শনিবার, ৫ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বীরগঞ্জে বসন্তের সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে ভাটফুল

বীরগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
দিনাজপুরের বীরগঞ্জে বিভিন্ন এলাকায় প্রকৃতির অলংকার হয়ে থোকায় থোকায় ফুটে রয়েছে ভাটফুল। এই ফুলটি বনজুঁই, ভাটিফুল, ঘেটু ফুল বা ঘণ্টাকর্ণ নামেও পরিচিত। ফাল্গুন ও চৈত্র মাসে ফুটে থাকা এই ফুলের সৌন্দর্য ও মিষ্টি সুবাসে মুগ্ধ হন প্রকৃতিপ্রেমীরা।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঝোপঝাড়, জঙ্গল, রাস্তার ধার এমনকি পরিত্যক্ত জমিতেও ভাটিফুলের ছড়াছড়ি চোখে পড়ার মতো। এই ফুলের সৌরভে আকৃষ্ট হয়ে প্রজাপতি, মৌমাছি ও নানা প্রজাতির পতঙ্গের আনাগোনাও বেড়েছে।
বীরগঞ্জ কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বসন্তের আগমনে পলাশ-শিমুলের পাশাপাশি ভাটিফুলও প্রকৃতিকে রাঙিয়ে তোলে। এই ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম Clerodendrum viscosum। এটি গুল্মজাতীয় বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ, যার উচ্চতা সাধারণত ২ থেকে ৪ মিটার পর্যন্ত হয়। গাছের পাতা পানপাতার মতো খসখসে এবং ডালের শীর্ষে থোকায় থোকায় সাদা ও বেগুনি মিশ্রিত রঙের ফুল ফোটে। ফুলের মিষ্টি গন্ধ রাতেও পরিবেশকে সুগন্ধময় করে তোলে।
‘প্রকৃতিতে এখন বসন্তকাল। বসন্ত এলেই চারদিকে যত ফুল আছে তা প্রস্ফুটিত হয়। নাম জানা বিখ্যাত সব ফুলের সাথে ফোটে নাম না জানা, পথের ধারে অবহেলায় পরে থাকা মায়াবী বহু ধরনের ফুল। অথচ রুপে এসব ফুল সত্যিই অনন্য। এদের মধ্যে অন্যতম হলো ভাঁটফুল। এই ফুলকে কেউ ভাঁটিফুল, ঘেটু ফুল বা বনজুঁই হিসেবে চেনেন। পথিকের বসন্তকে রঙিন এবং সুরভিত করতে যে ফুলের জুড়ি মেলা ভার; সেটি ফুল হলো ভাঁটফুল। তবুও এই সৌন্দর্য পরিচিত জংলী ফুল হিসেবেই। তবে এর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় মিষ্টি সুবাস আপনাকে কাছে টানতে বাধ্য। চৈত্রের শুরুতে উপজেলার বিভিন্ন সড়ক ও গ্রামীণ সড়কে বসন্তে চোখ রাঙাচ্ছে ভাঁটফুল। বসন্তের এই সময়ে বনফুলের খোঁজে বের হলে এদের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। একটু মনযোগী হলে এর রূপে মুগ্ধ হবেন। এর মিষ্টি গন্ধ আপনাকে মাতাল করে তুলবে। ফুলের কারুকাজ তথা পুংকেশর,পাপড়ি, পাতা ও কান্ডকে প্রকৃতি এতটাই নিখুঁতভাবে সাজিয়েছে যে, আপনি যদি এই ফুলকে বিশ্লেষণ করতে শুরু করেন তাহলে বিশাল একটা বই হয়ে যাবে- তবু শেষ করা যাবে না। গোলাপগঞ্জ রোড,ঝাড়বাড়ি রোডসহ বিভিন্ন রাস্তায় চলতে প্রায়ই চোখে পড়বে অযত্নে অবহেলায় অনেক প্রতিকুলতার মধ্যে প্রকৃতির অলংকার হিসেবে বেড়ে উঠা এক গুল্ম জাতীয় পেরিনিয়াল উদ্ভিদ বনজুঁইকে। এর আরো কিছু নাম আছে, যেমন ভাইট, ভাট ও ঘেটু বলেও অঞ্চলভেদে অনেকের কাছে পরিচিত। বিশেষ করে পতিত ভূমি, জঙ্গলের কিনারা, বড় রাস্তার কিনারা এদের প্রিয় আবাসস্থল। বসন্তকালে গাছের অগ্রভাগে ও পার্শ্বীয় প্রশাখায় অসংখ্য সাদা ও বেগুনি মিশ্রিত রংয়ের বনভূমিকে সাজিয়ে তুলে। ফুলের মাঝখানে থাকা লম্বা পুংকেশর এই ফুলের সৌন্দর্যকে আরো বৃদ্ধি ও মনোমুগ্ধকর সৌরভে প্রজাপতি ও মৌমাছির নাচন যেন প্রকৃতিতে এক ভিন্নমাত্রা এনে দেয়। ফুলের পাপড়ি ঝরে পড়ার পর লালচে বৃতির মাঝখানে সবুজ ও বেগুনি বীজ দেখতে একেবারে নাকফুলের মতো, মনে হয় যেন কারুকাজ খচিত লালচে পাথরের মাঝে সবুজ অথবা গাঢ় বেগুনি চকচকে আরেকখান ডায়মন্ড খন্ড বসিয়ে রেখেছে।

Share This