নিজস্ব প্রতিবেদক
দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল ও রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলের পরিচালক মাওলানা আব্দুল হালিম বলেছেন, আমরা পাকিস্তান পন্থি বা রাজাকার নই, আমরা বাংলাদেশের গর্বিত নাগরিক। জামায়াতে ইসলামী আল্লাহর বিধানকে কায়েম করতে চায়। আগামী নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রে যদি বাধা দেয়া হয় তবে জামায়াতের কর্মীরা জনগণকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।
আজ রোববার উপজেলার গোলাম মোস্তফা (জিএম) পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের হলরুমে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সংসদীয় আসন দিনাজপুর-৫ আয়োজিত দিনব্যাপি নির্বাচনী দায়িত্বশীল কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আব্দুল হালিম অভিযোগ করে বলেন, বিরোধীরা বলে বেড়াচ্ছে- আমরা নারীদেরকে ঘরে আটকে রাখব, আমরা গার্মেন্টস শিল্প রাখব না, যারা অন্য ধর্মের নাগরিক আছে আমরা ক্ষমতায় গেলে তাদের অধিকার পাবে না বা তাদেরকে আমরা থাকতে দেবনা।
আমরা বলতে চাই, ইসলাম কায়েম হলে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা হলে সবার অধিকার এবং সম্মান নিশ্চিত হবে।
তিনি বলেন, সাধারণ মানুষকে শরীআহ আইন সম্পর্কে ভয় দেখানো হচ্ছে। বলা হচ্ছে, ইসলাম প্রতিষ্ঠা হলে চোরের হাত কাটা, জেনা করলে মাটিতে পুঁতে পাথর মেরে হত্যা করা হবে। শরীয়ত অনুযায়ী, একটা লোক সামর্থ্যবান। তার চুরি করার দরকার নাই তারপরও চুরি করছে। সেক্ষেত্রে ইসলাম হাত কাটার বিধান দিয়েছে। অর্থাৎ আগে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। অনুরুপ ভাবে জেনা করার পরিবেশ যেন না থাকে আগে সেই কাজটা করতে হবে। কিন্তু জেনা করার পরিবেশ না থেকেও যদি কেউ অশ্লীলতা বা জেনা করে ইসলামী শরীয়াতের বিধান কেবল তখনই প্রয়োগ করা যাবে। ইসলামী সমাজ কায়েম হলে সমাজ থেকে চুরি ডাকাতি, চাঁদাবাজি, ছিনতায়, সুদ-ঘুষ উচ্ছেদ হবে, ধর্ষণ বন্ধ হবে।
জামায়াতের লোগো পরিবর্তন সম্পর্কে বলেন, লোগো পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে লোগোতে আল্লাহ, কোরআন কীভাবে থাকবে এটা নিয়ে আমরা চিন্তা করছি। দায়িত্বশীলদেরকে আমরা দায়িত্ব দিয়েছি এটা নিয়ে ভাবার, তারা ভাবছে। ইসলামী অনেক দল আছে যাদের লোগোতে আল্লাহ শব্দও নাই, আকিমুদ্দিনও নাই। একেবারে সোজাসাপ্টা। দু একটা দল আছে যাদের লোগোই নাই। সে জায়গায় আমাদের লোগোটি যেন সার্বজনীন হতে পারে সে চেষ্টা করছি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারী মাসে নির্বাচন হোক এটা আমাদের প্রত্যাশা। তবে আমরা মনে করি, স্বৈরাচারের বিচার দৃশ্যমান হতে হবে। বিচারের চুড়ান্ত রায় আমরা দেখতে চাই। আমাদের সংস্কার জরুরী। কারণ জুলাই আন্দোলনে ছাত্র জনতার স্লোগান ছিলো সংস্কার। কোটা সংস্কার হয়েছে, এখন রাষ্ট্র সংস্কার চাই। রাষ্ট্র সংস্কারের জন্যই আমাদের পিআরের দাবি।
পূজা মন্ডপে এবার কোন পাহাদারের ব্যবস্থা করি নাই উল্লেখ করে বলেন, সংগঠনের পক্ষ থেকে এ বছর কোন পূজা মন্ডপে সফরের বা পরিদর্শনের নির্দেশনা দেয়া হয়নি। শুধু মন্ডপের বাইরে থেকে কমিটির সাথে দেখা করে চলে আসতে বলা হয়েছে। তারপরও কোন কোন জায়গায় আমাদের দলের কেউ কেউ বিশেষ কারণে মন্ডপের ভেতরে চলে গেছেন। আমরা তাদেরকে সতর্ক করেছি।
হিন্দুরা পূজা করে এটা তাদের কাজ। তাদেরকে শুভেচ্ছা জানানো বা তাদের সাথে দেখা করার উদ্দেশ্যই হচ্ছে, তারা যেন আমাদেরকে বাধা মনে না করেন। জামায়াত ক্ষমতায় আসলে তারা পূজা করতে পারবে না এমন ভীতি যেন না থাকে। এখন দেখেন, হিন্দুরা এখন মনে করছে আওয়ামী লীগ আমাদেরকে যে নিরাপত্তা দিতে পারেনি- জামায়াত পেরেছে। সকল মানুষের জান-মালের, সম্মান-ইজ্জতের নিরাপত্তার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। একটি দল হিসেবে আমাদেরকে সেই কাজ গুলো করতে হবে।
দিনাজপুর-৫ (পার্বতীপুর-ফুলবাড়ী) আসনের পরিচালক ও জেলা সহকারী সেক্রেটারী মো. সাইদুল ইসলাম সৈকত এর সভাপতিত্বে কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ সদস্য ও রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলের সহকারী পরিচালক অধ্যক্ষ মাওলানা মমতাজ উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলীশে শূরা সদস্য ও দিনাজপুর জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মুহাদ্দিস ডক্টর এনামুল হক, জামায়াত মনোনীত দিনাজপুর-৬ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী মো. আনোয়ারুল ইসলাম, দিনাজপুর-৫ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী মো. আনোয়ার হোসেন। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন ইসলামী ছাত্রশিবির দিনাজপুর জেলা (দক্ষিণ) সভাপতি মো. সাজেদুর রহমান, উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা হাবিবুর রহমান, সেক্রেটারি মাওলানা মঞ্জুরুল হকসহ বিভিন্ন ইউনিটের ও ভোট কেন্দ্রের দায়িত্বশীলরা। আছরের নামাজের মধ্য দিয়ে কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠিত হয়।