বড়পুকুরিয়ার খনি শ্রমিকদের ৭২ ঘন্টার আল্টিমেটাম

নিজস্ব প্রতিবেদক
দিনাজপুরের একমাত্র ভূগর্ভস্থ কয়লাখনি বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি শ্রমিকদের সাব কন্ট্রাক্ট বাতিল করে মূল ঠিকাদারের মাধ্যমে নিয়োগ দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সংবাদ সম্মেলন করেছেন খনির ভূগর্ভস্থ শ্রমিকরা। ৭২ ঘন্টার মধ্যে এই দাবি পূরণ না হলে কাঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারী দিয়েছেন তারা।
আজ রোববার বেলা ১১টায় খনির প্রধান গেটে বিক্ষোভ মিছিল করেন ভুগর্ভস্থ খনি শ্রমিকরা। মিছিল শেষে সংবাদ সম্মেলন করে ৭২ঘন্টার এই আল্টিমেটাম দেন তারা।
বিক্ষোভ মিছিল শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন শ্রমিক নেতা শহিবুল ইসলাম বাবু। লিখিত বক্তব্যে তিনি শ্রমিকদের দূরাবস্থার কথা তুলে ধরে বলেন, আমরা খনির অভিজ্ঞ শ্রমিক। ৫/৭ বছর থেকে খনিতে কর্মরত আছি। এখন আমাদের সরকারি চাকুরিতে প্রবেশের বয়সও নেই। আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ১৪০০ফিট মাটির নিচে গিয়ে কাজ করি। চুক্তি অনুযায়ী কোন শ্রমিক দুর্ঘটনার শিকার হলে তার পরিবার আর্থিক ক্ষতি পূরণ পাবে। কিন্তু চুক্তির মেয়াদ ৫ মাস বাঁকি থাকলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জেএসএমই কোন ক্ষতিপূরণ দিবেনা বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে। তাহলে আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কী করে কাজ করব?
তিনি আরও বলেন, বড়পুকুরিয়া খনির কারনে আমাদের বাড়ি ঘর, ফসলি জমি, কর্ম সংস্থান সব ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার ২০ গ্রামের বাসিন্দাদের প্রত্যেক পরিবার থেকে খনিতে চাকুরি দেয়ার কথা থাকলেও অল্প কিছু পরিবারে চাকুরি দেয়া হয়েছে। তবে আমাদের কে মূল ঠিকাদার সিএমসি এক্সএমসির সাথে নিয়োগ না করে সাব কন্টাক্টর জেএসএমই এর সাথে নিয়োগ করা হয়। জেএসএমই এর চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে ৪/৫ মাস পর। এরই মধ্যে গত ৬ মে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জেএসএমই ভূগর্ভস্থ শ্রমিকদের অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনা ঘটলে আর্থিক কোন ক্ষতিপূরণ দেয়া হবেনা বলে জানিয়ে দেয়। এ ঘোষণার পর থেকে খনির ১৭৪ জন শ্রমিক কর্মবিরতি পালন করছি। কিন্তু খনি কর্তৃপক্ষ এখনও আমাদের সাথে কোন আলোচনা না করে আন্দোলনের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন।
এসময় তারা জেএসএমই এর সাথে সাব কন্ট্রাক্ট বাতিল করে মূল ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সিএমসি এক্সএমসি কনসোর্টিয়ামের মাধ্যমে নিয়োগের দাবি করেন। আগামী ৭২ ঘন্টার মধ্যে খনি কর্তৃপক্ষ কোন উদ্যোগ না নিলে কঠোর আন্দোলন করা হবে বলে ঘোষণা করেন তারা।
এ বিষয়ে জানতে খনির মহাব্যবস্থাপক (মাইন অপারেশন) খান মো. জাফর সাদিক এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, খনির মূল ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এক্সএমসি সিএমসি তাদের কাজের কিছু অংশ জেএসএমই কে সাব কন্ট্রাক্ট দিয়েছে। তাদের কাজ ছিলো ভূগর্ভে টানেল তৈরি করা। এই কাজ আর মাত্র ছয় মাস বাঁকি আছে। কাজ শেষ হলে ওই ঠিকাদারের চাইনিজ কর্মীরাও চলে যাবে। এই শ্রমিকদের যেহেতু কাজ শেষ তাহলে কিভাবে তারা কাজ করবে। তারপরও আমরা তাদেরকে বাঁকি কাজ শেষ করতে বলেছি। যেহেতু তারা অভিজ্ঞ পরবর্তীতে নতুন কোন সুযোগ হলে অবশ্যই তাদেরকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে।
বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল ইসলাম সরকার জানান, মূল ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সিএমসি এক্সএমসি তাদের কাজের কিছু অংশ জেএসএমই কে সাব কন্ট্রাক্ট দিয়েছে। এই কাজের কোন মেয়াদ হয়না। কাজ শেষ হলেই শেষ। শ্রমিকদের দুর্ঘটনার ক্ষতিপূরণের বিষয়ে তিনি বলেন, ক্ষতি পূরণ দেয়া হবেনা শ্রমিকদের এই দাবি সত্য নয়। কাজ করতে এসে কেউ দুর্ঘটনার শিকার হলে অবশ্যই ক্ষতিপূরণ পাবে।