শুক্রবার, ৩০শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বাগানে ঝুলছে লাল কালো ও সবুজ রঙের থোকা থোকা আঙুর

মো.কামরুল হাসান জুয়েল, পীরগঞ্জ (রংপুর)
লাল, কালো ও সবুজ রঙের থোকা থোকা আঙুর ঝুলে আছে মাচায়। সবুজ পাতার মাঝে উঁকি দিচ্ছে কোথাও লম্বা, কোথাও গোলাকার আঙুর। এসব আঙুর দেখতে যেমন সুন্দর, খেতেও বেশ মজার। সড়কের পাশে আঙুরের এই বাগান দেখলে যে কারোরই দৃষ্টি আটকে যায়। আগে মানুষের ধারণা ছিল, আঙুর একটি বিদেশি ফল, এ দেশে চাষ করলে হয় টক। কিন্তু সেই ধারণা পাল্টে দিয়ে পচিশ জাতের মিষ্টি আঙুর চাষ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন পীরগঞ্জের রামনাথপুর ইউনিয়নের খেজমতপুর তালুকদার পাড়ার তাজিম উদ্দিনের ছেলে তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা মাসুদ তালুকদার।

দুই বছর আগে পরিবারকে সুস্বাদু ও ফরমালিনমুক্ত ফল খাওয়ানোর চিন্তা থেকেই নিজের বাগান বাড়িতে ২৭ শতক জমিতে রাশিয়ান বাইকুনুর, এ্যাকোলো, ইতালির ব্লাক ম্যাজিক, ভারতের ভিএসসি, কৃষ্ণাসহ ২৫ জাতের আঙুর চাষ করেন তিনি। পরবর্তিতে আরো বিনিয়োগ করে বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ শুরু করেছেন। তার বাগানে গেলেই দেখা যাবে মাচায় ঝুলে আছে থোকা থোকা রং বেরঙের আঙুর। প্রতিদিন অনেকেই তার বাগান দেখতে আসেন। গত বছর প্রথম বারের মতো ফল আসে, সেই ফল প্রতিবেশি ও দর্শনার্থীদের মাঝে বিতরণ করে তাক লাগিয়ে দেন। এ বছর পর্যাপ্ত ফল ধরেছে। ফল বিক্রি করে ভাল মুনাফার আশা করছেন তিনি।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, বাংলাদেশের আবহাওয়া উপযোগী ও উন্নতমানের এ জাতের আঙুর চাষে কোনো কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের প্রয়োজন হয় না। কেবলমাত্র গোবর বা জৈব সার ও পোকামাকড় মারার জন্য ভারমিটেক ব্যবহার করেই এ ফল চাষ করা যায়। তাই ফসলে জৈব-বালাইনাশক ব্যবহারের জন্য কৃষি উদ্যোক্তাদের আগ্রহ সৃষ্টি করানো হচ্ছে। পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে আঙুর চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। মাসুদ তালুকদার জানান, দুই বছর আগে ৩৫ জাতের আঙুরের চারা সংগ্রহ করে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ শুরু করেন। এ বছর বাগানে ২৫ জাতের গাছ রয়েছে। এর মধ্যে বাইকুনুর, এ্যাকোলো, ব্লাক ম্যাজিক, কৃষ্ণা, গ্রিণ লং, অস্ট্রেলিয়ান ১২ মাসি, চয়ন, সুপার সোনাকা, ছমছম সহ ১০/১২ টি জাতের আঙুরের ফলন ভালো। এরমধ্যে রাশিয়ান বাইকুনুর জাতটি সবচেয়ে ভালো এবং ভালো ফলনও হয়েছে। এ জাতটি দেশের আবহাওয়া ও চাষের পরিবেশ উপযোগী বলে তিনি দাবি করেন।

