নিজস্ব প্রতিবেদক
গত কয়েকদিন ধরে মৃদু তাপদাহ বিরাজ করছে দিনাজপুরে। জেলার ফুলবাড়ী উপজেলায় তাপপ্রবাহে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। সড়ক ও বাজরে লোকসমাগম কমেগেছে। অতিরিক্ত প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘরের বাইরে বের হচ্ছে না। তাপপ্রবাহের কারণে সবচেয়ে বেশি সদস্যায় পড়েছে নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ, তাদের আয়-উপার্জনে ভাটা পড়েছে। অন্য বছরগুলোতে এসময় বৃষ্টি দেখা মিললেও এবার এখনও তেমন বৃষ্টির দেখা মেলেনি এ উপজেলায়।
আবওহাওয়া আফিস বলছে, কয়েকদিন ধরে চলা তাপপ্রবাহের মধ্যে গত বুধবার থেকে অধিক তেজ দেখা গেছে সূর্যের। যা ওইদিনে দিনাজপুরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ৩ টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৮.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বর্তমানে এ জেলার উপর দিয়ে একটি মৃদু তাপদাহ বিরাজ করছে।
এদিকে তাপদাহের এ সময়ে খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হওয়া এবং বেশি বেশি পানি পান করার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, তিব্র গরমে তৃষ্ণা মেটাতে ফুটপাতের দোকান গুলো থেকে শরবত, আখের রস, ডাবের রস পান করছে অনেকে। প্রচণ্ড রোদ থেকে রক্ষা পেতে ছাতা মাথায় দিয়ে চলাফেরা করছে। কেউ কেউ গাছের ছায়ায় শরীর জুড়িয়ে নিচ্ছে। তাপদাহে বেশি কষ্টে পড়েছে খেটে খাওয়া দিনমজুর, রিকশা-ভ্যানচালক ও কৃষকরা। কিছু কিছু এলাকায় ফেটে চৌচির হয়ে গেছে ফসলি ক্ষেত। ঝরে পড়ছে আম-লিচুর মুকুল।
এছাড়াও গরমে অতিষ্ঠ হয়ে শিশু-কিশোররা নদী-নালা, খাল-বিল ও ডোবার পানিতে দলবেঁধে গোসল করছে। শরীরকে ঠাণ্ডা রাখতে পানিতে সাঁতার কাটতে দেখা গেছে তাদের।
পৌর শহরের জিএম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের পুকুরে গোসল করা শিশু-কিশোরদের মধ্যে কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা গরমে অতিষ্ঠ হয়ে শরীরকে ঠাণ্ডা রাখতেই পুকুরে সাঁতার কাটছে। তাদের মধ্যে সাজু, লিটন, মনোয়ার জানায়, আমাদের বাড়ির খুব কাছেই এই পুকুর। তাই আমরা প্রতিদিন এখানে আসি এবং সাঁতার কাটি। আজকে আমরা সবাই মিলে এসেছি সাঁতার কাটতে। প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকা থেকে শিশু-কিশোররা এই পুকুরে সাঁতার কাটতে আসে বলেও জানায় তারা।
রিক্সা চালক ফিরোজ হোসেন বলেন, রোদের যে তাপ রাস্তায় চলাই মুশকিল হয়েগেছে, ঘনঘন তৃষ্ণা লাগছে। অতিরিক্ত গরমের কারনে মানুষ খুব বেশি বাড়ির বাইরে বের হচ্ছেনা। এ জন্য আমাদের ইনকামও কমে গেছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মশিউর রহমান বলেন, তাপদাহের কারনে বিশেষ করে ডাইরিয়া রোগ বেশি হচ্ছে, এছাড়া ঠান্ডাজনিত রোগ এবং সর্দি-কাশি জ্বর হচ্ছে। এসময় বেশি বেশি পানি পান করতে হবে। অতিরিক্ত প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হওয়াই ভালো।
দিনাজপুর আবওহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার দুপুর ৩ টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৮.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বর্তমানে এ জেলার উপর দিয়ে একটি মৃদু তাপদাহ বিরাজ করছে। তাপমাত্রা ক্রমাগত বৃদ্ধির ফলে দিনাজপুর জেলার উপর দিয়ে বহমান মৃদু তাপদাহটি বর্তমানে মৃদু থেকে মাঝারি তাপদাহে রূপ নিয়েছে। গতকাল বুধবার দিনাজপুরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৭.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আকাশে মেঘ না থাকায় সুর্যের তাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাতাসে জলীয়বাস্প বৃদ্ধির কারনে তিব্র গরম অনুভুত হচ্ছে। দুদিনের মধ্যে কিছু কিছু স্থানে বৃষ্টি হতে পারে, বৃষ্টি হলেই তাপমাত্রা কিছুটা কমে আসবে।