজিদের সামনে, রাস্তার ধারে চৌধুরীহাট টেকনিক্যাল কলেজের পাশে মজিদ হাজীর জমিতে এবং নদীর পাড়সহ বিভিন্ন স্থানে লাখ লাখ সিএফটি/ঘনফুট বালি মজুদ করছে যাতে বর্ষাকালে স্টক বালি অধিক মূল্যে বিক্রয় করতে পারে।
প্রায় ৭০/৮০ লাখ টাকার বালু ইতোমধ্যে মজুদ করা হয়েছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র জানায়। ইতিমধ্যে ভুয়া ইজারাদার নুরুল ইসলাম রাতের আধারে অবৈধভাবে বালু মজুদের বিষয়টি স্বীকারও করেছে।
প্রকাশ্যে লাখ লাখ টাকার সরকারী সম্পদ মাটি ও বালু চুরির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে জজ কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী চাঁন মিয়া বলেন, এ ধরনের কর্মকাণ্ড দণ্ডনীয় এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
এসিল্যান্ড অথবা উপজেলা প্রশাসন আইন প্রয়োগের মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব চুরির এই সিন্ডিকেট কে আইনের আওতায় এনে মজুদকৃত বালু বাজেয়াপ্ত করে সরকারের কোষাগরে আনতে পারেন, তাতে আইনগত কোন বাঁধা নেই।
মোহনপুরের মুজাহিদ, সামসুল, সামাদ, সাজ্জাদ হোসেন, কাশেম আলী, কোবাদসহ অন্যায়ের প্রতিবাদকারী অনেকে বলেন, আগে খেয়েছে আওয়ামী লীগের নেতারা, আর ক্ষমতায় না আসতেই এখন খাচ্ছে বিএনপি’র নেতারা। চুটিয়ে ঘুষ বানিজ্য করছে আমলারা।
তীব্র নিন্দা জানিয়ে প্রতিকার দেখতে চায় সচেতন মহল।
এ ব্যপারে উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী পাউবো দিনাজপুর সিদ্দিকুর রহমান এবং বীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার তানভীর আহমেদের সাথে কথা হলে তারা ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান।