মো.কামরুল হাসান জুয়েল পীরগঞ্জ(রংপুর)
রংপুরের পীরগঞ্জে প্রতিবন্ধী, বয়স্ক ও বিধবাদের ভাতার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে উপজেলার সাবেক সমাজসেবা কর্মকর্তা (বর্তমান রংপুর শহর শাখায় কর্মরত) আরিফুর রহমানের বিরুদ্ধে। তিনি ব্যক্তিগত মোবাইলসহ বিভিন্ন নম্বর ব্যবহার করে এ অনিয়ম করেছেন।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, এর আগেও ওই কর্মকর্তার নেতৃত্বে ‘নগদ অ্যাকাউন্ট’ খোলার সময় এজেন্টদের যোগসাজশে প্রকৃত ভাতাভোগীদের নম্বরের জায়গায় বিশেষ একটি সিন্ডিকেটের নম্বর এন্ট্রি করে অসংখ্য ভাতাভোগীর টাকা ট্রান্সফার করে নিয়েছেন।২০২৪-২৫ অর্থবছরে বরাদ্দের অর্থ প্রথম কিস্তির প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা বিতরণ হয় চলতি বছর নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে। দীর্ঘ তিন মাস অপেক্ষার পর টাকা না পাওয়া প্রতিবন্ধী, বিধবা, বয়স্ক ভাতাভোগী উপজেলা সমাজসেবা অফিসে গিয়ে জানতে পারেন সমাজসেবার ওয়েবসাইট হ্যাকিং করে তাদের নগদ অ্যাকাউন্টের টাকা হ্যাকাররা নিয়ে গেছে। এ খবর শুনে ভাতার টাকা তুলতে আসা অসহায় চার শতাধিক সুবিধাভোগী কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। সমাজসেবা অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, পীরগঞ্জ উপজেলায় বিভিন্ন উপকারভোগীর সংখ্যা ১০ হাজার ২৯৫ জন।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, পীরগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের মাধ্যমে অনগ্রসর ভাতাভোগীদের মধ্যে প্রতিবন্ধী ভাতার চার শতাধিক জনের মোবাইল নম্বর পরিবর্তন করে উপজেলা সমাজসেবা কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে সেলিনা আক্তার পপি, বাচ্চু মিয়া, রিপু মিয়া নামের তিনজন প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীর নগদ অ্যাকাউন্টের নম্বর পরিবর্তন করে সাবেক উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আরিফুর রহমানের ব্যক্তিগত নম্বরের অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করা হয়েছে। পাশাপাশি চার শতাধিক প্রতিবন্ধীসহ কয়েকশ ভাতাভোগীর টাকাও মোবাইল নম্বর পরিবর্তন করে ট্রান্সফার করে নেন সমাজসেবা অফিসের একটি চক্র। বর্তমান ও সাবেক সমাজসেবা কর্মকর্তা এবং বড়দরগাহ ও শানেরহাট ইউনিয়ন সমাজকর্মী আলমগীর হোসেনের যোগসাজশে নম্বর পরিবর্তন করে চার শতাধিক প্রতিবন্ধীর ভাতা আত্মসাৎ করা হয়েছে মর্মে অভিযোগ উঠেছে। প্রতিবন্ধী ছাড়াও উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের আওতাভুক্ত বয়স্ক, বিধবাসহ অন্যান্য ভাতাভোগীদের টাকাও মোবাইল নম্বর পরিবর্তন করে আত্মসাৎ করে চক্রটি। নিজে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে বর্তমান সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, তদন্ত করে দেখতে হবে এ অনিয়ম কার আমলে হয়েছে। ৫ আগস্ট পরবর্তী আমি ছাড়াও আরও দুজন এ চেয়ারে বসেছেন। ২০১৯ সালের ৩০ জুলাই থেকে ২০২৪ সালের ১০ আগস্ট পর্যন্ত দায়িত্বে ছিলেন আরিফুর রহমান (বর্তমান রংপুর শহর শাখায় কর্মরত সমাজসেবা কর্মকর্তা)।২০২৪ সালের ১১ আগস্ট থেকে ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এক মাস অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন মিঠাপুকুর উপজেলার বর্তমান কর্মকর্তা আব্দুল হামিদ। গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে আমি কর্মরত আছি।
সদর ইউনিয়নের বারাইপাড়া গ্রামেরদৃষ্টি প্রতিবন্ধী রিপু মিয়া জানান, মুই আগে দুবার ভাতা পাইছো, কিন্তু এবার পাও নাই। সমাজসেবা স্যারের কাছে গেলে উনি মোকে ভোটার আইডির ফটোকপি জমা দিবার কইছে। মুই সেটা জমা দিছো। মোর ভাতার ট্যাকা আসে নাই ক্যান? জানবার চাইলে স্যার কইলো, মোর ট্যাকা কেটা বা নিয়া গেইছে (হ্যাকাররা হ্যাক করে নিয়া গেছে)। একই এলাকার প্রতিবন্ধী বাচ্চু মিয়া বলেন, মোর ভাতার ট্যাকা এবার নাকি আসেনাই, মুই পীরগঞ্জ সমাজসেবা অফিসোত গেইলেআলমগীর স্যার (ইউনিয়ন সমাজকর্মী) কইলো, ধৈর্য্য ধরো, আপনেট্যাকা পাইমেন। কিন্তু পরে যায়া শুননু, মোর ট্যাকা কেটায় তুলি নিয়া গেইছে। মোর ট্যাকা মানষের মোবাইলোত ক্যামন করি যায় বাহে?
উপজেলার বড়দরগাহ ও শানেরহাট ইউনিয়ন সমাজকর্মী আলমগীর হোসেন জানান, অফিসিয়াল সফটওয়্যার থেকে ভাতাভোগীদের নম্বর পরিবর্তন করে অন্য নম্বরে টাকা ট্রান্সফার করা হয়েছে। কে নম্বর পরিবর্তন করেছে, তা আমি জানি না। বর্তমানে রংপুর শহর শাখা সমাজসেবা কার্যালয়ের কর্মকর্তা আরিফুর রহমান বলেন, আমি পীরগঞ্জে থাকাকালীন অনেক নম্বর পরিবর্তন হয়েছে। তবে আমি কোনো অনিয়ম করিনি। আর আমার ব্যবহৃত তিনটি নম্বর কে বা কারা প্রতিবন্ধী ভাতা উপকারভোগীদের অ্যাকাউন্টে রিপ্লেস করেছে, তা আমি জানি না। আমাকে ফাঁসানোর জন্য এটা করা হতে পারে। এ কাজ কে করেছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং এ ব্যাপারে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। রংপুর জেলা সমাজসেবা কার্যাললয়ের উপ-পরিচালক আব্দুল মতিন বলেন, বিষয়টি আমি অবগত হয়ে অধিদপ্তরে জানিয়েছি। এ মাসের মধ্যেই একটি এক্সপার্ট টিম আসবে। তদন্তে বেরিয়ে আসবে, আসলে এ ঘটনা কে ঘটিয়েছে। তবে ভাতাভোগীদের নম্বর পরিবর্তনের এক্সেস শুধুমাত্র উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার কাছেই থাকে। আর অন্য কোথাও থাকে না। আমার জানামতে ২০০ থেকে ২৫০ জন ভাতাভোগীর মোবাইল নম্বর পরিবর্তন হয়েছে।