ভুয়া এজেন্সির ফাঁদে পঞ্চগড়ের তরুণরা

পঞ্চগড় সংবাদদাতা
বুকভরা স্বপ্ন আর রঙিন ভবিষ্যতের আশায় ঘর ছেড়েছিল পঞ্চগড়ের একদল তরুণ। কেউ চেয়েছিল ইউরোপে ভালো চাকরি, কেউ চেয়েছিল মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী ঠিকানা। কিন্তু সেই স্বপ্ন আজ ধুলিস্যাৎ। রাজধানী থেকে পরিচালিত ‘ইকরা ট্রাভেল’ নামের এক ভুয়া ট্রাভেল এজেন্সির ফাঁদে পড়ে তারা হারিয়েছে জীবনের সব সঞ্চয়। পাঁচজন তরুণের কাছ থেকেই হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে প্রায় ৩৪ লাখ টাকা।
তরুণদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল ভুয়া ভিসা ও নকল বিমানের টিকিট। বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পরই যখন ইমিগ্রেশনে তাদের যাত্রা থেমে যায়, তখনই তারা বুঝতে পারে—সবকিছুই ছিল প্রতারণার ফাঁদ। অনেকেই এখন হতাশায় দিন কাটাচ্ছে, কেউ বালু টেনে জীবিকা চালাচ্ছে, কেউবা দেনার দায়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
সদর উপজেলার জগদল সতরংপাড়ার রিফাত হাসান সবে এসএসসি পাস করেছে। ইতালিতে যাওয়ার আশায় তার পরিবার গরু-বাছুর, জমি বিক্রি করে তিন দফায় ১৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা তুলে দেয় প্রতারক ইমরান মাহমুদের হাতে। এখন রিফাত নদীতে বালু টেনে দৈনিক চার-পাঁচশ টাকা আয় করে, যা দিয়ে কোনো মতে চলে পরিবার। রিফাতের বাবা বলেন,
“ছেলের ভবিষ্যতের জন্য সবকিছু বিক্রি করেছি। এখন সে নদীতে বালু টানে। সমাজের কাছে মুখ দেখানোরও উপায় নেই।”
রিফাতের মতোই প্রতারণার শিকার হয়েছে হোসাইন, হাবিবুর, সুমন ও লিমনসহ আরও অনেকে। কেউ কেউ বিদেশ যাওয়ার আগে বাড়িতে মিলাদ দিয়ে বিদায় নিয়েছিল—ভবিষ্যতের নতুন দিগন্তে পা রাখবে বলে। কিন্তু সেই আশার বদলে ফিরেছে শূন্য হাতে, ভাঙা স্বপ্ন আর অভাবের দগদগে ঘা নিয়ে।
সুমনের বাবা বলেন, “বড় আশা নিয়ে ছেলেকে বিদায় দিয়েছিলাম। সে প্রতারিত হয়ে ফিরে এসেছে। এখন সমাজের চোখে মুখ দেখাতে পারি না।”
প্রতারক ইমরান মাহমুদ বর্তমানে পুলিশের হেফাজতে। তার বিরুদ্ধে চারটি মামলা চলমান। কিন্তু এখনো কেউ টাকা ফেরত পায়নি। অনেকেই আদালতের বারান্দায় ঘুরছেন প্রতিকার পাওয়ার আশায়। হোসাইনের মা কাঁদতে কাঁদতে বলেন,
“সব বিক্রি করে ছেলেকে বিদেশ পাঠাতে চেয়েছিলাম। এখন আমরা পথে বসেছি।”
পঞ্চগড় সদর থানার ওসি আব্দুল্লাহ হিল জামান বলেন, “প্রতারক ইমরান মাহমুদকে রাজধানী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
পুলিশের তদন্তে আরও জানা গেছে, ইমরান মাহমুদ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভিন্ন নাম ও পরিচয়ে ভুয়া ট্রাভেল এজেন্সি খুলে দীর্ঘদিন ধরে এই প্রতারণা চালিয়ে আসছিল। একাধিক স্ত্রী ও নকল পরিচয় ব্যবহার করে সে গড়ে তোলে এই জালিয়াতির চক্র।