বুধবার, ২০শে আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বীরগঞ্জে গরু বদলে ঘোড়া দিয়ে হালচাষ


বীরগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধি

মানুষের বাহন হিসেবে ঘোড়ার ব্যবহার নতুন নয়। আবার পণ্য বা মালামাল টানতেও ব্যবহার করা হয় ঘোড়ার গাড়ি। যদিও কালের পরিক্রমায় এগুলো এখন বিলুপ্তির পথে। কিন্তু ঘোড়া দিয়ে জমিতে হালচাষের দৃশ্য বিরল! হালচাষে উপযোগী করে তুলতে এ উপজেলার কৃষকরা প্রতিবছর ঢেমঢেমিয়া কালির মেলা থেকে বিভিন্ন প্রজাতির ঘোড়া ক্রেয় করে। আধুনিকতার চরম উৎকর্ষের এই যুগে বাস্তবেই ঘোড়া দিয়ে হালচাষ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। উপজেলার দিনাজপুরের বীরগঞ্জ পলাশবাড়ী, শতগ্রামসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে চলছে গরুর বদলে ঘোড়া দিয়ে হাল চাষ করার দৃশ্য দেখা গেছে।

ইসমাইল হোসেন বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে ঘোড়া দিয়ে জমি চাষ করে আসছি। আমি একজন প্রান্তিক কৃষক। বর্তমান বাজারে গরুর দাম অনেক বেশি। এক জোড়া হালের গরু কিনতে গেলে খরচ পড়ে ১ লাখ ২০ হাজার থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত। এই টাকা দিয়ে ছয় জোড়া ঘোড়া কেনা যায়। ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকাতেই এক জোড়া ঘোড়া কেনা যায়।’ কৃষক আরও বলেন, ‘আগে হালের গরু ছিল, এখন নেই। বাজারে গরুর দাম বেশি হওয়ায় কেনার সামর্থ্যও নেই। তাই নিজের চাষাবাদের প্রয়োজনে বাজার থেকে গরুর বদলে দুটি ঘোড়া কিনেছি। শুধু নিজের জমিতে চাষাবাদ করছি না, অন্যের জমিতেও টাকার বিনিময়ে চাষ করে দিচ্ছি। এক বিঘা জমি চাষ দিতে নিচ্ছি ৫০০ টাকা। প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই বিঘা জমিতে হালচাষ করা যায়।’প্রথম দিকে ঘোড়াগুলোকে হালের কসরত শেখাতে অনেক কষ্ট হয়েছে তাদের। ঘোড়ায় লাঙল-জোয়াল জুড়ে দিয়ে অনেকবার চেষ্টার পর আয়ত্তে আসে। এখন পুরোদমে ঘোড়া দিয়ে হালচাষ করছেন তাঁরা।

কৃষকরা বলেন, ‘ঘোড়া দিয়ে লাঙল দিলে জমি গভীরভাবে খনন হয়। পাওয়ারটিলার বা মাহেন্দ্র গাড়ি দিয়ে হালচাষ করলে জমি সমান হয় না। তাই ঘোড়ার হাল দিয়ে জমি সমান করা হয় । এতে পানি ধরে রাখা সহজ হয়।’
দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ নুরুজ্জামান বলেন, কৃষকেরা এখন যান্ত্রিক উপায়ে জমি চাষ করেন। ঘোড়া দিয়ে হালচাষ করা অপ্রচলিত একটা বিষয়। সময়ের সঙ্গে ঘোড়ার যে ব্যবহার, তা উঠে গেছে। কৃষক ইসমাইল হোসেন নিজের প্রয়োজনে বাড়তি আয়ের জন্য ঘোড়া দিয়ে জমি চাষ বা মই দেন। তবে কৃষি বিভাগ সব সময় আধুনিক মানের যন্ত্রাংশ ব্যবহার করে চাষাবাদের পরামর্শ দেয় বলে জানান তিনি।

Share This