পীরগঞ্জে গো-খাদ্যের সঙ্কটে ওজন দরে বিক্রি হচ্ছে খড়!

পীরগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি
রংপুরের পীরগঞ্জে গো-খাদ্যের চরম সঙ্কট দেখা দিয়েছে। আমন ধান কাটতে এখনও বাকি প্রায় দুইমাস। এতে খড়ের যোগান কমে যাওয়ায় বর্তমানে ওজন করে বিক্রি হচ্ছে খড়। আগে যেখানে খড়ের গাদা বা শতকরা আঁটি ধরে বিক্রি হতো, এখন সেখানে দাঁড়িপাল্লা/ডিজিটাল মিটার দিয়ে কেজি বা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে খড়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পীরগঞ্জ পৌর এলাকা ও আশপাশের বাজারগুলোতে খড় ছোট ছোট ভাগে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি খড় ১৪ থেকে ১৮ টাকা, আর এক মণ খড় বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ থেকে ৭০০ টাকায়। উপজেলার শানেরহাট ইউনিয়নের কৃখশ গাজী রহমান জানান, আগে খড় গাদা ধরে কিনতাম দুই’শ থেকে আড়াই’শ টাকায়। মাপের তো বালাই ছিলনা। এবার কেজি দরে কিনতে হচ্ছে, দামও দ্বিগুণ। গরু পালন করাই তো মুশকিল হয়ে গেছে। গরু, ছাগল পালনের ওপর নির্ভরশীল অনেক পরিবার এখন বিপাকে পড়েছে। খামারী নুরনবী মন্ডল জানান, খড় হচ্ছে গরুর প্রধান খাদ্য। খড় ছাড়া গরু বাঁচানো কঠিন। খড়ের দাম যদি এভাবে বাড়তেই থাকে, তাহলে খামার চালানো আর সম্ভব হবেনা। গরু লালন-পালনের খরচ বেড়ে গেলে আমিষের বাজার ওচড়া হবে। বিক্রেতারা বলছেন, সরবরাহ কম থাকায় তারা গাদায় বিক্রি করলে লোকসান গুনতে হয়। তাই মণ বা কেজি দরে বিক্রি করছি। সব খরচ মিটিয়ে কিছুটা লাভ থাকে।
শানেরহাটের খড় ব্যবসায়ী কায়রো মিয়া জানান, খড়ের যোগান কমে গেছে, আবার অনেকেই গরুর জন্য বেশি করে মজুদ করছেন। তাই খড় এখন ওজন করে বিক্রি করতে হচ্ছে। উপজেলার পাঁচগাছী ইউনিয়নের জাহাঙ্গীরাবাদ এলাকার খড় ব্যবসায়ী মোকছেদ মিয়া জানান, দিনাজপুর জেলার নবাবগঞ্জ, বিরামপুর ও হাকিমপুর উপজেলার খড় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ৫০০ টাকা মণ দরে ক্রয় করে ৬০০/৭০০ টাকা দরে বিক্রি করছি। এলাকায় মানুষের চাহিদার কারণে দূর থেকে খড় নিয়ে আসি। অনেকেই খড়ের ব্যবসা করতে চায়না। কারণ এখানে অনেক শ্রম দিতে হয়।
উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, উপজেলায় প্রায় ২৪ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছিল। ধান কাটার সময় আগাম বর্ষা শুরু হওয়ায় ধান কাটামাড়াই করে শুধু ধান সংগ্রহ করেছে। ফলে অধিকাংশ খড় জমিতেই পঁচে গেছে। সে কারণেই গো-খাদ্য খড়ের কিছুটা সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় নিবন্ধিত ৪৫টিসহ ১ হাজার ৩৫০টি গরুর খামার রয়েছে। এসব খামারে গরুর সংখ্যা প্রায় ৩ লাখ ১০ হাজার।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সুমন আহমেদ জানান, আগাম ধান কাটা শুরু হলে খড়ের যোগান কিছুটা বাড়বে। তবে দীর্ঘমেয়াদে খড় সংরক্ষণ ও বিকল্প গোখাদ্যের ব্যবস্থা না করলে সমস্যা বাড়তেই থাকবে। পীরগঞ্জে খড়ের সঙ্কট শুধু কৃষক বা খামারীদের নয়। গোটা বাজার ব্যবস্থার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। খড় এখন আর শুধু ধানের উপজাত নয়, বরং চাল-ডাল-আটার মতো কেজি ধরে বিক্রি হওয়া এক মূল্যবান পণ্য।