বুধবার, ৮ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ফুলবাড়ীর আন্দোলন উন্নয়ন সম্পর্কে একটা নতুন দিশা দিয়েছে -অধ্যাপক আনু মুহম্মদ

নিজস্ব প্রতিবেদক
অধ্যাপক আনু মুহম্মদ বলেছেন, ২০০৬ সালের ২৬ আগস্ট ফুলবাড়ী রক্ষার আন্দোলন শুধু সম্পদ রক্ষার আন্দোলন ছিল না। এই আন্দোলন এই অঞ্চলের মানুষকে তাদের জমি, তাদের বসতবাড়ি, কৃষি ও পানিসম্পদ, জীবন-জীবিকা ধ্বংস করে যে প্রকল্প হয়েছে সেগুলোকে শুধু রক্ষা করার জন্য আন্দোলন হয়েছে তা না; এই আন্দোলন উন্নয়ন সম্পর্কে একটা নতুন দিশা দিয়েছে। যে সম্পদের ওপর মানুষ টিকে থাকে, তার প্রাণ প্রকৃতি ধ্বংস করে গৃহীত প্রকল্পকে উন্নয়ন বলা যাবে না ফুলবাড়ীর মানুষ ২৬ আগস্টের আন্দোলনের মাধ্যমে তা বুঝিয়ে দিয়েছে।
আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির উদ্যোগে “ফুলবাড়ী কয়লাখনি বিরোধী ট্রাজেডির” দিবসে অনুষ্ঠিত সমাবেশে উপরোক্ত কথা বলেন তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সাবেক অধ্যাপক আনু মুহম্মদ।
অধ্যাপক আনু মুহম্মদ আরও বলেন, ফুলবাড়ীর আন্দোলন শুধু বাংলাদেশ নয় সারা বিশ্ববাসীর জন্যও একটি বড় ঘটনা যেখানে জনগণকে অপ্রতিরোধ্য শক্তি দিয়েও গুলি করেও দমন করতে পারে নাই। ঐক্যবদ্ধ গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে একটি বিদেশি কোম্পানির ষড়যন্ত্রকে পরাজিত করেছিল। বাংলাদেশের জন্য এটি একটি শিক্ষা। কোন প্রকল্প যদি মানুষের জীবনকে বিপন্ন করে, মানুষের জমি, বসতবাড়ি, জমি, কৃষি, পানি সম্পদ, যে সম্পদের মানুষ টিকে থাকে তার চারিদিকের প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংস করে যদি কোন প্রকল্প হয় সেটাকে কোন ভাবেই উন্নয়ন বলা যাবেনা।
তিনি আরও বলেন, এসময় উন্নয়নের ধারণা দিয়ে তিনি বলেন, উন্নয়ন হতে হবে এমন যাতে এমন কিছু পরিবর্তন হয় যার মধ্য দিয়ে মানুষের কর্মসংস্থান হয়, মানুষের শিক্ষা-চিকিৎসার সুযোগ বাড়ে, প্রাণ প্রকৃতি পরিবেশ ভালো হয়, মানুষের সুস্থতা বাড়ে, মানুষ ভালো থাকে- এই ধরনের একটা পরিবর্তনকে উন্নয়ন বলতে পারি। এই উন্নয়নের নীতি নির্ধারণ এমন ভাবে হতে হবে যাতে জনগণের সম্পৃক্ততা থাকে। কিন্তু ফুলবাড়ীতে কয়লাখনির নামে যে উন্নয়ন সাম্রজ্যবাদিরা করতে চেয়েছিলো তা ছিলো ঠিক উল্টো। যার ফলে এই এলাকার মানুষ জীবন দিয়ে তা প্রতিহত করেছে।
দীর্ঘ ১৯ বছরেও ফুলবাড়ীর ৬ দফা চুক্তির বাস্তবায়ন না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে অধ্যাপক আনু মুহম্মদ ৩ দফা দাবি ঘোষণা করেন। এসব দাবির মধ্যে ফুলবাড়ী চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন, আন্দোলনকারী নেতা কর্মীদের নামে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, বড়পুকুরিয়ায় উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনের চক্রান্ত বাতিল করা। আগামী অক্টোবরের মধ্যে দাবি আদায় না হলে কঠোর কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে বলে হুশিয়ারী দেন তিনি।
তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎবন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির ফুলবাড়ী উপজেলা আহ্বায়ক সৈয়দ সাইফুল ইসলাম জুয়েলের সভাপতিত্বে ও বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্টলীগ এর উপজেলা সম্পাদক সঞ্জিত প্রসাদ জিতু’র সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য রাখেন, জাতীয় গণফ্রন্ট এর কেন্দ্রীয় কমিটির সমন্বয়ক টিপু বিশ্বাস, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের কেন্দ্রীয় সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য মোশারফ হোসেন নান্নু, বাসদ এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাইদুল ইসলাম, সাম্যবাদী আন্দোলনের জেলা সমন্বয়ক মনিরুজ্জামান মনির, সিপিবি’র উপজেলা সভাপতি জয় প্রকাশ গুপ্ত ও সাধারণ সম্পাদক এসএম নুরুজ্জামান জামান, তেল গ্যাস কমিটির সদস্য এমএ কাইয়ুম, হামিদুল হক প্রমুখ।
এদিকে ফুলবাড়ী পৌরসভার সদ্য সাবেক মেয়র আলহাজ্ব মাহমুদ আলম লিটন সম্মিলিত পেশাজীবী সংগঠনের ব্যানারে সকালে শোক র‌্যালি নিয়ে ২৬ আগস্টে নিহতদের স্মরণে নির্মিত শহীদ বেদীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন। এ সময় মেয়র মাহমুদ আলম লিটন বলেন, ২৬ আগষ্ট ফুলবাড়ীতে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা খনির বিরুদ্ধে আমরা ছিলাম, আজও আছি, আগামীতে থাকব।
অপরদিকে ফুলবাড়ী পৌর সভার সাবেক মেয়র মুরতুজা সরকার মানিকের নেতৃত্বে সকালে শোক র‌্যালীসহ শহীদ বেদীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন এবং উন্মক্ত পদ্ধতি কয়লা খনির বিরুদ্ধে শপথ বাক্য পাঠ করান।
এছাড়াও দোকান কর্মচারি ইউনিয়ন, মটর শ্রমিক ইউনিয়ন, হোটেল কর্মচারি ইউনিয়নসহ বিভিন্ন রাজনৈতিকসহ পেশাজীবী সংগঠনগুলো পৃথক পৃথক কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি পালন করেছে।

Share This