নন্দীগ্রাম (বগুড়া) প্রতিনিধি
নিজেদের নেই কোন সন্তান। বাস করেন টিনের বেড়ার একটি ঝুপরি ঘরে। সেই ঘরে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন অসুস্থ স্বামী-স্ত্রী। চিকিৎসা করানোর মতো সামর্থ্য নেই তাঁদের। অর্ধাহার-অনাহারে কাটছে দিন। বেঁচে থাকাই যেন দুর্বিষহ রফিকুল-রেহেনা দম্পতির। তাদের বাড়ি বগুড়া জেলার নন্দীগ্রাম পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের গুন্দইল গ্রামে।
সাম্প্রতি রফিকুল-রেহেনা দম্পতির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় এ করুণ দৃশ্য। রফিকুল ইসলাম (৪৫) ও রেহেনা খাতুন (৪৫) দম্পতির নিজের বলতে আছে ২ শতক জায়গার উপর একটি ঝুপরি টিনের বেড়ার ঘর। রফিকুল ইসলাম কাঠ মিস্ত্রীর কাজ করতেন। সেই টাকায় সংসার চালাতেন তারা। রেহেনা খাতুন অনেক আগে থেকেই অসুস্থ। চলাফেরা করতে পারে না। দুই বছর আগে রফিকুল ইসলামের হার্ট অ্যাটাক হয়। পরে হাত-পা অসাড় হয়ে যায়। এরপর থেকে মানুষের কাছে হাত পেতে যা পায় তা দিয়ে চলতো সংসার। এখন অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ায় ঘর থেকে বেড় হতে পারছেন না এই দম্পতি। অন্যের দয়া কোন দিন খাওয়া জুটছে আবার কোন দিন না খেয়ে কেটে যায় দিন। টাকার অভাবে করাতে পারছেন না চিকিৎসা।
রফিকুল ইসলাম বলেন, যখন আমি ভালো ছিলাম তখন কাজ করেছি স্ত্রীর চিকিৎসা করিয়েও সংসার চালাতে পারতাম। আমি প্রায় দুই বছর হলো বিছানায় পরে আছি। আমাদের কোন দিন পেটে ভাত যায় আবার কোন দিন না খেয়ে থাকতে হয়। চিকিৎসা কিভাবে করাবো? সরকারি কোন সুযোগ সুবিধা আমরা পাই না। প্রতিবেশীরা আর কয় দিন দেখবে? আল্লাহ আমাদের কোন সন্তান দেয়নি। আগামী দিনগুলো কিভাবে যাবে তা জানি না।
অর্ধাহার-অনাহারে দিন কাটে রফিকুল-রেহেনা অসুস্থ দম্পতির হেডলাইনে জাতীয় পত্রিকাসহ সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত হলে খবরটি চোখে পড়ে যায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসকের। ২ জুলাই (বুধবার) বিকেলে নন্দীগ্রাম পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোসা. লায়লা আঞ্জুমান বানু পৌর প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের নিয়ে ছুটে যান রফিকুল-রেহেনার ভাঙ্গা বাড়িতে। চাল, ডাল, তেল, লবণ, আটা, আলু, পিঁয়াজ, রসুন, মরিচসহ নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করেন। এছাড়াও পরবর্তীতে অন্যান্য সহযোগীতার আশ্বাস প্রদান করেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোসা. লায়লা আঞ্জুমান বানু বলেন, আমি তাদের বিষয়ে জানা মাত্রই পৌর কর্মকর্তাদের নিয়ে রফিকুল-রেহেনা দম্পতির বাড়িতে গিয়ে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছি। ওই সময় উপস্থিত ছিলেন পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা শাহীন মাহমুদ, থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোজাহারুল ইসলাম, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা, সতীশ চন্দ্র কারিগরি স্কুল এন্ড বিএম কলেজের অধ্যক্ষ পরিতোষ চন্দ্র সরকার, নন্দীগ্রাম মডেল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক জাকারিয়া লিটন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক আব্দুর রউফ উজ্জল, সাংবাদিক মামুন আহম্মেদ প্রমুখ।