বুধবার, ৩০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

পীরগঞ্জে ছড়িয়ে পড়ছে লাম্পিস্কিন , আতঙ্কিত খামারীরা

পীরগঞ্জ (রংপুর)
রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলায় প্রায় প্রতিটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে ‘লাম্পিস্কিনডিজিজ’। প্রতিদিন নতুন নতুন গরু আক্রান্ত হচ্ছে লাম্পিতে। এলাকার প্রায় গোয়াল ঘরেই এ ভাইরাস ঢুকে পরায় সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে দুশ্চিন্তায় আতঙ্কিত এবং হতাশায় ভুগছেন কৃষক-খামারীরা।

জানা যায়, পল্লী অঞ্চলের কৃষকরা সারাবছর ধরে ঋণ নিয়ে ফসলের চাষাবাদ করে। আর সেই ঋণের বোঝা হালকা করে গোয়াল ঘরের গরু। এ উপজেলার অনেক কৃষক চাষাবাদের পাশাপাশি গরু পালন করে এবং সেটার উপর নির্ভর করেই চলে। তারা গরুর এ রোগের প্রতিকারে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ।
উপজেলার চতরা ইউনিয়নের বড়ভগবানপুর গ্রামের মোয়াজ্জেম হোসেন, সুন্দরপুর গ্রামের হাবিল মিয়া, সোনাতলা গ্রামের নওশাদ আলী, হোসেনপুর গ্রামের শমসের আলী, শামসুল আলম, পাচঁগাছী ইউনিয়নের জাহাঙ্গীরাবাদ এলাকার মেহেদুল ইসলাম, অনন্তপুর গ্রামের আলমগীর হোসেন, মিঠিপুর ইউনিয়নের নুরুজ্জামান মিয়া, পৌরসভার পচাকান্তর গ্রামের মোশারফ হোসেনসহ আরো অনেকের উন্নত জাতের বাছুর গরু মারা গেছে। এছাড়াও উপজেলায় প্রায় দুই শতাধিক গরু লাম্পিস্কিন রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। তারা জানান, গত বছরও এই রোগের আক্রমণে শতশত গরু মারা গেছে। সেই ক্ষতই শুকায়নি, আবারও ঘুরে এলো সেই ভাইরাস। লাম্পিস্কিন ডিজিজ এতোটাই ভয়াবহ কোন ঔষধেই কাজ হচ্ছেনা। ভালো গরু সন্ধ্যায় গোয়াল ঘরে উঠানো হয়, সকালে গিয়ে দেখা যায় সমস্ত শরীরে ফুলা এবং খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাটে। ফুলে যাওয়া স্থানগুলো কয়েক দিন পরে চামড়া উঠে যায় এবং ক্ষতস্থান থেকে পুঁজ বা রক্ত বের হয়। পল্লী চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী মলম, তেল, পাউডার জাতীয় কেন্ডুলা ব্যবহার করা হয়। কিন্তু তারপরেও অনেক গরু মারা যাচ্ছে। বিশেষ করে বিদেশি জাতের ছোট বাছুরগুলো এই রোগে আক্রান্ত হয়ে বেশি মরছে। এই রোগ প্রতিরোধের জন্য গ্রাম মহল্লায় কৃষক এবং খামারীদের সাথে উঠোন বৈঠক করলে হয়তো কিছুটা সুবিধা হতো কিন্তু উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের লোকজনকে চোখেও দেখে না গ্রামের কৃষক। উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর দাবি করছেন গ্রামের পশু চিকিৎসকদের ভুল চিকিৎসার কারণে অনেক গরু মারা যাচ্ছে।
ভুক্তভোগী কৃষকরা আরো জানান, গ্রামে হাতুড়ে কিছু চিকিৎসক রয়েছে, তারা সাধারন মানুষকে বোকা বানিয়ে গরুর দুই পাশে ইঞ্জেকশন পুশ করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এছাড়াও এলাকায় কিছু হোমিও চিকিৎসক আছে, তারাও এক হাতে টাকা আরেক হাতে পানিপড়া দিয়ে টাকা কামাচ্ছে। এসব চিকিৎসার ব্যপারে উপজেলা প্রাণীসম্পদ অফিসের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রচারের প্রয়োজন অথচ তাদের দেখা মেলেনা মাঠ পর্যায়ে।
উপজেলা প্রাণিস্পদ কর্মকর্তা ডা. ফজলুল কবির এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, লাম্পিস্কিন রোগের চিকিৎসার জন্য সরকার কাজ করছে, হয়তো কিছু দিন সময় লাগবে। কোন গরু লাম্পিস্কিন রোগে আক্রান্ত হলে গরুটিকে সবসময় মশারীর ভিতর রাখতে হবে এবং গোয়াল ঘর পরিষ্কার রাখতে হবে। তবে এই রোগটি মশা মাছি থেকে ছড়ায়। লাম্পিস্কিন ডিজিজ নিয়ে আমরা সাধারণত খামারিদেরকে পরামর্শ দিচ্ছি এবং সীমিত লোকবল নিয়েই কৃষকের পাশে আছি।

Share This