ঢেপা নদীর বুকে ধান চাষে লাভবান কৃষক, সংকটে জেলেরা

বীরগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
নদীর বুকে বোরো চাষ আবাদ বাড়ছে দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঢেপা ও আত্রাই নদীতে। এতে বোরো ধানসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করে লাভবান হচ্ছেন কৃখশ। অন্যদিকে নাব্যতা হারিয়ে মরা খালে পরিণত হয়েছে এক সময়ের খড়স্রোতা ঢেপা। ফলে জীবন জীবিকা নিয়ে সংকটে পড়েছেন এই উপজেলার জেলে পরিবার গুলো।
স্থানীয়রা জানান, বছর চারেক আগে নদীর খনন করা হলেও শুধু খরচই হয়েছে। তেমন কোন কাজে আসেনি। নদী খননের সময় ড্রেজিংয়ের বালু নদীর পাড় ঘেষে রাখা হয়। ফলে বৃষ্টিতে সেই বালু ধুয়ে পুনরায় নদীর সঙ্গে মিশে ভরাট হয়ে যায়। নদী পুনঃখনন করে নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে সরকারের কার্যকরী পদক্ষেপের দাবি স্থানীয়দের।
এক সময় এই নদীতে জেলেদের জালে ধরা পড়ত বিভিন্ন জাতের ছোট বড় মাছ। তা দিয়ে সংসার চলত জেলেদের। কালের বিবর্তনে নাব্যতা হারিয়ে সেই নদীর বুকে চাষ হচ্ছে ইরি-বোরো ধান। সেখানে এখন দুলছে সোনালী ধানের শীষ। শুধু ঢেপাই নয়, একই অবস্থা আত্রাই ও করতোয়া নদীর বুকে জেগে উঠা চরেও। শতশত কৃষকের জীবিকার মাধ্যম হয়ে উঠেছে নদীর বুকে জেগে ওঠা এসব চর।
বীরগঞ্জ উপজেলার পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের সুইচ গেট এলাকায় ঢেপা নদীর বুকে শুকিয়ে যাওয়া পানির জায়গায় জেগে উঠেছে নতুন চর। আর এই চরই এখন বদলে দিচ্ছে এলাকার কৃষকদের ভাগ্য। পরিত্যক্ত ও অনাবাদি এসব জমিতে চাষ হচ্ছে ব্রি ধান-২৮, ব্রি ধান-৮৮ এবং হাইব্রিড জাতের ধান। ফেরুয়ারি মাসের শুরুতে এসব চর জমিতে ধান রোপন করা হয়। মাত্র তিন মাসেই অর্থাৎ এপ্রিলের প্রথম দিকেই ফসল ঘরে তুলতে শুরু করে কৃষকেরা। এই আগাম জাতের ধান অল্প সময়ে ভালো ফলন দেয় ফলে জমিতে অতিরিক্ত খরচ ছাড়াই আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন স্থানীয় কৃষকেরা।
স্থানীয় কৃষক হাফিজ উদ্দিন বলেন, নদীতে চর জেগে উঠার পর, আমি এক বিঘা জমিতে ধান আবাদ করি। ফেরুয়ারি মাসে ধান লাগাই । খরচ হয়েছে প্রায় ১০ হাজার টাকা। আশা করছি ৩৫ থেকে ৪০ মণ ধান পাবো, যার বাজারমূল্য প্রায় ৪০ হাজার টাকা। সব খরচ বাদ দিয়ে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা লাভ হবে। গরীব মানুষের জন্য এই চর এখন এক আশীর্বাদ।
একই এলাকার কৃষক দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমি চর ও পাড়ের জমিতে ব্রি ধান-৮৮ লাগিয়েছি। প্রতিবেশী সাবিদ হাইব্রিড জাতের ধান চাষ করেছে ১ বিঘা জমিতে। ফলন ভালো হয়েছে। এই ধান আমাদের পরিবারে ৬ মাসের খাবারের চাহিদা পূরণ করবে। জমি না থাকা অনেক গরীব মানুষেরা এখন নদীর পরিত্যক্ত জমিতে আবাদ করে উপকৃত হচ্ছেন।
অন্যদিকে জেলেরা জানান, এক সময় এই নদীতে মাছ ধরেই সংসার চলত তাদের। এখন নদীতে পানি থাকেনা। মাছও নেই। অনেকটা সময় সংকটাপন্ন থাকার পর জীবিকার তাগিদে জেলেরা বাধ্য হয়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে। নাব্যতা ফিরে আসলে নদীতে পানি থাকবে। আর পানি থাকলেই মাছও থাকবে। তবেই সুদিন ফিরবে উপজেলার জেলে পরিবার গুলোর।
এ প্রসঙ্গে বীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শরিফুল ইসলাম বলেন, শুকিয়ে যাওয়া নদীতে ভূমিহীন কৃষকরা বোরো ধানসহ অন্যান্য ফসল চাষাবাদ করে কিছুটা আর্থিক সচ্ছল হচ্ছেন। তবে নদী দুটি খনন করে নব্যতা ফিরিয়ে আনা অত্যন্ত জরুরী। তিনি আরও বলেন, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বীরগঞ্জ উপজেলায় ১৪ হাজার ৭৫৯ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ঢেপা ও করতোয়া নদীর পাড় এবং জেগে উঠা চরে চাষ হয়েছে ৩৫ হেক্টর জমিতে। ব্রি ধান-২৮, ব্রি ধান-৮৮ ও হাইব্রিড জাতের ধান চাষ করে কৃষকরা ভালো ফলন পাচ্ছেন। আগাম জাতের এই ধানের কর্তন শুরু হয়েছে এবং একর প্রতি ফলন ৭০ থেকে ৮০ মণ পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে। বাজার মূল্য ভালো থাকায় কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন।
দিনাজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সিদ্দিকুর রহমান জানান, অন্যান্য নদী খনন শেষ হলে প্রস্তাবনা তৈরি করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত আশার আলো দেখা যাচ্ছে না। বরাদ্দ পেলে আবারো ওই নদীগুলোর খনন করা হবে।