দিনাজপুর প্রতিনিধি
দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার ঐতিহাসিক কান্তজীউ মন্দির পুরো নির্মাণ কাজে সময় লেগেছিলো প্রায় ৪৮ বছর। ১৮৯৭ বাংলাদেশের স্থাপত্য নিদর্শন সাংস্কৃতিক তাৎপর্যের এক বিরাট অংশ জুড়ে রয়েছে দেশের ঐতিহাসিক মন্দিরগুলো। অনন্য নকশা, কিংবদন্তি শাসক ও সম্প্রদায় এবং তাদের ঐতিহ্যবাহী আধ্যাত্মিকতার সন্নিবেশে মহাকালের বিবর্তনের সাক্ষী আছে এই স্থাপনাগুলো। যুগ ঘরে শত পরিবর্তনের মধ্যদিয়ে যাওয়া তেমনি এক প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান দিনাজপুর জেলার কান্তজীউর মন্দির কেবল বাংলাদেশেই নয়, গোটা ভারতীয় উপমহাদেশের মন্দিরের ইতিহাসকে প্রতিনিধিত্ব করছে তিনশত বছরেরও বেশি সময়ের পুরাতন এই নান্দনিক তীর্থস্থানটি।
উত্তরবঙ্গের বৃহত্তম কাহারোল উপজেলার অন্তর্গত সুন্দরপুর ইউনিয়নের কান্তনগর গ্রামে এই মন্দিরের অবস্থান। জেলা সদর থেকে ৩০ কিলোমিটার উত্তরে দিনাজপুর- তেঁতুলিয়া মহাসড়কের পশ্চিমের নদীটির নাম ঢেপা। এই নদীর তীরবর্তী শ্যামগড় এলাকার কান্তনগর গ্রামটি ব্যাপক পরিচিতি। সব মিলিয়ে ও পেয়েছে প্রাচীন কান্তজীউ মন্দিরের জন্য। হিন্দু পুরাণ মতে এই অঞ্চলে শ্রীকৃষের যুদ্ধ-বিগ্রহ অধিষ্ঠান হয়েছিল। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান দেবতা শ্রীকৃষ্ণের ১০৮ নামের একটি হচ্ছে শ্রীকান্ত বা রক্ষিনীকান্ত। শ্রীকৃষ্ণের নামের এই কান্ত শব্দটি দিয়েই দিনাজপুরের তৎকালীন জমিদার প্রাণনাথ মন্দিরটির নাম রাখেন কান্তজীউ মন্দির। জীউ বা স্ত্রী শব্দটি ব্যবহৃত হয় সম্মানার্থে। মন্দিরের গোড়াপত্তনের আগে স্থানীয় গ্রামমটির নাম ছিলো শ্যামনণর। মন্দির প্রতিষ্ঠার পর থেকে গ্রামের নাম বদলে রাখা হয় কান্তনগর। মন্দিরটিতে ছিল ৯টি রত্ন বা চূড়া, যার কারণে একে নবরত্ন মন্দির নামেও অভিহিত করা হতো। শ্রীকৃষ্ণের যুদ্ধ-বিগ্রহ অধিষ্ঠানকে চির স্মরণীয় করে রাখতে জমিদার প্রগনাথ রায় ১৭০৪ খ্রিস্টাব্দে এই মন্দির নির্মাণের কাজ শুরু করেন। পোড়ামাটির অলঙ্করণ সমৃদ্ধ এ মন্দিরটি উৎসর্গ করা হয় শ্রীকৃষ্ণ ও তার স্ত্রী রুক্ষিণীর প্রতি। মন্দিরের কাজ অসমাপ্ত রেখেই মারা যান প্রাণনাথ। পরে তার পালক পুত্র রামনাম রায় ১৭৫২ সালে সফলভাবে মন্দির নির্মাণের বাকি কাজ সম্পন্ন হয়। পরে ভয়াবহ ভূমিকম্পে মন্দিরটির ৯ চূড়ার সবগুলোই ধবংস হয়ে যায়। পরবর্তীতে রাজা গিরিজনাথ মন্দিরের সংস্কার করলেও নবরত্নের চূড়াগুলো আর পুনঃনির্মাণ করা হয়নি। ১৯৬০ সালে তৎকালীন সরকার কান্তনগর মন্দিরকে সংরক্ষিত প্রাচীন কীর্তি হিসেবে ঘোষণা করে। সেই থেকে মন্দিরটি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের ২৬৬টি পোড়ামাটির অলঙ্কৃত মন্দিরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর হচ্ছে এই মন্দির। প্রতিবছর রাসপূর্ণিমা আসলে চলে মাসব্যাপী মেলা। মেলা শুরু হওয়ার এক মাস বাকী থাকলেও আগে থেকেই ব্যবসায়ীরা দোকানের অবস্থান নির্ধারণ করতে ব্যস্ত থাকেন। রাস মেলায় দেশ ও দেশের বাহিরের পর্যটকদের আনাগোনা থাকে বেশ চোখে পড়ার মতো।