নিজস্ব প্রতিবেদক
দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে সরকার পতনের পর ৭ একর জমিতে লাগানো ধান কেটে নেয়ার মাধ্যমে জমি দখল করার অভিযোগ উঠেছে। এর প্রতিবাদে মানবন্ধন ও স্মারকলিপি দিয়েছে ভুক্তভোগী ৮টি পরিবারের লোকজন।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কে ফুলবাড়ী পৌর শহরের নিমতলা মোড়ে ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন করেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা। মানববন্ধন শেষে জমির ফসল রক্ষাসহ নিরাপত্তার দাবিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রেরণ করেন।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন ভুক্তভোগী ফুলবাড়ী উপজেলাধীন ৩নং কাজিহাল ইউনিয়নের রশিদপুর গ্রামের বাসিন্দা আনছারুল ইসলাম, নুর ইসলাম, ইউনুছ আলী, আলি হোসেন, রুখসানা বেগম, সাদ্দাম হোসেন, মেহেরুন নেছা ও মকছেদুল হক।
ভুক্তভোগী আনছারুল ইসলাম বলেন, আমরা ৮ জন ভুক্তভোগী পর্যায় ক্রমে ২০২০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত একই এলাকার সিরাজুল হকের কাছ থেকে উপজেলার নিরোট্টি মৌজার জেএল নং ১৫৩ এর ৬.৭০ একর জমি ক্রয় করে নিজ নিজ নামে খাজনা খারিজ করে চাষাবাদ করে আসছি। কিন্তু গত ২০২৪ সালের ৫ আগষ্টের সরকারের পটপরিবর্তনের সুযোগ কাজে লাগিয়ে উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক তোফায়েল হোসেন চৌধুরী, কাজিহাল ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড যুবদলের সেক্রেটারি মো. নয়ন ও তাদের লোকজন নিয়ে গত আমন মৌসুমে আমাদের ক্রয়কৃত জমির পাকাধান জোরপূর্বক কেটে নিয়ে গেছে। আমরা থানা পুলিশ, এমনকি ৯৯৯এ ফোন করেও ধান রক্ষা করতে পারিনি। পরে মামলা করতে থানায় গেলেও পুলিশ মামলা নিতে না চাইলে সবার পরামর্শে রুখসানা বেগম বাদী হয়ে গত ২৪ নভেম্বর দিনাজপুর আদালতে উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক তোফায়েল হোসেন চৌধুরী, ওয়ার্ড যুবদল নেতা নয়ন সহ ১২ জনের নামে মামলা করেন। মামলার কিছুদিন পর তোফায়েল হোসেন চৌধুরী ইন্তেকাল করলে মামলাটি নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়।
এসময় কান্না জড়িত কন্ঠে তিনি বলেন, সেই মামলায় কেউ গ্রেফতার হয়নি। তাদেরকে আদালতেও ডাকেনি। এরই মধ্যে আমাদের ৭ একর সহ একই এলাকায় আমাদের বন্ধকী মোট ১৩ একর জমির ধান পাকতে শুরু করেছে। আবারও তারা জমির ধান কাটার পায়তারা করছে। প্রতিনিয়তই জমিতে যেতে হুমকি ধামকি দিচ্ছে। আমরা নিরুপায়।
বিভিন্ন সময় কাজিহাল ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি আক্তার হোসেন তাদেরকে নামমাত্র মূল্যে জমি রেজিষ্ট্রি অথবা বিনামূল্যে অর্ধেক জমি লিখে দিতে বলেন। অন্যথায় বিভিন্ন মামলায় পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দিবেন বলে হুমকিও দেন। আমাদের অপরাধ কী তা আমরা জানিনা। তবে বিভিন্ন ভাবে আমাদেরকে আওয়ামী লীগের লোক বলে প্রচার করছে তারা। অথচ আমরা আওয়ামী লীগের কোন পদেও নেই।
এ বিষয়ে জানতে কাজিহাল ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড যুবদলের সেক্রেটারী নয়ন হোসেন এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, মূলত আমরা এই জমি মরহুম তোফায়েল হোসেন চৌধুরীর কাছে লিজ নিয়ে আবাদ করেছি। ওই ৮জনের সাথে জমি নিয়ে বিরোধ ছিলো বিএনপি নেতা তোফায়েল হোসেন চৌধুরীর। আমরা আমন ধান কেটেছি এটা সত্য, তবে ইরি ধান আমরাই রোপণ করেছি। অভিযোগকারীরা বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগের ক্ষমতার অপব্যবহার করে তাদের নামে জমি লিখে নিয়েছিলো।
ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি আক্তার হোসেন বলেন, অভিযোগকারীরা আওয়ামী লীগের দোসর। তারা নাম মাত্র মূল্যে চাপ দিয়ে বিএনপির মরহুম নেতা তোফায়েল হোসেন চৌধুরীর চাচার জমি লিখে নিয়েছেন। তবে তাদের সাথে আমার এ বিষয়ে কোন কথা হয়নি।
এ ব্যাপারে উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মরহুম তোফায়েল হোসেন চৌধুরী’র ছেলে আব্দুল্লাহ আল আরাফাত বলেন, ওই জমি আমাদের পৈতৃক সম্পত্তি। উপজেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক কাজিহাল ইউপি চেয়ারম্যান মানিক রতন ক্ষমতার অপব্যবহার করে তার দোসরদেরকে কৌশলে এসব জমি নিয়ে দিয়েছে। এই দোসরদেরকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করছে মানিক রতন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফুলবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি একেএম খন্দকার মুহিব্বুল বলেন, জমি নিয়ে দুপক্ষ পাল্টাপাল্টি অভিযোগ দিয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করা হয়েছে। জমিজমার বিষয়ে আমাদের কিছু করার নেই। এটি আদালতের ব্যাপার, আদালত দেখবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইসাহাক আলী বলেন, রশিদপুর গ্রামের কয়েকটি পরিবারের সদস্যরা একটি স্মারকলিপি প্রদান করেছে, যা যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বরাবর প্রেরণ করা হবে।