সোমবার, ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শীতে ঘুরতে যাওয়ার মতো উত্তরবঙ্গের ৫ জেলা


দেশ মা লাইফ ডেস্ক
শীত মানেই ভ্রমণের অন্যতম এক উপযোগী ঋতু। গরমের চিন্তা নেই, বৃষ্টির চোখ রাঙানি নেই। কুয়াশার চাদর মোড়ানো শীতের এই আসল মজা উপভোগ করতে চাইলে আপনাকে তাই চলে যেতে হবে উত্তরবঙ্গে। উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে বছরে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। ফলে নগরের যান্ত্রিক কোলাহলের বাইরে কুয়াশার চাদরে ঢাকা হাড়কাঁপানো শীতের আমেজ নিতে চাইলে আপনার আদর্শ গন্তব্য হতে পারে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলো।

চলুন জেনে নেয়া যাক শীতের ছুটিতে বেড়াতে যাওয়ার মতো উত্তরাঞ্চলের পাঁচটি জেলা সম্পর্কে-


পঞ্চগড়
দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড় ‘হিমালয় কন্যা নামে’ পরিচিত। নাম শুনেই নিশ্চয়ই বুঝা যায় হিমালয় কন্যায় হিমের প্রভাব! সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাবে এখন শীতে ভ্রমণপ্রেমীদের অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া। প্রতি বছর নভেম্বরের শুরুতে পর্যটকেরা সেখানে পাড়ি জমান সোনার পাহাড় দেখার জন্যে। আবহাওয়া ও আকাশের অবস্থা অনুকূলে থাকলে তেঁতুলিয়া থেকে মাত্র ১১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ভারতের কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখা মেলে মহানন্দার পাড়ে থেকেই। এছাড়াও বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট, সমতলে বিস্তৃত চা বাগান, গোলকধাম মন্দির, বদেশ্বরী মহাপীঠ মন্দির, বার আউলিয়া মাজার, ভিতরগড় দুর্গ নগরী, মহারাজার দীঘি, মির্জাপুর শাহী মসজিদসহ নানা ঐতিহাসিক স্থাপনা পঞ্চগড়ে রয়েছে।
পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজ ক্যাম্পাসে আছে বাংলাদেশের একমাত্র পাথরের জাদুঘর। ব্যতিক্রমী এই জাদুঘরে বিভিন্ন বিচিত্র বৈশিষ্ট্যের নানা বয়সী পাথর, বিভিন্ন আদিবাসীদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র, পোড়ামাটির নানা মূর্তিসহ নানা অভিনব নিদর্শনের দেখা মেলে।


ঠাকুরগাঁও
শীতকালে প্রাচীন ঐতিহ্যমণ্ডিত ঠাকুরগাঁও এর শান্ত পরিবেশ যে কারও মনে এনে দেবে প্রশান্তির ছোঁয়া। জগদল রাজবাড়ি, হরিপুর রাজবাড়ি, জামালপুর জমিদার বাড়ি জামে মসজিদ, বালিয়া মসজিদ, হরিণমারী শিব মন্দির, রাজা টংকনাথের রাজবাড়িসহ নানা ঐতিহাসিক নিদর্শন ঠাকুরগাঁও জেলার অন্যতম আকর্ষণ।
ঠাকুরগাঁওয়ের গ্রামগুলো ছবিতে আঁকা চিত্রের মতো। কুমিল্লা হাড়িপিকনিক কর্ণার, খুনিয়া দিঘীতে লোক সমাগম দিন দিন বেড়েই চলেছে। এ জেলায় বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের তালিকাভুক্ত দুটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা আছে। সেগুলো হচ্ছে ঢোলহাট মন্দির ও জামালপুর জামে মসজিদ। এছাড়াও বাংলাদেশ সরকার নিয়ন্ত্রিত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা হচ্ছে হরিপুুর রাজবাড়ি, রাজা টংকনাথের রাজবাড়ি, বাংলা গড়, জগদল রাজবাড়ি, ঢোলারহাট শিব মন্দির, গড়গ্রাম দুর্গ প্রভৃতি।

