শুক্রবার, ২০শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

নন্দীগ্রামে কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ত কামার পল্লী’র কারিগররা

নন্দীগ্রাম (বগুড়া) প্রতিনিধি
আসন্ন পবিত্র ঈদুল-আজহাকে ঘিরে টুং টাং শব্দে মুখরিত বগুড়ার নন্দীগ্রামের কামার পল্লীগুলো। ঈদের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, কামারপাড়া ততই সরগরম হয়ে উঠছে। দিন-রাত চলছে তাদের কর্মযষ্ণ। সারা বছর তেমন কাজ না থাকলেও কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে কয়েকগুণ ব্যস্ততা বেড়ে যায় তাদের। লোহা হাতুড়ির টুং টাং শব্দে দিনরাত জেগে কাজ করে যাচ্ছেন কামার শিল্পীরা।কামারদের হাতের সাহায্য নিয়ে কৃত্রিম বাতাসের তালে তারা পোড়াচ্ছেন কয়লা, জ্বালাচ্ছেন লোহা। সেই লোহাকে হাতুড়ি পেটা করে আপন মনে তৈরি করছেন নানা প্রকৃতির দা, বটি, ছুরি, চাকু।

জানা যায়, পবিত্র ঈদুল আজাহায় গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ কোরবানির পশু হিসেবে জবাই করা হয়। দিনব্যাপী চলে কোরবানির পশু জবাই ও গোশত কাটার কাজ। আর গোশত কাটতে দা, বটি, ছুরি, চাকু, চাপাতি ইত্যাদি ধাতব হাতিয়ার অপরিহার্য। এসব চাহিদা মিটানোর জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নিরোলসভাবে তৈরি করছেন নন্দীগ্রামের কামাররা। ভোর হতে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত কামার পল্লীগুলোতে ব্যস্ততার চিত্র দেখা যায়। ঈদকে সামনে রেখে উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন এসে কামার শিল্পীদের কাছে দা, বটি চাপাতি, ছুরিসহ নানা জিনিস ক্রয় করছেন। আবার অনেকে ঘরে থাকা পুরোনো দা, ছুরি, চাপাতি ধার কাটাতে আসছেন। সারা বছর তৈরিকৃত এসব পণ্য যত বিক্রি হয়, তার চেয়ে বেশি বিক্রি হয় ঈদুল আজহা উপলক্ষে। নন্দীগ্রাম পৌর এলাকার শাহীন কর্মকার জানান, প্রতি বছর এ সময়ে কর্ম ব্যস্ততা বেড়ে যায়। অথচ সারা বছর কাজ কম থাকে। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত একটানা কাজ করতে হয়। কোরবানির ঈদকে ঘিরে আমরা দা, বটি, ছুরি, চাকু তৈরি করছি। এখন ক্রেতাদেরও কমতি নেই। এ সময়টা একটু বেশি আয়ের জন্য দিন-রাত পরিশ্রম করতে হয় আমাদের। রবি চন্দ্র কর্মকার বলেন, কোরবানির কাজে ব্যবহৃত ধারালো অস্ত্রের মধ্যে নতুন বঁটি প্রকারভেদে ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা, দা ১ হাজার থেকে ১২ টাকা, ৮ ইঞ্চি থেকে ১০ ইঞ্চি পর্যন্ত চাকু তৈরির মজুরি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। এছাড়া ছোট আকৃতির ছুরি ৫০ থেকে দেড়শ টাকা দামে বিক্রয় হচ্ছে। পুরনো যন্ত্রপাতি শান দিতে ছোট ছুরি থেকে শুরু করে বড় ছুরি ও চাপাতি সান দেয়ার জন্য ৫০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে। নন্দীগ্রাম বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থিত দা-ছুরি বিক্রেতা বিদ্যুৎ কর্মকার বলেন, পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে লৌহজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় কোরবানির পশুর চামড়া ছাড়ানো ছুরি প্রতি পিস ১৫০ থেকে ২০০ টাকা, দা এক হাজার টাকা থেকে ১৫শ টাকা, বটি ৫০০ থেকে ১২০০ টাকা, বড় ছুরি ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা, চাপাতি ৭০০ থেকে ১৫০০ টাকার মধ্যে বিক্রি করা হচ্ছে। ছুরি কিনতে আসা রাজু আহমেদ জানান, ঈদের আর মাত্র ৪-৫দিন বাকি। একটু আগেই পশু জবাইয়ের সরঞ্জাম কিনতে এসেছি। তবে গত বছরের চেয়ে এবার ছুরি, চাকু, বটির দাম অনেকটাই বেশি। দাম বেশি হলেও কিনতে তো হবেই। এবার কোরবানিকে ঘিরে উপজেলা প্রাণীসম্পদ অফিসের তথ্য অনুযায়ী ৪৩হাজার ৭শ ৬৬টি গরু, ছাগল, ভেড়া ও মহিষ কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। এদিকে গত ৩১ মে শনিবার কোরবানির পশুর চামড়া সঠিকভাবে সংরক্ষণে মাদ্রসা, এতিমখানা সহ সংশ্লিষ্ঠদের সঙ্গে বৈঠক করেছে উপজেলা প্রশাসন।

Share This