নববর্ষ উপলক্ষে মাটির খেলনা তৈরিতে ব্যস্ত বীরগঞ্জের মৃৎশিল্পীরা

বীরগঞ্জ(দিনাজপুর)প্রতিনিধি
আর মাত্র একদিন পরই বাঙালিদের পহেলা বৈশাখ উদযাপন উপলক্ষে দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার গ্রামঞ্চলের ছোট কিংবা বড় মেলাসহ নানান উৎসব অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। আর এসব অনুষ্ঠানকে ঘিরে মাটির তৈরি বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা। উপজেলার সাতোর ইউনিয়নের পালপাড়া নামে পরিচিত এলাকায় দেখা যায়, মেলায় ব্যবসা করতে পণ্য তৈরিতে রাতদিন কাজ করে চলেছেন মৃৎশিল্পীরা।
সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বাড়ির আঙ্গিনায় মাটির তৈরি জিনিসগুলো রোদে শুকানোর পর আগুনে পুড়িয়ে নিপুণ তুলির আঁচড়ে বাহারি রঙে রাঙিয়ে তোলা হচ্ছে। তার বলছেন, মাটির তৈরি পুতুল, হাতি, ঘোড়া, ময়ূর, কবুতর, মোরগ, দোয়েলপাখি, মাছ, হাঁড়ি, বাটি, মাটির ব্যাংক, দইয়ের খুটি/বাটিসহ ঐতিহ্যবাহী মাটির গয়না প্রভৃতি চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে। তাই ব্যস্ত সময় করতে হচ্ছে তাদের। চৈত্রের শেষে এখন চলছে তাদের শেষ সময়ের কাজ। কেউ মাটির তৈরি জিনিসপত্র পোড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। অনেকে রং করছে, কোনো কোনো বাড়িতে এখনো নিপুণ হাতে কাঁচা মাটির সমগ্রী তৈরি করা হচ্ছে।
সরেজমিনে পালপাড়ার মৃৎশিল্পী চৈতন্য পাল( ৫৫) বলেন,রঙ দিয়ে এবং বিভিন্ন কারুকাজ করে আমরা এ মাটির তৈরি তৈজসপত্র ও খেলনা তৈরি করি। তবে এই সময়ে আমাদের ব্যস্ততা একটু বেড়ে যায়। তিনি মনে করেন, বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে ঐতিহ্যবাহী এসব পণ্যের বেচাকেনা বাড়লে বছরের লোকসান কাটিয়ে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে। একই এলাকার সন্ধ্যা রানী পাল,স্বপনা রানী,প্রফুল্ল পাল,বিকাশ পাল,নিবার্ণ পাল ও
তাপস পালসহ ২০/২৫ জন মৃৎশিল্পীরা তাদের তৈরি জিনিসগুলো পহেলা বৈশাখের মেলাসহ এলাকার বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করে থাকেন। যদিও প্লাস্টিকের পণ্য বাজার দখল করে নেওয়ায় মাটির তৈরি জিনিসপত্রের চাহিদা কমে গেছে। তারপরও বাপ-দাদার এ পেশাকে এখনো ধরে রেখেছেন তারা। পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রশিক্ষণ পেলে এই শিল্পীকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব বলে মনে করেন মৃৎশিল্পীরা।
এ বিষয়ে সাতোর ইউনিয়নের প্রাণনগর পালপাড়া গ্রামের মৃৎশিল্পী দিপালী রানী (৪০) বলেন, ‘বাড়িভিটা ছাড়া আর কিছুই নাই। পরিবারের সদস্য চারজন, বিয়ে হওয়ার পর ২২ বছর থেকেই স্বামীর সঙ্গে এ পেশায় জড়িত। আগে মাটির আসবাবপত্র ভালোই চাহিদা ছিল, সংসার ভালোই চলত। কিন্তু এখন চাহিদা কম, সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। স্বামী চৈতন্য পাল সংসারের খরচ জোগাতে কাজের পাশাপাশি ভ্যান চালায়।’
এ ব্যাপারে সাতোর ইউপি চেয়ারম্যান মো. জাকির হোসেন রাজা জানান, আমার ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় বেশকিছু মৃৎশিল্পী রয়েছে। তাদের কর্মব্যস্ত আগের মতো নেই বলেই চলে। সাহায্যের বিষয়ে যারা আসে, যতটুকু জায়গা থাকে ততটুকু করা হয়। মৃৎশিল্পীর আমার কাছে এলে অবশ্যই সার্বিক বিষয়ে সহযোগিতা করবো।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার তানভীর আহমেদ বলেন,বীরগঞ্জ উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় কম-বেশি মৃৎশিল্প পরিবার রয়েছে। সব মিলিয়ে এ উপজেলায় প্রায় শতাধিক পরিবার এখনো মৃৎশিল্পের সাথে জড়িত। এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে প্রশাসনের সহযোগিতা চাওয়া হলে লিখিত আবেদন করতে হবে। আমরাও চাই, তাদেরকে সরকারি সুযোগ সুবিধা দেয়া হোক।