নিজস্ব প্রতিবেদক
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, ‘শেখ হাসিনা ২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতা নিশ্চিত করে বসেছিলেন। বলেছিলেন শেখ হাসিনা পালায়না। এই কথা বলার দুদিন পর ছাত্র-জনতা লড়াই করে তাকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছে। এই যে বিরাট অর্জন বা লড়াই কী আবার বেহাত হবে? আমাদের লড়াই যদি আমরা বেহাত হতে দিতে না চাই তাহলে আমাদের এই তরুণদের পাহারাদারের ভূমিকায় থাকতে হবে।’
শনিবার (১৬ আগস্ট) বিকেল ৫টায় দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার গোলাম মোস্তফা (জিএম) পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের অডিটরিয়ামে গণসংলাপ ও পদযাত্রা অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে তিনি এসব কথা বলেন।
জোনায়েদ সাকি বলেন, আমাদের তরুণ শিক্ষার্থীর উদ্দেশ্যে কিছু বলতে চাই। আজ আমাদের সাথে যুক্ত হয়েছেন তরণ শিক্ষার্থীরা। এটা আমাদের আনন্দের বিষয়। আমাদের তরুণরা বিরাট রাজনীতি সচেতন হয়ে উঠছেন। আমরা ২৪ অভ্যুত্থানে দেখেছি তাদের ভূমিকা। তরুণরা, শিক্ষার্থীরা আমাদের দেশে বরাবর তাদের ভূমিকায় এগিয়ে। বৃটিশ ঔপনিবেশিক আন্দোলনে, ভাষা আন্দোলনের সময়, ষাটের দশকে শিক্ষা আন্দোলনে, ৬৯ সাথে গণঅভ্যুত্থান, ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে, ৮০ দশক সহ ৯০ এর গণ আন্দোলনে বিশেষ করে ২৪ এর গণঅভ্যুত্থান ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে তরুণরা নিজেদের রক্ত দিয়ে জীবন দিয়ে যে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে তার তুলনা করা কঠিন।
তিনি আরও বলেন, আমরা ৫৪ বছর ধরে দেখেছি রাজনৈতিক দলগুলো নাগরিকের সাম্য মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার বুলি ছুড়েছেন, কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয়নি। মানবিক মর্যদা আজও প্রতিষ্ঠা হয়নি। অথচ মানুষের মানবিক মর্যদা দিবে রাষ্ট্র। আমাদের ছাত্ররা বলেছিল কোটা নিয়ে বৈষম্য করা হচ্ছে। আমরা এই বৈষম্য মানিনা। সবার সামনে পুলিশ দিয়ে গুলি করে আবু সাঈদকে হত্যা করা হয়েছে। শুধু এটা না বিগত ১৫ বছর ধরে দিনের পর দিন সত্য কথা বলার জন্য, নিজের রাজনৈতিক অধিকারের জন্য, পছন্দের দল করার জন্য, কিভাবে একটি সরকার পরিকল্পিতভাবে রাষ্টীয় বাহিনী দিয়ে গুম, খুন, ত্রাস, ভয় সৃষ্টি করে, হত্যা করে গদি টিকিয়ে রাখতে চেয়েছিল।
গণসংহতি আন্দোলনের এই নেতা বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারকে শুরু থেকে বলে আসছিলাম যে, জনগণের শক্তির ওপর ভর করে আপনারা ক্ষমতায় এসেছেন, তাই জনগণকে আপনাদের ঐক্যবদ্ধ রাখতে হবে। কিন্তু এই রাষ্ট্রের মধ্যে নানা ধরনের দোসররা এখনও টিকে আছে। তারা অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থান নড়বড়ে করতে কাজ করছেন।’
সাকি আরও বলেন, ‘দেশে মব সন্ত্রাস চলে, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার জায়গা থাকছে না। মব সৃষ্টি করে ঘটানো ঘটনাবলিকে একে একে পুঁজি করতে করতে এখন খুনিরাও তাদের মাথা উঁচু করতে শুরু করেছে। তবে খুনিদের মাথা উঁচু করতে দেওয়া যাবে না।’
জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রত্যেকটা খুনের বিচার হতে হবে। জুলাই আন্দোলনে শহীদদের পরিবার বারবার হত্যার বিচার চাইছে। কিন্তু কোনো বিচার হচ্ছে না। এর দায় কে নেবে।
সাকি আরও বলেন, ‘দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে যদি জনগণ ঘরে ফিরে যায়, তবে আবু সাঈদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করা হবে। আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
গণসংহতি আন্দোলনের ফুলবাড়ীর আহ্বায়ক মাহমুদ হাসান বাবুর সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব আব্দুল মোত্তালিব পাপ্পু’র সঞ্চলনায় বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন একসাথে চলতে হবে, বৈষম্যহীন ও অন্তর্ভূক্তিমূলক বাংলাদেশ, অধিকার ও মর্যাদার বাংলাদেশ, জনগণের বাংলাদেশ এই স্লোগানকে ধারণ করে আয়োজিত গণসংলাপ ও পদযাত্রা কর্মসূচিতে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য বাচ্চু ভূঁইয়া, দিনাজপুর জেলা কমিটির সংগঠক সৈয়দ সাইফুল ইসলাম জুয়েল, দিনাজপুর জেলা কমিটির আহবায়ক এ্যাডভোকেট সুলতান মাহমুদ শিশির, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের ফুলবাড়ী উপজেলা শাখার সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক সাকিরুল ইসলাম শাকি, যুগ্ম আহবায়ক মোহাম্মদ হৃদয় হাসান স্বাধীন প্রমুখ।
গণসংলাপ ও পদযাত্রায় কৃষক, শ্রমিক, ক্ষেতমজুর, আদিবাসী নারী-পুরুষসহ সকল শ্রেণি ও পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
গণসংলাপ ও পদযাত্রা শেষে সন্ধ্যায় স্থানীয় নিমতলা মোড়ে পথ সভা অনুষ্ঠিত হয়।