দিনাজপুর
যাদের প্রাচীন স্থাপত্য নিদর্শনের প্রতি আগ্রহ অনেক তাদের জন্য দিনাজপুর অন্যতম একটি গন্তব্য হতে পারে এই শীতে। শীতের হাড়কাঁপানো অনুভূতি পেতে প্রাচীন এই শহর উপযুক্ত শহর হতে পারে। স্থাপত্যশৈলীর বিচিত্র নিদর্শন দেখা যায় দিনাজপুরের নানা বিখ্যাত স্থাপনায়। এর মধ্যে দিনাজপুর রাজবাড়ী, কান্তজির মন্দির, নয়াবাদ মসজিদ, দীপশিখা আনন্দালয় ও মেটি স্কুল অন্যতম।
এছাড়াও রামসাগর দীঘি, সুখসাগর ইকোপার্ক, স্বপ্নপুরী পিকনিক স্পট, লিচুবাগানের মতো ভ্রমণকেন্দ্রও রয়েছে দিনাজপুরে। তা ছাড়া এখানেই রয়েছে হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি। সেই সঙ্গে দিনাজপুর শহরটাও সুন্দর। থাকা-খাওয়া ও আবাসন মিলবে হাতের কাছে।


রংপুর
উত্তরবঙ্গের অন্যতম ঐতিহাসিক স্থান রংপুরের শীত প্রতিবছর নতুন রেকর্ড গড়ে যায়। শীতে ভাওয়াইয়া গানের দেশ রংপুরে বেড়াতে গিয়ে দেবী চৌধুরানীর রাজবাড়ি, পায়রাবন্দ বেগম রোকেয়ার বাড়ি, লালদিঘি নয় গম্বুজ মসজিদ, তাজহাট জমিদার বাড়ি, প্রয়াস সেনা বিনোদন পার্ক, ভিন্নজগত পার্কসহ নানা জায়গায় ঘুরে বেড়ানো যায়।
এছাড়াও রংপুরের বিখ্যাত চিকলি বিলের সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবে। এককালে স্থানটি ব্যবহৃত হতো সি প্লেনের ল্যান্ডিং স্টেশন হিসেবে। শীত আসলেই নানা অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে উঠত এই বিল। রংপুরের হনুমানতলা এলাকার শত বছরের প্রাচীন এই চিকলি বিলের পাশেই গড়ে উঠেছে দর্শণীয় চিকলি ওয়াটার ও গার্ডেন পার্ক। বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা এই পার্ক এরই মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে দেশবাসীর কাছে। বিল পাড়ে মনোরম পরিবেশে দু’দণ্ড বসার ব্যবস্থা আছে। আরও আছে চিত্তবিনোদনের জন্য স্থাপিত মিনি রেলগাড়ি ও বিভিন্ন রাইড।


কুড়িগ্রাম
শীতে কাঁপতে কাঁপতে ঘুরে বেড়াতে চাইলে কুড়িগ্রাম বেশ রোমাঞ্চকর গন্তব্য। নাওডাঙ্গা জমিদার বাড়ি, চান্দামারী মসজিদ, ভেতরবন্দ জমিদার বাড়ি, উলিপুর মুন্সিবাড়ী, বঙ্গ সোনাহাট ব্রিজ কুড়িগ্রামের ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তঘেষা নদী ধরলার ওপর নির্মিত ধরলা ব্রিজ কুড়িগ্রামে সময় কাটানোর জনপ্রিয় গন্তব্য।
কুড়িগ্রাম জেলার উত্তরে লালমনিরহাট জেলা ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলা, দক্ষিণে গাইবান্ধা জেলা, পূর্বে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের ধুবড়ী জেলা ও দক্ষিণ শালমারা মানকার চর জেলা এবং পশ্চিমে লালমনিরহাট জেলা ও রংপুর জেলা অবস্থিত। মহা রাজা বিশ্বসিংহের কুড়িটি পরিবারের দেশ থেকেই কুড়িগ্রাম জেলা। বিলুপ্ত ছিটমহলগুলোই এখানকার প্রধান আকর্ষণ। এছাড়া শাহী মসজিদ, বীর প্রতীক প্রাপ্ত তারামন বিবিরবাড়ী, নাওডাঙ্গা জমিদারবাড়ী, চিলমারী বন্দর পর্যটকদের আকৃষ্ট করবে।
উত্তরবঙ্গের এই ৫ জেলায় ভ্রমণের যেমন রসদ আছে সেই সঙ্গে আছে প্রকৃতির আসল ছবি। প্রকৃতির বাস্তবিক দৃশ্য আর আবহাওয়ার ছোঁয়া নিয়ে ভ্রমণ করতে পারার আনন্দ অসীম। তাই এই শীতে নগরজীবনের ক্লান্তি ঠেলে কয়েক দিনের জন্য ঘুরে আসুন উত্তরবঙ্গের এই জনপ্রিয় জেলাগুলোতে।

Share This

COMMENTS