বিস্ফোরকের অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে মধ্যপাড়া খনি থেকে পাথর উত্তোলন

নিজস্ব প্রতিবেদক
দেশের একমাত্র পাথর খনিতে বিস্ফোরক দ্রব্য (অ্যামালসন এঙ্পোসিভ) সংকটের কারণে দিনাজপুরের মধ্যপাড়া পাথর খনির উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। এ নিয়ে ষষ্ঠবারের মতো বন্ধ হলো উৎপাদন কার্যক্রম।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে খনির পাথর উত্তোলন ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জার্মানিয়া-ট্রেস্ট কনসোর্টিয়াম (জিটিসি) উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। সেই সাথে খনির উন্নয়ন কার্যক্রম ও বন্ধ হয়ে গেছে।
তবে খনির রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চালু থাকবে বলে খনির একটি সূত্র জানিয়েছে।
পাথর উৎপাদন ও খনি উন্নয়ন কাজে অতি প্রয়োজনীয় বিস্ফোরক মধ্যপড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানী লিমিটেড কর্তৃপক্ষ নির্দিষ্ট সময়ে চাহিদামতো সরবরাহ করতে ব্যর্থ হওয়ায় খনির পাথর উৎপাদন কার্যক্রম ও উন্নয়ন কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে বলে খনি সূত্রটি জানায়।
উৎপাদন ও উন্নয়ন কাজে ব্যবহৃত বিস্ফোরক (অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট) সংকটে এর আগে ২০২২ সালে মে মাসে মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনি থেকে পাথর উৎপাদন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তারও আগে বিস্ফোরকের অভাবে প্রথম ২০১৪ সালে ২২ দিন, ২০১৫ সালে দুই মাস এবং ২০১৮ সালের জুন মাসে সাতদিন ও ২০২২ সালের মার্চ মাসে ১৪ দিন উৎপাদন বন্ধ ছিল।
উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধের ফলে দৈনিক গড়ে সাড়ে পাঁচ হাজার মেট্রিক টন পাথর উত্তোলন না হওয়ায় প্রতিদিন সরকারের লোকসান হবে প্রায় দেড় কোটি টাকা। বর্তমানে খনি অভ্যন্তরে প্রায় ১২ লাখ মেট্রিক টন পাথর মজুদ রয়েছে।
খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী ডি.এম. জোবাইয়ের হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। একইসাথে তিনি জানান ২/৩ দিনের মধ্যেই বিস্ফোরক আসবে এবং পাথর উত্তোলন শুরু হবে।
এ বিষয়ে জানতে খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী ডি.এম. জোবাইয়ের হোসেন জানান, বিস্ফোরকের কারণে বন্ধ রয়েছে খনি। তবে এই বিস্ফোরক ভারত থেকে আমদানী হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় এবং কষ্টমস ক্লিয়ারিং-এর অপেক্ষায় আছে। হয়তো ২/১ দিনের মধ্যেই খনি এলাকায় বিস্ফোরক পৌছাবে।
প্রসঙ্গত দেশের একমাত্র পাথরখনি দিনাজপুরের মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড (এমজিএমসিএল) বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু করে ২০০৭ সালের ২৫ মে। প্রথম অবস্থায় খনি থেকে দৈনিক ১ হাজার ৫শ থেকে ১ হাজার ৮শ’ টন পাথর উত্তোলন হলেও পরে তা নেমে আসে মাত্র ৫শ টনে। উৎপাদনে যাওয়ার পর থেকে ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত লোকসানের পরিমাণ দাঁড়ায় শতকোটি টাকার ওপরে। এমন অবস্থায় উৎপাদন বাড়াতে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ৯২ লাখ মেট্রিক টন পাথর উত্তোলনের বিপরীতে ১৭১.৮৬ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি করে খনির উৎপাদন ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয় বেলারুশের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জার্মানিয়া ট্রেস্ট কনসোর্টিয়াম-জিটিসি’কে। এরপর থেকেই খনিটি লাভের মুখ দেখতে শুরু করে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি তিন শিফটে পাথর উত্তোলন করছে প্রায় সাড়ে সাতশ’ শ্রমিক। লাভের মুখ দেখায় পাথর উত্তোলনের জন্য ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিটিসির সঙ্গে আগামী ছয় বছরের পুনঃচুক্তি করে মধ্যপাড়া গ্রানাইড মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড (মধ্যপাড়া পাথর খনি) কর্তৃপক্ষ। ওই চুক্তি অনুযায়ী, খনি থেকে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে পাঁচ হাজার মেট্রিক টন পাথর উত্তোলন করবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু পাথর উত্তোলনের কাজে ব্যবহৃত বিস্ফোরক দ্রব্য শেষ হয়ে যাওয়ায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পাথর উত্তোলন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।