হাতুড়ি-হাপরে ব্যস্ত ফুলবাড়ীর কামার পল্লী

নিজস্ব প্রতিবেদক
আর মাত্র কয়েকদিন পরই মুসলমানদের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদ উল আযহা বা কোরবানির ঈদ বা বখরা ঈদ। এই ঈদের বিশেষত্বই হল পশু কোরবানি করা। কোরবানির ঈদ ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে ব্যস্ততা বেড়েছে কামার পল্লী গুলোতে। পশু কুরবানিতে ব্যবহৃত ছুরি, চাপাতি, দা ও বটি তৈরিতে ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত দম ফেলারও সময় নেই কামারপাড়ার কারিগরদের।
পার্বতীপুর বাসস্ট্যান্ড, ছোট যমুনা ব্রিজ, সুজাপুর কামারপাড়া, কাঁটাবাড়ীসহ উপজেলার বিভিন্ন হাট ও কামার পাড়া ঘুরে দেখা যায়, লাল আগুনের লোহায় পিটুনিতে সরগরম হয়ে উঠেছে কামার পল্লীর দোকানগুলো। টুংটাং শব্দের ছন্দে তালমিলিয়ে চলছে হাতুড়ি আর ছেনির কলাকৌশল।
লোহার কারিগর পলাশ রায়, কপ্পুর রায়, বকুল রায় ও বাচ্চু রায় জানান, পশুর চামড়া ছাড়ানো ছুরি ১০০ থেকে ২০০, দা ২০০ থেকে ৩৫০ টাকা, বটি ২৫০ থেকে ৫০০, পশু জবাইয়ের ছুরি ৩০০ থেকে ১ হাজার টাকা, চাপাতি ৫০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া কেউ লোহা নিয়ে আসলেও নির্ধারিত পারিশ্রমিকে এসব হাতিয়ার বানিয়ে দেয়া হয়।
তারা জানান, কোরবানির ঈদ উপলক্ষে বেঁচাকেনা দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। তবে ঈদের দুদিন আগে থেকে রাত-দিন বেঁচাকেনা হবে। কারিগররা আরো বলেন, কোরবানির ঈদ উপলক্ষে শ্রমিকের মূল্য বেড়ে গেছে। তাই তারা চাপাতি, ছুরি ও দা’র দাম একটু বেশি নিচ্ছেন।
উপজেলার পার্বতীপুর বাসস্ট্যান্ড, ছোট যমুনা ব্রিজ, সুজাপুর কামারপাড়া এলাকার কয়েকজন কামার জানান, লোহার দাম, অতিরিক্ত পরিশ্রম, অন্যান্য জিনিসপত্রের বাজার মূল্যের কারণে এই শিল্প এখন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। তারপরেও কেউ কেউ বাপ দাদার ঐতিহ্য এই পেশাকে আঁকড়ে ধরে আছেন মায়ার টানে। বছরের বেশিরভাগ সময়ই কামারদের আর্থিক টানাপোড়ন ও মলিন মুখ দেখা গেলেও কোরবানির ঈদের আগমনী বার্তায় সেই মলিন মুখে হাসির ঝিলিক দেখা যায়।
কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে কামারদের বানানো লোহার তৈরি জিনিসপত্র নিজেরাই বিভিন্ন হাটবাজারে নিয়ে বিক্রি করেন। আবার বিভিন্ন হাট বাজারের বড় বড় ব্যবসায়ীগণ তাদের কাছ থেকে পাইকারী দামে দা, ছুরি, চাকুসহ দৈনন্দিন কাজে ব্যবহৃত জিনিসপত্র দোকানে রেখে খুচরা বিক্রি করেন। আবার অনেকে লোহা এনে জিনিসপত্র বানিয়ে নেন। এক্ষেত্রে শুধু পারিশ্রমিক দেয়া হয় কামারকে।
কথা হয় নতুন চাপাতি বানাতে আসা মীর আযম নামের এক যুবকের সাথে। তিনি জানান, ফুলবাড়ী বিজিবি ক্যাম্প এলাকা থেকে এসেছি ট্রাকের পাতি নিয়ে। এই পাতি দিয়ে ২টি চাপাতি, ১টি ছুরি, ১টি বটি বানাব। তারপরও যদি লোহা থাকে তবে ছোট চাকু বানাব। দোকানে কিনতে গেলে ভ্যাজাল লোহা দিতে পারে। যা অল্প দিনেই নষ্ট হয়ে যায়। তাই ভালো মানের লোহা এনে নিজে উপস্থিত থেকে বানিয়ে নিচ্ছি।
কামার শিল্পের সাথে জড়িত পলাশ রায় জানায়, ঈদুল আযহার আর মাত্র কয়েকদিন বাকি আছে। আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে আমাদেরকে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করতে হচ্ছে। তিনি আরো জানান, বছরের অন্যান্য সময় খড় কাটার দা বানানো ও ধার দেয়ার কাজ বেশি হলেও ঈদ উপলক্ষে এখন সব ধরণের জিনিসপত্রের চাহিদা বেড়েছে। তাই কাজের চাপও অনেক বেশি।
ক্রেতারা বলেন- ঈদ উপলক্ষে দা, চাপাতি ও ছুরির দাম বেশি নেয়া হচ্ছে।
এদিকে কয়েকজন ক্রেতা জানান, কোরবানির ঈদের সময় কসাই পাওয়া মুশকিল হয়ে পড়ে। তাই একটা নতুন বটি কিনেছি, আর পুরনো চাপাতি, দা শাণ দিয়ে নিচ্ছি নিজেরাই কাজে লেগে যাবো। বিভিন্ন হাটবাজারে ঘুরে দেখা গেছে, ঈদ যতই এগিয়ে আসছে দা, ছুরি কিনতে ক্রেতাদের আনাগোনাও বাড়ছে।