বুধবার, ৮ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

দুই মেয়াদে সময় বাড়িয়েও পালিয়ে গেছে ঠিকাদার, জয়ন্তীয়া সেতু নির্মাণ কাজ বন্ধ

বীরগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
দুই মেয়াদে সময় বাড়িয়ে ৬ বছরে কাজ হয়েছে মাত্র এক তৃতীয়াংশ। আবারও লাপাত্তা ঠিকাদার। দুর্নীতির বেড়া জালে আটকে আছে জনগুরুত্বপূর্ণ এই গার্ডার ব্রীজের কাজ। সেতু’ নির্মাণে অনিশ্চিয়তায় হতাশ দুই উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ।
দিনাজপুরে আত্রাই নদীর জয়ন্তীয়া ঘাটের একদিকে বীরগঞ্জ ওপারে খানসামা উপজেলা। দুই উপজেলায় প্রায় ১০ লাখ মানুষের বসবাস। তাদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য ২০১৮ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জয়ন্তীয়া ঘাটে ৪৪ কোটি ১৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতু নির্মাণ শুরু করে ঢাকাস্থ মেসার্স সুরমা কনস্ট্রাকশন। কাজ দেখভাল দায়িত্ব পান স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) দিনাজপুর।
চুক্তি অনুযায়ী ২০২১ সালের এপ্রিলে কাজ শেষ করার কথা কিন্তু দুই মেয়াদে সময় বাড়িয়ে কাজের অগ্রগতি হয়েছে মাত্র তিন ভাগের একভাগ অর্থাৎ ৯ স্প্যানের মধ্যে ৩ স্প্যান নির্মান হয়েছে। এমতাবস্থায় আবারও কাজ ফেলে পালিয়ে গেছে ঠিকাদার, ফলে ভোগান্তি ও চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে দুই উপজেলাসহ নীলফামারী জেলার লাখ লাখ মানুষ। স্থানীয়দের অভিযোগ ঠিকাদার ও এলজিইডি’র উদাসিনতার কারণে সেতুর কাজ শেষ হচ্ছে না।
শুষ্ক মৌসুমে স্থানীয়দের ভরসা কাঠ-বাঁশের তৈরি সাঁকো, চলাচলে দিতে হয় টোল। ঝুঁকি নিয়ে পারাপারে দুর্ভোগ-দুর্ঘটনা নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এই এলাকার কৃষি, অর্থনীতি ও জন চলাচলের স্বাভাবিক গতি। বর্ষাকালে সবার ভরসা শ্যালো চালিত নৌকা।
নির্বাহী প্রকৌশলী এলজিইডি দিনাজপুর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ‘গ্রামীণ সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ’ প্রকল্পের আওতায় বীরগঞ্জের পাল্টাপুর ইউনিয়নে মধুবনপুর ও খানসামা উপজেলার খামারপাড়া ইউনিয়নের চেহেলগাজী এলাকায় আত্রাই নদীর জয়ন্তীয়া ঘাটে সেতু নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালে।
দ্রব্যমূল্য বেশি এবং করোনার অজুহাতে দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ রাখে ঠিকাদার। এসবই হচ্ছে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের দুর্নীতির প্রকল্প, লুটপাট ও ভাগাভাগির অংশ বিশেষ।
গতকাল রোববার সকালে সরে জমিনে গিয়ে দেখা যায়, জয়ন্তীয়া ঘাট এলাকায় সেতুর সব পিলার স্থাপন করা আছে। সেতুর জন্য ৯টি স্প্যানের মধ্যে ৩ টি স্প্যান ঢালাই হয়েছে। বাঁকি পিলার শুধু নদীর উপর দাঁড়িয়ে আছে। সেতুর নির্মাণ কাজে ব্যবহার হওয়া কিছু সামগ্রী, একজন ম্যানেজার ও পাহারাদার ছিল, এখন কেউ নেই।
অফিস সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে ঠিকাদার সেতুর বিপরীতে বরাদ্দকৃত ৪৪ কোটি টাকার মধ্যে ২২ কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন।
বীরগঞ্জের পাল্টাপুর ইউপি চেয়ারম্যন মো. তৌহিদুল ইসলাম এবং খানসামা খামারপাড়া ইউপি চেয়ারম্যন আবু বকর সিদ্দিক চৌধুরী বলেন, এই সেতুর অভাবে দুই পাড়ের অসংখ্য মানুষ প্রায় ১৫-২০ কিলোমিটার ঘুরে তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে হয়রানীসহ প্রচুর আর্থিক ক্ষতি হয়।
নৌকায় টোল দিয়ে পারাপার হওয়া অনেকে বলেন, মানুষ, বাইসাইকেল, মোটরসাইকেল, ভ্যানচালক ও ব্যাটারী চালিত চার্জার ভ্যান, সিএনজি এই নৌকা দিয়ে নদীর পশ্চিম তীর বীরগঞ্জের মধুবনপুর, সনকা বাছারগ্রাম, ভোগডোমা, রাজিবপুর, রঘুনাথপুর ও ধুনট গ্রাম। পূর্ব তীরে নেউলা, দুহুশুহ, কায়েমপুর, খামারপাড়া ও জোয়ার গ্রাম খাবসামাার মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হয়।
মধুবনপুর এলাকার ভ্যানচালক আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, সেতু না থাকায় এবং এই পথে যাত্রীর সংখ্যা অনেক হওয়ায় জীবিকার তাগিদে অপেক্ষায় থাকতে হয়। সেতু হলে চলাচলেও যেমন পরিবর্তন আসবে তেমনি আয়-উপার্জনও বৃদ্ধি পাবে।
রোগী নিয়ে বিপাকের পড়া বাসিন্দারা হতাশা প্রকাশ করে বলেন, এই সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার পর সন্তুষ্ট ছিলাম। ভেবেছিলাম, কাজটা হলে উপকার হবে কিন্তু ৭ বছরেও কাজ শেষ হচ্ছে না। বরং ঠিকাদারের লোকজন পালিয়ে গেছে এতে কাজ বন্ধ থাকায় আমাদের ভোগান্তি চরম শিখরে উঠলেও তা লাঘবে কারো নজর নেই।
ক্ষোভ প্রকাশ করে কাঁচামাল ব্যবসায়ী তোতা মিয়া ও সাব্বির হোসেন বলেন, সেতুর অভাবে এখানকার কৃষকদের কৃষি পণ্য পরিবহনে বাড়তি খরচ হয়। তাই দ্রুত সময়ে সেতুর কাজ সমাপ্ত করতে সংশ্লিষ্টদের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।
মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সুরমা এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী আইয়ুব আলী ফোন রিসিভ করেননি। ম্যানেজার ফজলুল হক জানান, আমরা কাজ ছেড়ে দিয়ে চলে এসেছি।
নির্বাহী প্রকৌশলী এলজিইডি (দিনাজপুর) মাসুদুর রহমান ও প্রকৌশলী (বীরগঞ্জ) হুমায়ুন কবিরের সাথে কথা হলে তারা বলেন, কর্মরত ঠিকাদারকে বালিল করে নতুনভাবে পুনরায় টেন্ডার আহ্বান করার প্রস্তুতি চলছে। আগামী ৪-৫ মাসের মধ্যে জয়ন্তিয়া সেতুর কাজ আবারও কাজ শুরু হতে পারে মর্মে আশাবাদী।

Share This