রবিবার, ৫ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

মাইকের উচ্চ শব্দে অতিষ্ঠ বীরগঞ্জ পৌরবাসী

বীরগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধি

দিনাজপুরের বীরগঞ্জে মাইকের উচ্চ শব্দে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের নিষ্ক্রিয় ভূমিকার কারণে বেপরোয়াভাবে যত্রতত্র মাইক বাজানো হচ্ছে। শব্দদূষণ আইনত দণ্ডনীয়, কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকলেও প্রশাসন নিশ্চুপ। যখন তখন যেখানে সেখানে সভা-সেমিনার উচ্চ শব্দে ভাষণ কিংবা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রচার-প্রচারণার মাইকিং কার্যক্রম পৌরশহরের দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে। শব্দবাজি এ সকল সমস্যার উপলব্ধি জনগণ আজ হারিয়ে ফেলেছে। কেউ কেউ বিরক্ত হয়ে কানে আগুল দিয়ে পথ চলছে। এর জন্য একাগ্রতার অভাবে কোন প্রতিবাদ কেউ করতে পারে না। বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ এর ক্ষমতাবলে শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা-২০০৬ এবং বিধিমালায় ‘নীরব’ ‘আবাসিক’, ‘মিশ্র’, ‘বাণিজ্যিক’ ও ‘শিল্প’ পাঁচটি এলাকা চিহ্নিত করে শব্দের মানমাত্রা নির্ধারণ থাকলেও তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। বীরগঞ্জ সরকারি কলেজ, অঙ্কুর শিক্ষা নিকেতন, পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, ইব্রাহীম মেমোরিয়াল শিক্ষা নিকেতন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি অফিস ও আধা সরকারি, হাসপাতাল ক্লিনিক শব্দ দুষণে ভুগছে। শব্দ দূষণ আইন অনুযায়ী কোথাও কোন হাসপাতাল থাকলে সেটা ” নীরব এলাকা ” হিসেবে চিহ্নিত হবে। এ সকল নীরব এলাকায় হর্ন বাজানো নিষেধ। এ সবের তোয়াক্কা না করে বীরগঞ্জ পৌরশহরে অবিরামভাবে চলছে এ ধরণের উচ্চ বাজী যা শব্দ দূষণ রুপ নিয়েছে।
এলাকাবাসী জানান, প্রতিদিন সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত উচ্চ শব্দে মাইক বাজিয়ে রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের কর্মসূচি, কোচিং, ভর্তি বিজ্ঞপ্তি, বিদ্যালয় ভর্তি, বেসরকারি ভর্তি, মাংস ব্যবসায়ীর মাইকিং, ছাগল হারানোর মাইকিং, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বিশেষ ডাক্তারের প্রচার, কোন প্রতিষ্ঠানের বিশেষ ছাড় উপলক্ষে প্রচার মাইকিং, কম দামে চার্জার লাইট বিক্রির মাইকিং, বিভিন্ন জায়গায় পরিবহনের মাইকিং সহ বিভিন্ন পণ্যের প্রচারণা চালানো হয়। এতে সড়কের পাশে থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, হাসপাতাল, অফিস-আদালত, ব্যাংক-বীমার দাপ্তরিক কাজে ব্যাঘাত হচ্ছে। বিভিন্ন প্রচারের উচ্চ শব্দের মাইকিং নিয়মিত চলে আসছে। প্রচারের কোন নির্দিষ্ট সময় সীমা নেই। যখন তখন দেখা যায় উচ্চ শব্দে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে বা শহরের হাসপাতাল এলাকায় চলে এরকম প্রচারণা।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শব্দদূষণে শরীরের প্রথম আক্রান্ত হয় কান এবং শ্রবণশক্তি। যারা সব সময় শব্দের মধ্যে থাকেন, তারা ধীরে ধীরে শ্রবণশক্তি হারাতে পারেন। শব্দদূষণের কারণে শিশু মানসিকভাবে প্রতিবন্ধী পর্যন্ত হতে পারে। অতিরিক্ত শব্দে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, মানসিক অসুখের ঝুঁকি বাড়ায়। এছাড়া মানসিক ক্লান্তি, উচ্চ রক্তচাপ, স্নায়ুবিক সমস্যা, অমনোযোগিতা সৃষ্টি এবং স্মৃতিশক্তি হ্রাস করে। পৌরশহরের ব্যবসায়ীরা জানান, সকাল থেকেই মাইকে নানা প্রচারণা চালানো হয়। উচ্চ শব্দে কান ঝালাপালা। সেই সঙ্গে গাড়ির হর্নের শব্দ তো আছেই। আমরা শব্দদূষণের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি চাই। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, আমাদের পরীক্ষা চলছে। কিন্তু, দিন-রাত সমানতালে মাইক বাজানো হচ্ছে। উচ্চ শব্দে পড়ায় মনোযোগ দেওয়া যায় না।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মোহাম্মদ মহসীন জানান, উচ্চ শব্দ যে কোন সুস্থ মানুষের জন্য মারাত্মক সমস্যা হতে পারে। বিশেষ করে শ্রবণ শক্তি ক্ষমতা কমে যেতে পারে, এমনকি কানের পর্দা ফেঁটে যেতে পারে। এতে বেশি সমস্যা হয় শিশুদের। কোন ঘুমন্ত শিশু উচ্চ শব্দের কারণে ঘুম ভেঙ্গে যেতে পারে। শিশুদের কানের পর্দা অনেক সফট থাকে তাই তাদের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি হয়ে থাকে।
জরুরী ভাবে প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়া না হলে শব্দ দূষণের কারণে নানা রোগে আক্রান্ত হবে বীরগঞ্জ পৌরবাসী।

Share This