অনলাইন ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের অত্যাধুনিক কৌশলগত অস্ত্র ব্যবস্থায় অন্যতম শক্তিশালী অস্ত্র হিসেবে মনে করা হয় দেশটির বিমানবাহিনীর বি-২ স্পিরিট স্টিলথ বোমারু বিমানকে। মার্কিন এই বিমান উন্নত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিয়ে শত্রুপক্ষের লক্ষ্যবস্তুতে নির্ভুল আঘাত হানতে পারে। শক্ত কংক্রিট কিংবা মাটির ২০০ ফুটেরও বেশি গভীরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে এই বিমান।
বুধবার মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ বলেছেন, ইরানের বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যেকোনও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী প্রস্তুত আছে। তিনি বলেন, গত শুক্রবার ইসরায়েল হামলা শুরু করার আগেই পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে প্রেসিডেন্টের চুক্তির আহ্বানে সাড়া দেওয়া উচিত ছিল ইরানের।
এদিকে, বুধবার ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি ট্রাম্পের শর্তহীন আত্মসমর্পণের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছেন। একই দিনে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, তার ধৈর্য্যের বাধ ভেঙে যাচ্ছে। যদিও ইরানের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কোনও কিছু জানাননি তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনীর বি-২ বোমারু বিমানকে এখন পর্যন্ত ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যয়বহুল সামরিক বিমান হিসাবে মনে করা হয়। প্রত্যেকটি বিমান তৈরিতে ব্যয় হয় প্রায় ২ দশমিক ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অস্ত্র নির্মাতা কোম্পানি নর্থরপ গ্রুম্যানের তৈরি এই বিমানে সর্বাধুনিক স্টেলথ প্রযুক্তির ব্যবহার করা হয়। ১৯৮০-র দশকের শেষের দিকে এই বিমানের উৎপাদন শুরু করে নর্থরপ গ্রুম্যান। তবে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর এই বিমানের উৎপাদনে লাগাম টানা হয়। এরপর মাত্র ২১টি বিমান তৈরি করেছে নর্থরপ।
এই বোমারু বিমানের আওতা ৬ হাজার নটিক্যাল মাইলেরও বেশি। একবার উড্ডয়নের পর পুনরায় জ্বালানি না নিয়েই যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ড থেকে বিশ্বের যেকোনও প্রান্তে হামলা চালাতে সক্ষম বি-২। আবার আকাশপথে জ্বালানি ভরার সুবিধা থাকায় কার্যত যেকোনও লক্ষ্যবস্তুতে পৌঁছাতে পারে এই বিমান। আর এর প্রমাণ পাওয়া যায় যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরি অঙ্গরাজ্য থেকে উড়ে সরাসরি আফগানিস্তান এবং লিবিয়ায় পরিচালিত অভিযানে।
মার্কিন বিমান বাহিনীর বহরে থাকা অত্যাধুনিক এই যুদ্ধবিমান ৪০ হাজার পাউন্ডেরও (১৮ হাজার ১৪৩ কেজি) বেশি ওজনের অস্ত্র বহন করতে পারে। শুধু তাই নয়, পারমাণবিক ও প্রচলিত—উভয় ধরনের অস্ত্র বহনে সক্ষম এই বিমান। বিমানটির ভেতরে অস্ত্র রাখার জায়গা এমনভাবে নকশা করা হয়েছে, যাতে স্টেলথ বৈশিষ্ট্য বজায় রেখেই বিশাল অস্ত্র বহন করা যায়। এর মধ্যে রয়েছে দু’টি ৩০ হাজার পাউন্ড (১৩ হাজার ৬০৭ কেজি) ওজনের জিবিইউ-৫৭এ/বি এমওপি (ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনিট্রেটর)। যা ‘বাঙ্কার বাস্টার’ বোমা নামে পরিচিত।
দুই পাইলট পরিচালিত এই বিমানে অত্যাধুনিক অটোমেশন ব্যবস্থা থাকায় জনবল কম হলেও এটি সহজেই পরিচালনা করা যায়। স্টেলথ প্রযুক্তির অংশ হিসেবে এতে রাডার-শোষণকারী পদার্থ ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া এই বিমানের নকশা এমনভাবে করা হয়েছে; যাতে রাডারে ধরা পড়ার সম্ভাবনাও খুবই কম। বি-২ বিমানের রাডার-ক্রস সিস্টেমটি একটি ছোট্ট পাখির সমান। ফলে এটি সহজেই রাডার থেকে প্রায় অদৃশ্য হয়ে যায়।
৩০ হাজার পাউন্ড (১৩ হাজার ৬০৭ কেজি) ওজনের এই বোমা যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ভারী প্রচলিত অস্ত্রগুলোর একটি। ভূপৃষ্ঠ থেকে কয়েকশ’ ফুট গভীরে থাকা শক্ত ঘাঁটি কিংবা বাঙ্কার ধ্বংস করার লক্ষ্যে বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে এমওপি। বিশাল আকারের হওয়ায় বি-২ যুদ্ধবিমান প্রতি মিশনে এক থেকে দুটি এমওপি বহন করতে পারে। কিন্তু এর সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার সক্ষমতা একেবারে তুলনাহীন।
একটি এমওপি বোমার দৈর্ঘ্য প্রায় ২০ দশমিক ৫ ফুট। এতে জিপিএস-নির্ভর নিখুঁত টার্গেটিং সিস্টেম রয়েছে; যা মাটির নিচের নির্দিষ্ট কাঠামোয় আঘাত হানতে সহায়তা করে। এই বোমা শক্ত কংক্রিট ভেদ করে মাটির ২০০ ফুটেরও বেশি গভীরে প্রবেশ করতে পারে। ফলে বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ ভূগর্ভস্থ যেকোনও স্থাপনাকে মুহূর্তে ধ্বংস করতে পারে এই বোমা।
যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত পারমাণবিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ অংশ বি-২ স্পিরিট বোমারু বিমান। এই বিমান নির্ভুল ও নিখুঁতভাবে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র বহন করতে পারে। সর্বোচ্চ ১৬টি বি৮৩ পারমাণবিক বোমা করতে পারে বিমান।