শনিবার, ৪ঠা জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

নিখোঁজের ১৭ বছর পর ভারত থেকে দেশে ফিরলেন বীরগঞ্জের সাদেকুল


বীরগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধি

নিখোঁজের ১৭ বছর পর নিজ বাড়ি দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার দলুয়া গ্রামে ফিরে এসেছেন সাদেকুল ইসলাম (৪২)। তার ফিরে আসায় গ্রামের মানুষের মধ্যে চলছে নানা ধারণের কৌতুহল। তাকে এক নজর দেখতে বিভিন্ন এলাকার মানুষ ছুটে আসছেন তার বাড়িতে। পরিবার, আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী, বন্ধুবান্ধবকে কাছে পেয়ে খোশগল্পে মেতে উঠছেন তিনি। স্মৃতি মনে পড়ায় আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়ছেন সাদেকুল ইসলাম এবং তার পরিবারের লোকজন।
১৭ বছর আগে নিখোঁজ হওয়ার পর কোন সন্ধান পায়নি পরিবার। এতো বছর পর নিখোঁজ সাদেকুলকে আবারও ফিরে পেয়েছে তার পরিবার। এই দীর্ঘ সময় ভারতে ছিলেন তিনি। সেখানে মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হন। পরবর্তীতে তাকে একটি মানসিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়।
এই সময়ে তার কোনো সন্ধান না পেয়ে পরিবার ধরে নিয়েছিল তিনি আর জীবিত নেই। কিন্তু আট মাস আগে বীরগঞ্জ থানার মাধ্যমে জানতে পারেন সাদেকুল ভারতের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
২০০৭ সালে নিখোঁজ হন তিনি। ২০১৫ সালের ১১ জুলাই থেকে এবছরের ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত দীর্ঘ নয় বছর কলকাতার একটি মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
২৪ ডিসেম্বর বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে আসেন তিনি। অবশেষে দুই দেশের সরকারি-বেসরকারি প্রচেষ্টার ফলে ২৫ ডিসেম্বর সাদেকুল ইসলাম তাঁর নিজ জন্মভূমি দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার সাতোর ইউনিয়নের দলুয়া গ্রামে ফিরে আসেন। সাদেকুল ইসলামের বাবা মো. আকবর আলী একজন কৃষক এবং মা  সিদ্দিকা বেগম গৃহিণী। ৪ ভাই, ১ বোনের মধ্যে সবার বড় সাদেকুল ইসলাম।
২০০০ সালে পাশের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ের বেগুনবাড়ী কোটাপাড়া গ্রামে বিয়ে করেন সাদেকুল। বিয়ের পর এক ছেলের বাবা হন। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে পরিবারের সঙ্গে সুখেই কাটছিল তাদের পরিবার। কিন্তু হঠাৎ ২০০১ সালে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। বাড়তে থাকে তাঁর এ সমস্যা।
এ পরিস্থিতিতে স্ত্রী দুই বছরের সন্তান সঙ্গে নিয়ে তাঁকে ছেড়ে চলে যান বাবার বাড়ি। সাদেকুলের পাশে এসে দাঁড়ান পরিবারের লোকজন। তাঁকে সুস্থ করে তোলার সর্বাত্মক চেষ্টা চালান। একপর্যায়ে ২০০৭ সালে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হন সাদেকুল। এরপর সম্ভাব্য সব স্থানে খোঁজ করেও তাঁর কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। অপেক্ষা করতে করতে আর জীবিত নেই ধরে নেয় পরিবার। সাদেকুল ইসলাম জানান, নিখোঁজ হয়ে ভারতে যাওয়ার বিষয়টি তাঁর মনে পড়ে না। তবে তিনি যখন কিছুটা সুস্থ হন তখন জানতে পারেন তিনি কলকাতায় এক মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সেখানে সুস্থ হলে বাড়ির ঠিকানা মনে পড়ে তাঁর। শুক্লা নামে হাসপাতালের এক কর্মকর্তার সঙ্গে তাঁর সখ্য গড়ে ওঠে। তাঁকে বাড়ির ঠিকানা জানালে তিনি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে দেশে ফেরার ব্যবস্থা করেন। আকবর আলী জানান, মেধা না থাকায় চতুর্থ শ্রেণি লেখাপড়ার পর তাঁর সঙ্গে সংসারের কাজে যোগ দেন সাদেকুল। এরপর বিয়ে করে ভালোই দিন কাটছিল। কিন্তু মানসিকভাবে অসুস্থ হওয়ার পর নিখোঁজ হন।

Share This