বীরগঞ্জে কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী ঢেমঢেমিয়া কালিমেলা
বীরগঞ্জ প্রতিনিধি
বীরগঞ্জে দু’পক্ষের কোন্দলের কারনে ও কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী ঢেমঢেমিয়া কালিমেলা। ২০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী ঢেমঢেমিয়া কালিমেলা। উত্তরবঙ্গে সনাতন ধর্মের লাখ লাখ মানুষের বার্ষিক বিনোদনের একমাত্র ঐতিহ্যবাহী মৌসুমী বিনোদনসহ গণমানুষের মিলন মেলা হিসেবে দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ উপজেলার ঢেমঢেমিয়া কালির মেলা সর্বাধিক প্রশংসিত, প্রসিদ্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ স্থান এতে সন্দেহ নেই। উপজেলার পলাশবাড়ী ইউনিয়নের বৈরবাড়ী, চাপাপাড়া ও হিরামণি মৌজায় এ মেলার অবস্থান। বাংলা ১২০০ সাল থেকে ঢেমঢেমিয়া কালিমেলা পল্লী বিনোদনের ঠিকানা। প্রতি বছর কার্তিক মাসের আমাবশ্যায় সনাতন ধর্মালম্বীদের শ্যামা পূজায় এ মেলার আয়োজন করা হয়। কালি মন্দিরটি তার নিজস্ব ১ একর জমিতে একটি উচ্চ অট্টালিকা। পাশেই মাত্র কয়েক গজ পশ্চিমে দরবেশ মিরাজুন মিয়ার মাজার শরীফ রয়েছে। বছর দু’য়েক আগে মেলার সময়ে এলাকার মানুষ বিশাল এই আয়োজনকে প্রাণভরে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল গোত্রের মানুষেরা এখানে এসে এ মেলা উপভোগ করত। পশ্চিমে ঠাকুরগাঁও, উত্তরে পঞ্চগড়, পূর্বে নীলফামারী ও দক্ষিণে দিনাজপুর। ভাল যোগাযোগ ব্যবস্থা ও কয়েকটি জেলার মধ্যস্থল হওয়ায় কালিমেলা উদ্বোধনের আগে থেকেই মানুষের মাঝে সাজ সাজ রব পড়ে যেত। কালি পাটে উঠবে এ মর্মে অনেক আগে থেকেই সোরগোল চলতে থাকত। গরু-মহিষ ও ঘোড়া কেনা-বেচা হত প্রায় শত শত তাবুতে। আর কালি পাটে উঠার পর সে আলোকে আশাবাদী দর্শকেরা মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষায় প্রহর গুনতেন। মেলাটি গ্রামের জনগণের মনের খোরাক অফুরন্ত বিনোদনের জন্য যাত্রাপালা, পুতুল নাচ, সার্কাসসহ বিভিন্ন ইভেন্ট ও ডিজিটাল সময়ের ভ্যারাইটি, ম্যাজিক ‘শো’ সম্বলিত, ঘরের সৌন্দয্য বৃদ্ধিকারী বিভিন্ন ডিজাইনের আসবাবপত্র, পোষাক ও বিভিন্ন রকমের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ছাড়াও নানা উপকরণে ভরপুর থাকতো। বছরে একটি মাস প্রত্যন্ত পল্লীর মানুষের বিনোদনের এক অপূর্ব আয়োজন ও অতীত ইতিহাস হিসেবে দেশের উত্তরবঙ্গে ঢেমঢেমিয়া কালিমেলা কালের স্বাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে থাকলেও এবছরে সরিজমিনে গিয়ে দেখা যায় কয়েকটি ইভেন্টে গত কয়েকদিন থেকে আসা মহিষ, ঘোড়া কেনা-বেচা চলছে এবং বৃহস্পতিবারই কেনা-বেচার শেষ দিন। অন্যদিকে হাতে গোনা কয়েকটি খাবারের দোকান সহ খেলনার দোকান ও ১০টির মত কসমেটিক দোকান চলবে আরও কিছুদিন পর্যন্ত। তবে আজ (বুধবার) মেলায় গিয়ে দেখা যায় মহিষ ও ঘোড়ার হাটে ক্রয়-বিক্রয় চলছে। কালী মেলা নিয়ে গ্রুপিং চলছে মন্দিরের দুই সেবায়েত ধনেশ্বর ও জগদীশ গ্রুপের মাঝে দুই পক্ষই দিনাজপুর জেলা প্রশাসক বরাবরে আবেদন করলেও কোনো পক্ষই মেলা পরিচালনার নির্দেশনা ও অনুমতি পায়নি। অথচ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত মহিষ,ঘোড়া সহ নানা ধরনের ব্যবসায়ীরা কালী মেলায় অবস্থান করছেন চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে। তাই উপায় না পেয়ে অনেকেই তাদের বিক্রির জন্য আনা মহিষ, ঘোড়াসহ এ ব্যমালামাল নিয়ে ফেরত চলে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। বিশেষ সূত্রে জানা যায়, মেলাটির অনুমোদন না হলে জেলা প্রশাসকের অনুমতি সাপেক্ষে উপজেলা প্রশাসন থেকে কালী মেলার হাটে আগন্তুক ব্যবসায়ীদের ক্রয় বিক্রয়ের উপর খাস টোল আদায় করা হবে।
ঢেমঢেমিয়া কালির মেলার বিষয়ে মুঠোফোনে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ( ইউএনও) মো. ফজলে এলাহীর সাথে কথা হলে তিনি জানান, এতদ্ব সংক্রান্ত তার কাছে কোন নির্দেশনা নাই, কি হবে পরবর্তীতে জানানো হবে।