নীলফামারী প্রতিনিধি
বাংলার মাটির গুণে এখানে হাজারো তরুলতার সমাহার। নদীবাহিত পলি, বৃষ্টিপাত আমাদের দেশকে দিয়েছে এক উর্বর ভূমি। দেশে রয়েছে প্রায় পাঁচ হাজারের বেশি প্রজাতির গাছপালা। বর্তমানে এখন এসব গাছপালা প্রায় বিলুপ্তির পথে। আবার ভিনদেশি গাছের আগ্রাসনেও হারিয়ে যেতে বসেছে দেশীয় গাছপালা। আমাদের নিজস্ব গাছপালা নিয়ে তেমন গবেষণা হচ্ছে না। বরং ভিনদেশের বিভিন্ন রকম গাছপালা রোপণ এবং চাষের জন্য শহর, গ্রামের মেঠোপথ ও প্রাকৃতিক বন ব্যবহার করা হচ্ছে। অনেকেই বিদেশি ফল-সবজি চাষাবাদে মানুষকে অনুপ্রেরণা দিচ্ছেন। এতে দেশীয় গাছপালার ওপর মানুষ আগ্রহ হারাচ্ছে। এরকম এক প্রকার দেশীয় গাছ হচ্ছে বেতগাছ যা বর্তমানে কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে। এক সময় নীলফামারীর গ্রামাঞ্চলের কৃষকদের পতিত জমিতে বিশাল বিশাল জঙ্গল ছিল। গ্রাম বাংলার আনাচে-কানাচে ঝোঁপ-ঝাড়ে অযত্ন-অবহেলায় এক সময় বেড়ে উঠত বেত গাছ। সাধারণত গ্রামের রাস্তার পাশে, বসতবাড়ির পেছনে, পতিত জমিতে ও বনে কিছুটা আর্দ্র জায়গায় বেতগাছ জন্মাত। কিছুদিনের মধ্যেই বেত ঘন হয়ে ঝাড়েও পরিণত হত। বেত কাঁটাময়, চিরসবুজ। কাণ্ড লম্বা, কাঁটাযুক্ত ও শাখাহীন। প্রতিটি কাণ্ডের আগা থেকে নতুন পাতা বের হয় ও বেড়ে ওঠে। কাণ্ড বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এর নিচের অংশ পোক্ত হতে থাকে।
ডোমার বহুমূখি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রুহুল আমিন বলেন, বেত অতি মূল্যবান ও অর্থকরী উদ্ভিদ। উন্নতমানের হ্যান্ডিক্রাফট, গৃহের আসবাবপত্র তৈরির জন্য বেতের ব্যবহার বেশি হত।এক সময় বেতের তৈরী বিভিন্ন জিনিসপত্র গ্রামীণ হাটবাজারের পাশাপাশি শহরেও বিক্রি হতো। নীলফামারীর ডোমার উপজেলার বন বিভাগের রাস্তার পাশে ঐতিহ্য ধরে রেখেছে একটি ছোট বেত ঝাড়। সেসব জঙ্গলে রোপণ ছাড়াই প্রকৃতির নিয়মেই বেত গাছ জন্মায়। আর কাঁটা ভরা লম্বা চিকন গাছে সবুজ পাতা অবিরাম দোল খেত। বেত গাছের ফলকে বেতফল বলা হয়। এর খোসা শক্ত হলেও ভেতরটা নরম। বীজ শক্ত। কাঁচা ফল সবুজ ও পাকলে সবুজাভ ঘিয়ে বা সাদা রঙের হয়। এটি থোকায় থোকায় ফলে। বেতগাছে ফুল আসে অক্টোবর মাসে আর ফল পাকে মার্চ-এপ্রিল মাসে।
নীলফামারী পলাশবাড়ি কলেজের প্রভাষক জাফর সাদেক বলেন, মূলত আগে গ্রামের মানুষের ব্যবহারের জন্য চাল ও ধান পরিমাপের টালা, পাল্লা, ঝুড়ি, ঝাঁকা বা ধামা বা টুকরি, শীতল পাটি, হাত পাখা, হাতের লাঠিসহ বেতের চেয়ার, সোফা, দোলনা, ফুলদানি তৈরি হতো। প্রতিটি বাড়িতে ওইসব পণ্যের প্রচুর চাহিদা ছিল। তবে ধীরে ধীরে এখন এসব পণ্যের কদর কমে গেছে।