দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কে অনিয়ম তদন্তে মাঠে নেমেছে দুদক

নিজস্ব প্রতিবেদক
দৈনিক দেশ মা সহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ তদন্তে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আজ রোববার দুপুরে দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক পরিদর্শনসহ তদন্তে আসেন দিনাজপুর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। এর আগে ১১ মার্চ দৈনিক দেশ মা পত্রিকায় “মরণফাঁদে দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ সড়ক, ঝুঁকিপূর্ণ পথে মৃত্যুর শঙ্কা” শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ হয়।
আজ রোববার দুপুরে দিনাজপুর থেকে গোবিন্দগঞ্জ পর্যন্ত আঞ্চলিক মহাসড়ক পরিদর্শনসহ তদন্তে এসে বিরামপুরের ঢাকামোড়ে তারা সড়কের বিভিন্ন জায়গায় মাপযোখ করেন এবং স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন, দিনাজপুর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর উপ-পরিচালক আতাউর রহমান সরকার, সহকারী পরিচালক ইসমাইল হোসেন, সহকারী পরিচালক খাইরুল বাশার, সহকারী পরিদর্শক শাহাজান আলী।
এদিকে তদন্ত কমিটির সাথে উপস্থিত ছিলেন, দিনাজপুর সড়ক ও জনপদের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (ফুলবাড়ী সড়ক উপ-বিভাগ ও দিনাজপুর সড়ক উপ-বিভাগ) আমানুল্লাহ আমান। এ বিষয়ে তার সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি বলেন, আমি নতুন এসেছি,এছাড়া সড়কের কাজের সময় আমি ছিলাম না। তাই উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কথা বলতে পারবো না।
তদন্তকালে দিনাজপুর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর উপ-পরিচালক আতাউর রহমান সরকার বলেন, দিনাজপুর- গোবিন্দগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কটি নির্মাণে অনিয়ম ও নিম্ন মানের নির্মান সামগ্রী ব্যাবহার করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এরই প্রেক্ষিতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থেকে আমাদের অভিযান পরিচালনার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নির্দেশ মোতাবেক আমরা দিনাজপুর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) জেলা কার্যালয় থেকে তদন্ত করছি। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা দেখেছি ফুলবাড়ী টু বিরামপুর পর্যন্ত। তিনি আরও বলেন, আমরা গোবিন্দগঞ্জ পর্যন্ত যাবো এবং তদন্ত করে তথ্য সংগ্রহ করে সেগুলো পর্যালোচনা করে কমিশনে পাঠাবো। এরপর কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমাদের পরবর্তী কার্যক্রম চলবে।
প্রকাশিত সংবাদে উল্লেখ করা হয়, চার বছর আগে ৮৮২ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০৬ কিলোমিটার দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক নির্মাণ করে সড়ক ও জনপদ (সওজ)। আঞ্চলিক মহাসড়কটি সংস্কার ও প্রশস্তকরণের তিন বছর যেতে না যেতেই সড়কের বিভিন্ন স্থান দেবে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে উচঁÑনিচু ঢেউ ও খাল, এতে ঝুঁকি নিয়ে চলছে হাজার হাজার যানবহন। এতে করে প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোট-বড় সড়ক দুর্ঘটনা।
দিনাজপুর থেকে গোবিন্দগঞ্জ পর্যন্ত ব্যস্ততম আঞ্চলিক মহাসড়কটিতে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের যানবাহন যাতায়াত করে থাকে। এই সড়ক দিয়েই দেশের একমাত্র মধ্যপাড়া কঠিন শিলা প্রকল্প মধ্যপাড়া পাথরখনি, বড়পুকুুিরয়া কয়লা খনি এবং কয়লাভিত্তিক তাপ বিদুৎ কেন্দ্রে মালামাল নিয়ে মাঝারি ও ভারি যানবাহন যাতায়াত করে থাকে। এছাড়া দিনাজপুরের দক্ষিণ-পূর্বাংশের ফুলবাড়ী, বিরামপুর, নবাবগঞ্জ, হাকিমপুর ও ঘোড়াটের সাথে দিনাজপুর জেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র পথ এই আঞ্চলিক মহাসড়টি, ফলে এই আঞ্চলিক মহাসড়কটি সবসময় থাকে ব্যস্থতম।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, ২০১৭-১৮ সালে সেই সময়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রী ও চেয়ারম্যানরা ঠিকাদারের কাছে কমিশন বানিজ্য করেছে। সড়কের শতকরা ৬০ ভাগ টাকা লুটপাট করে তাদের পকেট ভরেছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগসাজশ করে নিম্নমানের উপকরণ দ্বারা রাস্তাটি সংস্কার ও প্রশস্তকরণ করে বরাদ্ধের অধিকাংশ টাকা লুটপাট করায় এখন রাস্তাটি দেবে গিয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তার খেসারত এখন আমাদের সাধারণ নাগরিকদের দিতে হচ্ছে। এই সড়ক নির্মাণে যে অনিয়ম হয়েছে তা তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় আনার জন্য আন্তর্বর্তীকালিন সরকারে প্রতি দাবি জানানো হয়।
মূলত জনদুর্ভোগের এই সংবাদ দুদকের নজরে আসলে তারা দিনাজপুর জেলা কার্যালয়কে তদন্তের নির্দেশনা দেয়। সঠিক তদন্তের মাধ্যমে সড়কের বেহাল অবস্থার প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটন করে দোষীদের দৃৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা হবে- এমনটিই দাবি এলাকার সচেতন মহলের।