তিনি বলেন, ২৭ শতাংশ নিজস্ব জমিতে গত বছর ৩৫ জাতের আঙুর চাষ করি। এরমধ্যে গবেষণা করে রাশিয়ান বাইকুনুর জাতসহ ১০/১২টি জাতের আঙুরের ভালো ফলন ও স্বাদ হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হই। চারা রোপনের তিন মাস পর ফল এসেছে। এছাড়াও বাগানে চাইনিজ মিষ্টি কমলা, ছাদকি কমলা, ১২ মাসি ভিয়েতনাম মাল্টা, আফ্রিকান হলুদ মাল্টা, পাকিস্তানি, দার্জিলিংসহ ১৫ জাতের মাল্টা, কমলা, কাশ্মিরী কেনু, ত্বীন ফল, ৭ জাতের সৌদি খেজুর, ১২ মাসি কাঁঠাল, ছফেদা, আপেল, ১২ মাসি কাটিমন আম, রামবুটান, জাবুটি কাবা, ৪ জাতের ড্রাগন, ৪ জাতের পেঁপে, বড়ইসহ প্রায় ২৫ প্রকার ফলের গাছ রয়েছে ওই বাগানে। সাথি ফসল হিসেবে এই বাগান থেকে ১১০০ বস্তা আদা ও প্রায় ৭৫ মন পেঁপে বিক্রি করে আয় করেছেন কয়েক লাখ টাকা। এছাড়াও প্রতিনিয়ত আঙ্গুর, ত্বীন ফল, মাল্টা, কমলার চারা বিক্রিতে মাসে ২০ হাজার টাকা আয় করছেন তিনি। প্রতিটি গাছে কমপক্ষে ১৫/১৮ কেজি করে ফল পাওয়া যাবে। সে হিসাবে ৫০টি গাছে কমপক্ষে ৭৫০ কেজি ফল পাওয়া যাবে। বাজার মূল্য গড়ে ৩০০ টাকা কেজি দরে হিসাব করলে যার আর্থিক মূল্য দাঁড়ায় ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা। আঙুর চাষ করতে গিয়ে গাছের চারা, মাচা, পরিচর্যাসহ সব মিলিয়ে খরচ পড়েছে এক লাখ ১০ হাজার টাকা। আগামী বছর উৎপাদন আরো বৃদ্ধি পাবে। আঙুরের পাশাপাশি তিনি চারাও বাজারজাত করছেন। এতে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। তার আঙুর বাগান দেখতে স্থানীয়সহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মানুষ আসেন। বাগানে আগত সামর্থহীন লোকজনকে তিনি বিনামূল্যে আঙুর চারা দিচ্ছেন। এদিকে আঙুর বাগান দেখতে আসা দর্শনার্থীরা ঝুলন্ত ফল উপভোগ করে অভিভুত হচ্ছেন এবং অনেকেই চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। অনেকেই আঙুর বাগানে থোকা থোকা ফল দেখে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন। বাগান দেখতে আসা উপজেলা সদরের ব্যবসায়ী হারুন রশীদ হিরু জানান, আমি আঙুরের বাগান স্বচক্ষে দেখে অবাক হয়েছি। আমাদের এলাকায় আঙুর চাষ সম্ভব, নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস হতো না। বাজরের কেনা আঙুর আর এখানকার আঙুরের স্বাদ একই বলে জানান তিনি। এখন তাঁর আঙুর বাগান করার ইচ্ছে হয়েছে। এখান থেকে চারা সংগ্রহ করে নিজেই একটি আঙুর বাগান করবেন বলে জানান তিনি। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সাদেকুজ্জামান জানান, আঙুর একটি উচ্চমূল্যের বাণিজ্যিক আমদানি নির্ভর ফসল। উদ্যোগী কৃষক মাসুদ তালুকদারের আঙুর ফল চাষ এই এলাকার অন্যান্য কৃষকদের নতুন নতুন ফল চাষাবাদে উৎসাহিত করবে। আমরা তাকে প্রযুক্তিগত সহায়তার প্রয়োজন হলে অবশ্যই করবো।

Share This

COMMENTS