শুক্রবার, ১০ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

পীরগঞ্জে বন উজাড় করে ইটভাটায় পোড়ানো হচ্ছে কাঠ

ধোঁয়া ও ধুলাবালিতে হুমকির মুখে পরিবেশ

পীরগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি
রংপুরের পীরগঞ্জে অধিকাংশ ইটভাটায় অবাধে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। শুধু লোক দেখানোর জন্য ভাটায় কিছু কয়লা রেখে জ্বালানি কাজে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে বনের কাঠ। ইট ভাটায় কাঠ পোড়ানো নিষিদ্ধ হলেও তার তোয়াক্কা করছে না ইটভাটার মালিকেরা। ভাটার ধোঁয়ায় নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ সেইসাথে ভাটার কাজে নিয়োজিত গাড়ি চলাচলে ধুলাবালির কারণে শ্বাসকষ্ট জনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে আশপাশের মানুষ। অধিকাংশ ইটভাটার পরিবেশ ছাড়পত্র না থাকলেও সরকারি বিধি লংঘন করে বন এলাকায়, স্কুল কলেজসহ কৃষি জমি এবং বসতবাড়ির পাশেই গড়ে, উঠেছে ইটভাটা।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিদিন হাজারো মহেন্দ্রযোগে কৃষি জমির উপরিভাগের মাটি (টপ সয়েল) ভাটায় নেয়া হচ্ছে। ইটভাটাগুলো নির্বিচারে মাটি গিলে, পোড়া ইট বের করছে। ইটভাটার গাড়ি স্কুল, কলেজ, হাটবাজারের পরিবেশ নষ্ট করার পাশাপাশি রাস্তাঘাটগুলো চলাচলের অযোগ্য করে ফেলেছে। এসব গাড়ীর কারণে এলাকায় প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। গত কয়েক বছরে অনেক প্রাণ কেড়ে নিয়েছে অবৈধ মহেন্দ্র গাড়ি। অদক্ষ ছোট ছোট শিশু ড্রাইভার দিয়ে গোটা উপজেলা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অবৈধ মহেন্দ্র্র গাড়ি। এদের নেই কোনো প্রশিক্ষণ, নেই কোনো কাগজপত্র। এজন্য প্রশাসনের উদাসীনতাকেই দায়ী করছেন এলাকাবাসী।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, পীরগঞ্জ উপজেলায় চলতি বছর ৪২ টি ভাটায় ইট পোড়ানো হচ্ছে। এরমধ্যে ১৯টি ভাটাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দুইশত থেকে পাঁচশত মিটারের মধ্যে। এইসব ইটভাটাগুলোর জমির মালিকানা ছাড়া কোন কাগজপত্রই নেই। নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র। এছাড়াও ভাটায় আগুন দেয়ার জন্য জেলা প্রশাসনেরও কোন অনুমতি নেই। সেইসাথে ইউনিয়ন পরিষদের ট্যাক্সও দেয় না ভাঁটা মালিকরা। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় অবৈধভাবে যুগ যুগ ধরে ড্রাম চিমনি দিয়ে কাঠ ব্যবহার করে ইট পোড়ানো হচ্ছে। বেশিরভাগ ভাটাতেই কয়লার বালাই নেই। কালো ধোঁয়ায় অতিষ্ঠ ভাটার আশপাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১০ সহস্রাধিক কোমলমতি শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ভাটা মালিক জানায়, উপজেলায় বেশকিছু ভাটা রয়েছে তারা সরকারি বিধি লংঘন করে গায়ের জোরে কাঠ দিয়ে ইট পোড়াই করে থাকেন। তারা কাউকে তোয়াক্কা করে না। এমনকি এরা ভাটা মালিক সমিতির ধারের কাছেও আসেন না। বনের কাঠ পুড়িয়ে ইট পোড়াই করে কমদামে ইট বিক্রি করেন। ফলে কয়লা দিয়ে পোড়ানো ইটের বাজার তারা কমিয়ে দিয়েছে। ইটভাটার আশপাশে মালিকরা আগে থেকেই বনের কাঠ স্তুপ করে রাখে। ইট পোড়াই মৌসুমে কিছু কয়লা কিনে ভাটার সামনে লোক দেখানোর নামে রেখে দিয়ে বন উজাড় করে কাঠ পোড়ানো কাজে ব্যস্ত এরা। শানেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেজবাহুর রহমান জানান, ইটভাটার মালিকদের ট্রেড লাইসেন্স নেবার কথা থাকলেও তারা ট্রেড লাইসেন্স নেন না বছরের পর বছর। ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি এনামুল হক জানান, নির্দেশনা উপেক্ষা করে ইট পোড়ানোর কাজে কয়লার পরিবর্তে কাঠ ব্যবহার করছে অনেক ভাটা মালিক। ফলে ইট উৎপাদনে কাঠ ব্যবহারকারীদের উৎপাদন খরচ কম হচ্ছে। তাতে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে কয়লা চালিত হাওয়া ভাটাগুলো। সব ভাটার পরিবেশ ছাড়পত্র কিংবা জেলা ,প্রশাসন থেকে আগুন দেয়ার অনুমতি নেয়া হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তর তিনি এড়িয়ে যান। উপজেলা বন কর্মকর্তা মিঠু তালুকদার বলেন, ইটভাটায় জ্বালানি কাজে কাঠ পোড়া সম্পুর্ণরুপে নিষেধ। কোন ভাটা মালিক পোড়াই কাজে কাঠ ব্যবহার করতে পারবে না। যে ভাটায় কাঠ পোড়ানো হচ্ছে, সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার খাদিজা বেগম জানান, ইতিপূর্বে কিছু ভাটায় মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানা করা হয়েছে। এখনো মোবাইল কোর্ট অব্যাহত রয়েছে।

Share This