ফুলবাড়ীতে শুরু হয়েছে ২০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী বুড়া চিন্তামন ঘোড়ার মেলা

নিজস্ব প্রতিবেদক
দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে শুরু হয়েছে ২০০ বছরের বেশি সময়ের ঐতিহ্যবাহী বুড়া চিন্তামন ঘোড়ার মেলা। এ মেলায় দেশের বিভিন্নস্থান থেকে ঘোড়া নিয়ে এসেছেন ব্যবসায়ীরা। মেলাকে কেন্দ্র করে পসরা সাজিয়ে বসেছে হরেক রকম মুখরোচক খাবারের দোকান, শিশুদের জন্য চরকী ও খেলনার দোকান। দর্শনার্থীর পদচারণায় মুখোরিত হয়ে উঠেছে মেলা প্রাঙ্গণ।
আজ শনিবার দুপুর ১ টায় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে উপজেলার আলাদীপুর ইউনিয়নের মেলাবাড়ী এলাকায় এ মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। এরপরই ঘোড়া বেচাকেনার জন্য ছাপা (রশিদ) বের হয়। মেলা কমিটির সভাপতি শিক্ষক আফতাবুজ্জামানের সভাপতিত্বে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক আহম্মেদ চৌধুরী খোকন, প্রধান মেহমান হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, দিনাজপুর জেলা বিএনপি’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ফুলবাড়ী পৌর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক শাহাজুল ইসলাম এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ফুলবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) একেএম খন্দকার মুহিব্বুল।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, পৌর বিএনপি’র প্রচার সম্পাদক সাইদুর রহমান মাস্টার, পৌর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক জামান সরকার, আলাদিপুর ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি আনোয়ার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম, ইউনিয়ন যুবদলের হাফিজুর রহমান হাফিজ, মেলার ইজারাদার শফি আহম্মেদ প্রমুখ।
সরেজেমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঘোড়ার মেলাকে কেন্দ্র করে এলাকাজুড়ে বসেছে গ্রামীণ মেলা। গ্রামীন এ মেলায় পসরা সাজিয়ে বসেছে হরেক রকম মুখরোচক খাবারের দোকান, কসমেটিক্সের দোকান ও শিশুদের জন্য খেলনার দোকান। মেলায় আগতদের বিনোদনে জন্য দোলনা, নাগরদোলা, সার্কাস ও খেলাধুলার আয়োজন করা হয়েছে। এতে সব বয়সী নারী-পুরুষের ব্যাপক সমাগম ঘটছে। দর্শনার্থীদের মধ্যে পুরুষের পাশাপাশি কিশোর-কিশোরী ও তরুণ-তরুনীদের উপস্থিতি বেশি লক্ষ্য করা গেছে।
এদিকে ঘোড়া বিক্রি করতে আসা সাওয়ারীরা মেলায় সারিসারি করে ঘোড়া বেঁধে রেখেছেন। তার পাশেই ছোট ছোট তাবু টাঙানো হয়েছে রাত্রী যাপনের জন্য। কেউ রান্না করছেন, কেউ আবার ঘোড়ার পরিচর্যা করছে।
মেলা কমিটির সভাপতি শিক্ষক আফতাবুজ্জামান জানান, প্রতি বছর বাংলা বছরের বৈশাখ মাসের ১৩ তারিখ থেকে ফুলবাড়ী উপজেলার আলাদিপুর ইউনিয়নের মেলাবাড়ী মাঠে এই ঐতিহ্যবাহী বুড়া চিন্তামন ঘোড়ার মেলা বসে। মেলাটি অন্তত ১৫ দিন স্থায়ী হয়। তবে এ মেলায় মূলত ঘোড়াই বেচাকেনা হয়ে থাকে। এ কারণে এটি বুড়া চিন্তামন ঘোড়ার মেলা নামেই দেশব্যাপী পরিচিত।
রংপুরের তারাগঞ্জ থেকে ঘোড়া নিয়ে আসা জাহাঙ্গীর শাহ, জয়পুরহাটের ওহাব আলী, হাকিমপুর উপজেলার জাহের আলী, বিরামপুর উপজেলার ওসমান আলী এ মেলায় এসেছেন ঘোড়া বিক্রি করতে। তারা বলেন, এক একজন ছোটবড় মিলিয়ে ৪-৫ টি করে ঘোড়া নিয়ে মেলায় এসেছেন। তারা আকার ভেদে ঘোড়ার দাম রেখেছেন সর্বনিম্ন ২০ হাজার থেকে ১লাখ টাকা। সারাবছর দেশের বিভিন্নস্থানে ঘোড়ার মেলায় ঘোড়া নিয়ে যান বেচাবিক্রি করতে। ঘোড়া বেচাকেনা করেই তারা জীবিকা নির্বাহ করেন। মেলায় এবার ঘোড়ার ক্রেতার অভাব রয়েছে, এজন্য বেচাবিক্রিও কম হচ্ছে।
নওগাঁও থেকে আসা ঘোড়া ব্যবসায়ী শামসুল আলম বলেন, দুদিন হলো ছোটবড় ৫ টি ঘোড়া নিয়ে মেলায় এসেছেন। ক্রেতারা দাম কম বলছেন, তাই এখন পর্যন্ত একটিও ঘোড়া বিক্রি করতে পারেননি। ১৯৯০ সাল থেকে এই মেলায় ঘোড়া বেচাবিক্রি করে আসছেন।
আলাদীপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও মেলাবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দছিম উদ্দিন মণ্ডল বলেন, ঐতিহ্যবাহী এই বুড়া চিন্তামন ঘোড়ার মেলাটি ব্রিটিশ আমল থেকে হয়ে আসছে, আমরা আমাদের বাপদাদাদের কাছে শুনেছি। দেশব্যাপী ব্যাপক পরিচিত এ মেলা। ঘোড়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলেই এই মেলা শুরু এবং শেষ হওয়ার তারিখ জানেন। এ কারণে প্রতিবছর মেলা শুরুর আগেভাগে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ঘোড়া বেচাকেনা করতে মেলায় আসেন।
থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) একেএম খন্দকার মহিব্বুল বলেন, এটি এলাকার একটি ঐতিহ্যবাহী ঘোড়ার মেলা। দেশের বিভিন্নস্থান থেকে ঘোড়া ব্যবসায়ীরা এসেছেন। মেলার সার্বিক আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষায় পুলিশ সার্বক্ষনিক নজরদারি রাখছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইসাহাক আলী বলেন, সুষ্ঠ ও সুন্দর পরিবেশে মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। জেলা প্রশাসন কর্তৃক অনুমোদন প্রাপ্ত এই ঘোড়ার মেলায় কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে। সেদিকে উপজেলা প্রশাসন থেকে সার্বিক নজরদারি রয়েছে।