পীরগঞ্জের বালুচরে ভুট্টা মাড়াইয়ে ব্যস্ত চাষিরা

পীরগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি
রংপুরের পীরগঞ্জে চলতি মওসুমে ভুট্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। চাষিরা নতুন ভুট্টা আহরন ও মাড়াইয়ে বর্তমানে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ধান-ভুট্টা ও সবজি চাষের জন্য খ্যাত এই উপজেলার করতোয়া নদীর বালুচর। করতোয়া নদীর দু’ধারে দিগন্ত বিস্তৃত শুধুই ভুট্টার ক্ষেত। চলতি মওসুমে লক্ষ্যমাত্রার চাইতে অধিক পরিমাণ জমিতে ভুট্টা চাষ করা হয়েছে। ফলনও ভালো হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়া ও আধুনিক কৃষি প্রযুক্তিতে কৃষকদের আগ্রহ সৃষ্টি হওয়ায় স্বল্প খরচে যথা সময়ে কৃষকরা এবার ভুট্টা মাড়াই শুরু করেছেন।
কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী চলতি মওসুমে ৮ হাজার ২ শত হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ করা হয়েছে। একটি পৌরসভা এবং ১৫টি ইউনিয়নে ৮৭০ জন কৃষককে বিনামূল্যে প্রণোদণার সার ও বীজ বিতরণ করা হয়েছে। উপজেলার করতোয়া নদীর চরাঞ্চলের অনেক চাষি বলছেন, অন্যান্য ফসলের তুলনায় বেশি লাভ ও আবাদের পদ্ধতি সহজ হওয়ার কারণে কৃষকেরা ভুট্টা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। চতরা ইউনিয়নের পার কুমারপুর গ্রামের ভুট্টা চাষি আব্দুল মমিন, সুজা মিয়া জানান, ভুট্টা চাষে লাভ বেশি হয়, এতে পরিচর্যাও কম । চরে ভুট্টার ফলন বেশি হয় এবং মাড়াই প্রক্রিয়াও অনেক সহজ। এছাড়াও একই জমিতে সাথী ফসলও চাষ করা যায়। মূলত এসব সুবিধার কারণেই কৃষকরা ভুট্টা চাষে এখন বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। একই এলাকার আজাহার আলী জানান, শীত মওসুমের শুরুতেই এবং বালুচর থেকে পানি নেমে যাবার সাথে সাথেই অক্টোবর-নভেম্বর মাসে ভুট্টার বীজ রোপণ করা হয় আলুর জমিতে। মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে ভুট্টাঘরে ওঠে। চর এলাকায় এখন বেশির ভাগ জমিতেই ভুট্টার চাষ হচ্ছে। উপজেলার বাটিকামারী গ্রামের চাষি মোনাজ্জল হোসেন জানান, কিছুদিন আগে সব ধরনের ফসলের চাষাবাদ করা হতো। চর এলাকায় বালুমাটিতে অতিরিক্ত সেচ দেয়ার প্রয়োজন হয়। আগাছা পরিস্কার করতে শ্রমিক খরচও বেশি হয়। ভুট্টা চাষে এসব খরচ তুলনামূলক কম। তাই এলাকার চাষিরা ভুট্টা চাষে ঝুঁকছেন। চতরা হাটের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আতিয়ার রহমান বলেন, সুবিধা মতো চাষিরা জমিতেই ভুট্টা মাড়াই করে থাকে। আমরা ভুট্টা কিনে চাতালে নিয়ে রোদ দিয়ে বাছাই করে মোকামে পাঠাই। প্রতি মণ ভুট্টা ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকায় কেনা হচ্ছে। অল্প সময়ের মধ্যেই ব্যবসায়ীরা পুরোদমে ভুট্টা কিনতে মাঠে নেমে যাবে। তখন হয়তো বাজার আরও বেশি হবে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবীদ সাদেকুজ্জামান জানান, বর্তমানে অনেক কৃষক ভুট্টার সঙ্গে সাথী ফসলেরও চাষ করছেন। আলুর জন্য আগেই জমিতে সার দিয়ে থাকেন। ওই জমিতে ভুট্টা চাষে সার কম লাগে। আবার ভুট্টার বীজ রোপণের আগেই অনেকে লালশাক, মুলা বা ফুলকপির মতো সবজির বীজও রোপণ করেন। ভুট্টার চারা মোটামুটি বড় হতে হতে এসব সবজি তুলে নেয়া যায়। এভাবে অনেকেই অধিক লাভবান হচ্ছেন। এছাড়াও আমাদের কৃষি বিভাগের লোকজন মাঠে চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।