গাইবান্ধা প্রতিনিধি
রংপুরে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে রংপুরের গঙ্গাচড়ায় সংখ্যালঘু হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা, সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও নৃশংস নির্যাতনের প্রতিবাদে নাগরিক সংগঠন জনউদ্যোগ, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খৃস্টান কল্যাণ ফ্রন্ট, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, উদীচী, সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক, পিস ফ্যাসিলিলেটর গ্রুপ, বাংলাদেশ দলিত বঞ্চিত জনগোষ্ঠী অধিকার আন্দোলন, বাংলাদেশ রবিদাস ফোরামের আয়োজনে গাইবান্ধা শহরের গানাসাস মার্কেটের সামনে আজ শনিবার সামবেশ করা হয়।
জনউদ্যোগের সদস্য সচিব প্রবীর চক্রবর্তী’র সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন পরিবেশ আন্দোলন-গাইবান্ধার সভাপতি ওয়াজিউর রহমান রাফেল, মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রিক্তু প্রসাদ, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের জেলা সভাপতি বিপুল কুমার দাস, যুগ্ম সম্পাদক মাধবী সরকার, পিএফজি’র সদস্য ফরহাদ আলী, সংবাদিক হেদায়েতুল ইসলাম বাবু, মানবাধিকার কর্মী অঞ্জলী রানী দেবী, নারী নেত্রী মাজেদা খাতুন, বাংলাদেশ দলিত বঞ্চিত জনগোষ্ঠী অধিকার আন্দোলন-গাইবান্ধা সভাপতি খিলন রবিদাস, রবিদাস ফোরামের সভাপতি সুনিল রবিদাস প্রমুখ। বক্তরা বলেন, এটি মানবাধিকারের লঙ্ঘন। এই ঘটনা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও নাগরিক অধিকারের ওপর আঘাত। এই অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন তারা। এই হামলার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি এবং এর নেপথ্যের ‘কুশীলবদের’ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
বক্তরা আরো বলেন, জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা-নির্যাতন এখন সাধারণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নাজুক অবস্থার মধ্যে রংপুরে সংখ্যালঘুদের লক্ষ্য করে ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর এই হামলা মানুষের মনে আতঙ্ক বাড়িয়ে দিয়েছে। অভিযুক্ত কিশোর গ্রেপ্তার হওয়ার হওয়ার পরও হামলার ঘটনা ঘটেছে। প্রশাসনের ব্যর্থতার কারণে মানুষের নিরাপত্তাহীনতা ও অসহায়ত্ব বাড়ছে। সংখ্যালঘু নির্যাতন কেবল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয় নয়, এটা রাজনৈতিক সংকটের অংশ।
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের দাবির মধ্যে আছে রংপুরের ঘটনাটিকে ধর্মীয় সহিংসতা হিসেবে চিহ্নিত করে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচার করা; প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর সুরক্ষা ও পুনর্বাসনের নিশ্চয়তা দেওয়া এবং প্রশাসনের উদাসীনতার তথা হামলাকারীদের প্রশয় দেওয়ার তদন্ত ও বিচার করা; সরকার ও মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকে বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠন করে নিরপেক্ষভাবে হামলার উদ্দেশ্য, উসকানিদাতা ও পৃষ্ঠপোষকদের নাম প্রকাশ এবং দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার করা; রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতি বারবার সংঘটিত সহিংসতার বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদি প্রতিরোধ নীতি প্রণয়ন করা; অনতিবিলম্বে সংখ্যালঘু সুরক্ষা কমিশন গঠন ও কার্যকর করা এবং রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সামাজিক নেতৃত্বকে সাম্প্রদায়িক উসকানি থেকে বিরত থাকার আহ্বান।
বক্তরা বলেন, ধর্মীয় অনুভূতির দোহাই দিয়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার এই ধারাবাহিকতা আশঙ্কাজনকভাবে ঘটে চলেছে। এমন ঘটনা বারবার সংঘটিত হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দোষীরা থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। এই দায়মুক্তির সংস্কৃতি বিচারহীনতার এক ভয়াবহ নজির তৈরি করছে, যা সংবিধানের মৌলিক অধিকার ও রাষ্ট্রের মূলনীতির পরিপন্থী।